উজরা জেয়ার সিরিজ বৈঠকঅবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » উজরা জেয়ার সিরিজ বৈঠকঅবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার দেখছে যুক্তরাষ্ট্র
শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩



ভোলাবাণী আন্তর্জাতিক ডেক্স।।বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ যাতে হয় সেজন্য আবারও জোর দিল যুক্তরাষ্ট্র। সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং একাধিক মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয় এবং সাংবাদিকরা যাতে বিনা বাধা ও ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে তা সরকারকে বলেছি। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হোক, তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে সম্পৃক্ত হবে না।

উজরা জেয়া,বাংলাদেশ,,যুক্তরাষ্ট্র,নির্বাচনউজরা জেয়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে ঢাকায় তার ব্যস্ততম কর্মসূচি শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সচিবালয়ে যান। সেখানে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর দুপুরে আসেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। সেখানে পররাষ্ট্র সচিব বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। এরপর উভয়ই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনে বৃহৎ  জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং সুশাসনের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত। গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেই এবং সেই সম্পর্ককে আরো গভীর করার ওপর জোর দেই।

উজরা জেয়া গত ১২ জুলাই ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা রাজনৈতিক সমাবেশ দেখেছি, যা ছিল শান্তিপূর্ণ। আমরা এ ধরনের চিত্র ভবিষ্যতেও দেখতে চাই। সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোনো ভীতি ছাড়া সাংবাদিকদের খবর পরিবেশন করা এবং মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়েও আলোচনা করেছি।

নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই।

যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরো গভীর করতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের মাত্রা এবং ভবিষ্যত্ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে উজরা জেয়া বলেন, এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ২০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরো ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার নতুন সহায়তা দেবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু ঐ পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি।

অন্যদিকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বহুমাত্রিক ও নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করে, সেটা তাকে জানিয়েছি। শ্রম আইনের সংশোধনে বাংলাদেশ গত এক দশকে কী অর্জন করেছে, সেটাও তুলে ধরেছি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে উদ্যোগ চলমান আছে। এছাড়া আগামী নির্বাচন, নাগরিক অধিকার, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

কোনো দল বা ব্যক্তিকে সমর্থন করতে তারা আসেননি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তারা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও ঝামেলাবিহীন নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি, কোনো আলোচনাই হয়নি। তারা এতটুকু বলেছেন যে, তারা কোনো পার্টিকে উত্সাহিত করার জন্য এখানে আসেননি। তারা কোনো দলকে সমর্থন করেন না। বাংলাদেশে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়, এর বাইরে তারা কিছুই চান না, কিছুই বলেননি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, ‘তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসেননি বলেও আমাদের জানিয়েছেন। তারা কারো প্রতি বিরাগভাজন হয়ে এখানে আসেননি। তারা চাইছেন বাংলাদেশের যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটিই যাতে অব্যাহত থাকে। তারা যে ভিসা-নীতি ঘোষণা করেছেন, সেটা সবার জন্য। সেটা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করে দেননি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছেন। এই সবকিছু নিয়ে তারা সন্তুষ্ট, সেটা তারা আমাদের কাছে বলে গেছেন।’

মার্কিন প্রতিনিধিদল বুধবার দুই দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রশংসা করেছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমস্যার কত দ্রুত সমাধান হবে, সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানব পাচারকারীরা যে খেলাধুলা করছে, সেটা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি, মানব পাচার রোধে আমরা টায়ার থ্রি থেকে টায়ার টুতে চলে এসেছি। এটা তাদেরই মূল্যায়ন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা সবকিছু নিয়েই সন্তুষ্ট। তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত হয়, সেটা তারা দেখতে চান। আমরা বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই তারা কাজ করবে।’ র‍্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, র‍্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন করা হবে: জানালেন আইনমন্ত্রী

সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক করে। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওনারা বলেছেন যে সব দেশেই তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চান। আমি তাদের বলেছি, নিপেক্ষ নির্বাচন করার মতো আইনি কাঠামো বাংলাদেশের রয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব আইন সহায়ক, সেই সব আইনের কথাই বলা হয়েছে প্রতিনিধিদলকে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের আইন নিয়ে প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে। আমি বলেছি, গত ৫০ বছরেও এই আইন বাংলাদেশে ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই আইন প্রণয়ন করেছে। উপমহাদেশসহ অন্য কোনো দেশে এই আইন নাই।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিধিদল পোশাকশ্রমিক নেতা শহীদুল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি বলেছি, বাংলাদেশে এখন কোনো বিচারহীনতার সংস্কৃতি নাই। এখন যে কোনো অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এ দেশে হয়।’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। এই অ্যাক্ট নিয়ে আমি আগে যা বলেছি, প্রতিনিধিদলকে সেটাই বলা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি যে, এই অ্যাক্ট সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধিত হবে। এটাই তাদের প্রকারান্তরে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রতিনিধিদলও এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। জানা গেছে, আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াকে ‘একটি বই ও নৌকা’ উপহার দেন আইনমন্ত্রী। বৈঠকে জননিরাপত্তা সচিব, আইন সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ইমরান ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ৭:৩০:১৯   ৯১ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥
এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
এ কে ফজলুল হককে কেন ‘শেরে বাংলা’ বলা হয়?
জাতীয় পর্যায়ের লোকনৃত্য প্রতিযোগীতায় ভোলার মেয়ে স্বস্তিকার ২য় স্থান অর্জন
ভোলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি

আর্কাইভ