ভোলা সদর হাসপাতাল-শেষ পর্ব ॥ হস্তান্তর করা হয়নি ২৫০ শয্যার ৭তলা ভবনটি

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলা সদর হাসপাতাল-শেষ পর্ব ॥ হস্তান্তর করা হয়নি ২৫০ শয্যার ৭তলা ভবনটি
সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০১৭



---শিমুল চৌধুরী ॥ভোলাবাণী।।
সোমবার সকাল ৯টার মধ্যেই ভোলা সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগের টিকিট কাউন্টার খুলে দেওয়া হয়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে দাড়িয়ে রয়েছেন টিকিট কার্ক (টিকিট কেরানি) আব্দুল কাদের। ওই সময়ে নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ৪-৫ জন রোগী ৫টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছেন চিকিৎসককে দেখানোর জন্য। জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা গেল আগের মত দালালদের তেমন উৎপাত নেই। তবে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদেরকে দেখা গেছে জরুরী বিভাগের সামনে ঘোরাঘুরি করতে। চিকিৎসকের সংকট থাকলেও হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও ষ্টাফরা তাদের কাজ করছেন যথা নিয়মেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা সদর হাসপাতাল নিয়ে গত দুই দিন ধরে আজকের ভোলার ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মধ্যে একরকম তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তবে, রোগীরা জানান, হাসপাতালের নার্স ও এ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাপট এখনো কমেনি। হাসপাতালের অনেক নার্স ও এ্যাম্বুল্যান্স চালক সাধারণ রোগীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। ভোলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আবুল কালাম মাতাব্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইউপি মেম্বারকে বরিশাল প্রেরণ করেন। ওই সময়ে ওই রোগীকে সরকারি এ্যাম্বুল্যান্সে করে নেওয়া হলে অন্য বেসরকারি এম্বুল্যান্স চালক তাকে বাঁধা দেন। এভাবে বহু রোগীদেরকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করে থাকেন এম্বুল্যান্স চালকরা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান আওয়ামী লীগের এ নেতা।
সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের সময় হাসপাতালের সামনে বর্ধিত ২৫০ শয্যার নতুন বহুতল আধুনিক হাসপাতাল ভবনের নীচে বসে খোসগল্প করছেন কয়েকজন যুবক। ওই ভবনের সামনের কলাপসিবল গেট ছিল বন্ধ। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর একজন যুবক গেট খুলে দেন। জানা গেল, ওই যুবকরা নির্মান শ্রমিক। ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, কিছু বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কথা হয় নির্মান শ্রমিক জুয়েল রানা, আবুল কাসেম, সুমন হাওলাদার, মিজানুর রহমান ও দৌলতের সঙ্গে। তারা জানান, ঠিকাদারদের তত্বাবধানে তারা ঢাকা থেকে এসে ভোলা সদর হাসপাতালের বর্ধিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নব নির্মানাধিন আধুনিক ৭ তলা এ ভবনের টাইল্স ও মারবেল পাথরের কাজ করছেন। ঠিকাদারের এক প্রতিনিধি আব্দুর রশিদ বলেন, নতুন এ ভবনের নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের তারও টানা হয়ে গেছে। এখন আমরা শুধু টাইল্স ও মারবেলসহ কিছু টুকিটাকি কাজ করছি। প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন শ্রমিক গত প্রায় আড়াই বছর ধরে এ কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুতের বিভিন্ন মালামাল, জেনারেটর, অকসিজেন, লিফট, রং, সেনেটারিসহ বিভিন্ন মালামাল স্টর রুমে রয়েছে বলেও জানান আব্দুর রশিদ।
সাধারণ রোগী ও স্থানীয়রা জানায়, দ্বীপ জেলার চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হলে দ্রুত ২৫০ শয্যার নতুন বহুতল আধুনিক হাসপাতাল ভবনের নির্মান কাজ শেষ করে এতে নতুন করে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগ দিতে হবে। জেলার প্রায় ১৭ লাখ মানুষ এখন ২৫০ শয্যার নতুন আধুনিক বহুতল হাসপাতাল ভবনের নির্মান কাজ সমাপ্তির প্রহর গুনছেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৫০ শয্যার লোকবলও নেই। এতে করে মারাত্বক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। চাহিদার তুলনায় বিছানা সংখ্যা সল্প হওয়াতে অনেক সময় বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একইসাথে চিকিৎসক সংকটের কারনে অনেক সময়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে রোগীদের। তাদের চিকিৎসার সুবিধার্থে আড়াই’শ বেডের নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মান কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গনপুর্ত বিভাগের বাস্তবায়নাধিন এ ভবনটি এখনো আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
গনপূর্ত বিভাগ ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম খান জানান, ২২ হাজার স্কয়ার ফিট এলাকায় ভবনটি নির্মানে মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৯ তলা ফাউন্ডেশনের ভবনটিতে বর্তমানে ৭ তলা নির্মিত হলেও পরবর্তীতে আরো ২ তলা পর্যন্ত করা যাবে। ভোলার বিশিষ্ট ঠিকাদার আব্দুল খালেকসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদার এ নির্মান কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবনের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি আরো বলেন, আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত ব্যয় অনুমোদনের পর আশা করা যায়, আগামী ৩ মাসের মধ্যেই নির্মান কাজ সম্পন্ন হলে ভবনটি হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
গনপুর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ভবনটির প্রথম ফোরে রেডিওলজী ডিপার্টমেন্ট, ইমারজেন্সি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার থাকবে। দ্বিতীয় ফোরে ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও ডাক্তারদের জন্য রুম থাকবে ১৪টি। তৃতীয় তলায় আপারেশন থিয়েটার ৪টি, এডমিন ব্লক ও আইসিউ থাকবে ৬ বেডের। চতুর্থ তলায় থাকবে অপারেশন থিয়েটার ১টি, পোস্ট ওটি ১২টি, লেবার রুম ১৬টি, রোগীদের ২৮ বেড ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ফোরে থাকবে রোগীদের জন্য ১৪০টি বিছানা। আর সপ্তম তলায় হবে ২৮টি কেবিন। এ ছাড়া হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ডাক্তারদের জন্য ৩ তলা একটি ডরমেটরি ভবন নির্মানের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ডাক্তাররা এখানে থাকতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৬:৫২   ৭২৮ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥
এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
এ কে ফজলুল হককে কেন ‘শেরে বাংলা’ বলা হয়?
জাতীয় পর্যায়ের লোকনৃত্য প্রতিযোগীতায় ভোলার মেয়ে স্বস্তিকার ২য় স্থান অর্জন
ভোলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি

আর্কাইভ