ভোলাবাণী আন্তর্জাতিক ডেক্স।। হঠাৎ করে বিদ্রোহী হয়ে আলোচনায় এখন রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ। বেসরকারি এই সামরিক কোম্পানি রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে এখন যুদ্ধ করছে। সবকিছু যখন ঠিকঠাক মতো চলছিল ঠিক তখনই এই গ্রুপটি বিদ্রোহ করে বসে।
রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করার দাবিও করেছে তারা। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে এ ওয়াগনার গ্রুপ আসলে কী, কারা এর নেতৃত্বে আর কেনই-বা এই বিদ্রোহ? বিবিসির বিশ্লেষণেই এ সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পিএমসি ওয়াগনার’ নামে পরিচিত ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সে সময় পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করছিল তারা। যখন এটি একটি গোপন সংগঠন ছিল, তখন এর সদস্যরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কাজ করছিল। সে সময় এর ৫ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে মনে করা হয়, যাদের বেশির ভাগই রাশিয়ার অভিজাত বাহিনী ও বিশেষ বাহিনী থেকে আসা প্রবীণ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। এরপর থেকে ওয়াগনারের কার্যক্রম যথেষ্ট বেড়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে জানায়, ওয়াগনার এখন ইউক্রেনে তাদের প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধার নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ইউক্রেন অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। তারা বলছে, ওয়াগনার গ্রুপ ২০২২ সালে বিশাল পরিমাণে নিয়োগ দেওয়া শুরু করে; কারণ রাশিয়া তার নিয়মিত সৈন্যদের জন্য লোক খুঁজে পাচ্ছিল না।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল চলতি বছরের শুরুতে জানায়, ইউক্রেনে ওয়াগনারের প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধাকে আনা হয়েছে কারাগার থেকে। ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও ২০২২ সালে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ওয়াগনার গ্রুপ। এরপর তারা সেইন্ট পিটার্সবার্গে একটি সদর দপ্তর খোলে। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাংকের ডা. স্যামুয়েল রামানি বলেন, রাশিয়ার শহরগুলোতে বিল বোর্ডে প্রকাশ্যে নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছে এই গ্রুপ। রুশ সংবাদমাধ্যমে একে ‘দেশপ্রেমিক সংগঠন’ হিসেবেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার বাখমুত দখল নেওয়ার সময় ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা বলছেন, খোলা ময়দানে এই গ্রুপের প্রচুর পরিমাণ যোদ্ধাকে আক্রমণে পাঠানো হয়েছিল, ফলে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। প্রথমে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়াগনার গ্রুপের যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেনি। যাহোক, ‘সাহসী’ ও ‘নিঃস্বার্থ’ ভূমিকা পালনের জন্য পরবর্তী সময় এই ভাড়াটে যোদ্ধাদের তারা প্রশংসা করে। ওয়াগনার গ্রুপকে নিয়ে বিবিসির এক অনুসন্ধানে প্রাক্তন রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিনের জড়িত থাকার কথা তুলে ধরা হয়। চেচনিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার অভিজ্ঞ সমর কৌশলী তিনি, যিনি ওয়াগনারের প্রথম ফিল্ড কমান্ডার ছিলেন বলে মনে করা হয়। তার পুরোনো রেডিও কল সাইনের নামানুসারে গ্রুপটির নামকরণ করেছিলেন তিনি।
ওয়াগনার গ্রুপের এখনকার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ীকে ‘পুতিনের শেফ’ নামেও ডাকা হয়, কারণ তিনি ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করতেন। ওয়াগনার গ্রুপের প্রথম অপারেশন ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলে রাশিয়াকে সাহায্য করেছিল, বলছেন কিংস কলেজ লন্ডনের ‘সংঘাত ও নিরাপত্তা’ বিষয়ের অধ্যাপক ট্রেসি জার্মান। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে ক্রেমলিনের আক্রমণের অজুহাত দাঁড় করাতে ওয়াগনার ‘ভুয়া হামলা’ চালিয়েছিল বলে মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেগেই শোইগু এবং ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমোভকে অদক্ষতা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের কম করে ইউক্রেনে পাঠানোর অভিযোগ তোলেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখন বলছে, তাদের হয়ে ইউক্রেনে কাজ করা ‘স্বেচ্ছাসেবক কাঠামোগুলোকে’ জুনের শেষের মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করতে হবে। সরকারের এই ঘোষণায় ওয়াগনার গ্রুপের নাম না থাকলেও এই উদ্যোগকে সংগঠনটির ওপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রিগোজিন এক বিবৃতিতে জোর গলায় বলেছেন, তার বাহিনী এসব চুক্তি বয়কট করবে।
ওয়াগনার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর গত জানুয়ারিতে নরওয়েতে আশ্রয়ের দাবি করেছিলেন ঐ কোম্পানির সাবেক এক কমান্ডার। নিজেকে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী বলেও দাবি করেন তিনি। ইউক্রেনের প্রসিকিউটররা তিন জন ওয়াগনার যোদ্ধার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের এপ্রিলে কিয়েভের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলেন। এছাড়া ঐ বছরের মার্চে ওয়াগনার কর্মীদের বিরুদ্ধে বুচা শহরের বাসিন্দাদের গণহত্যার অভিযোগ করেন জার্মান গোয়েন্দারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি সরকার সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকে ধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগও তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৫:১১ ৮৭ বার পঠিত | ওয়াগনার গ্রুপরশিয়া