বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লালমনিরহাটে স্ত্রীর দাবিতে ১৭ দিন ধরে অবস্থান করছেন কলেজছাত্রী

প্রথম পাতা » ব্রেকিংনিউজ » লালমনিরহাটে স্ত্রীর দাবিতে ১৭ দিন ধরে অবস্থান করছেন কলেজছাত্রী
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭



 

---

আসাদুল ইসলাম সবুজ ।।ভোলাবাণী।। লালমনিরহাট ॥ লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় স্ত্রীর দাবিতে কলেজছাত্রী রশিদা আক্তার (১৮) ১৭ দিন ধরে কলেজ শিক্ষক ও তিন সন্তানের জনক রেজাউল করিমের (৪২) বাড়িতে অবস্থান করছেন। ওই কলেজ শিক্ষকের মেয়ের বান্ধবী রশিদা। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৭নং নবীনগর গ্রামে। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। নির্যাতিত ছাত্রী রশিদা আক্তার উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুর রশিদের মেয়ে। আব্দুর রশিদ বাউরা পাবলিক দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী ছিলেন।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কলেজছাত্রী রশিদা আক্তার স্ত্রীর দাবিতে বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়াডের্র মহিলা সদস্য মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এর আগে কলেজছাত্রী রশিদা কিছুদিন আগে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে রেজাউলের বাড়িতে উঠলে রেজাউলের আগের স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে মারধর করেন। বিষয়টি চেয়ারম্যানের নিকট জানানো হলে পরে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়াডের্র মহিলা সদস্য মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে জিম্মায় রাখা হয় তাকে।
কলেজ শিক্ষক রেজাউল করিম বাউরা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নবীনগর গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় বাউরা পুনম চাঁদ ভুতোরিয়া কলেজের কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক।
জানা গেছে, রশিদা আক্তার বাউড়া পুনম চাঁদ ভুতোরিয়া কলেজ থেকে এবারে এইচএসসি করে। কলেজে পড়া অবস্থায় ওই কলেজ শিক্ষক রেজাউল করিমের নজরে আসে রশিদা আক্তার। মেয়ের বান্ধবীর সুবাদে তার বাড়িতে আসা-যাওয়াও করত ওই কলেজছাত্রী। এক সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন ওই শিক্ষক।
রশিদা আক্তার বলেন, এইচএসসি পাসের পর রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে গেলে সেখানেও সে তার পিছু নেয়। একপর্যায়ে সেখানে (রংপুর) বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এক আবাসিক হোটেলে নিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে। পরে ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট নোটারি পাবলিক কার্যালয়, রংপুরে হলফনামার মাধ্যমে ৫ লাখ টাকায় দেনমোহর ধার্য করে বিয়ের কাবিন করে শিক্ষক রেজাউল।
কলেজছাত্রী রশিদা আক্তার বলেন, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রেজাউল আমাকে পটানোর জন্য বিভিন্ন রকম ছলনার আশ্রয় নেয়। রেজাউলের মেয়ে আমার বান্ধবী। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সে আমাকে বিয়ে করবে এই প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আমিও তার কথায় রাজি হয়ে যাই। বিষয়টি কলেজের কাউকে বলা যাবে না মর্মে আমাকে শপথও করায়। পরে রেজাউলও আমাকে বিয়ে করবে বলে শপথ করে। এক পর্যায়ে রেজাউল আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
রশিদা আক্তার আরও বলেন, আমাকে কোটি টাকা দিলেও আমি স্বামীর দাবি ছাড়ব না। আমরা বিয়ে করেছি। আমি তার স্ত্রীর দাবিতে অনড় আছি, এবং যতদিন সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে তার ঘরে তুলে নিবে না, ততদিন আমি আমার দাবী আদায়ে অনড় থাকবো।

---

পিতৃহীন রশিদার মামা শফিউল ইসলাম বলেন, ১৭ দিন ধরে রশিদা মহিলা সদস্য মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে অবস্থান করছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখনে বলে এভাবেই ১৭ দিন গত হল। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমাকে মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে বিষয়টি রফাদফা করার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু আমি রশিদার কাছে শুনেছি সে তার স্বামীর ঘর করবে।
এ বিষয়ে কলেজশিক্ষক রেজাউল করিমের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে বাউরা পুনম চাঁদ ভুতোরিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মহাদেব চাঁদ ভুতোরিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের সুবাধে তারা বিয়ে করেছেন শুনেছি। এর স্বপক্ষে রশিদা আমাকে কাগজও দেখিয়েছেন। তিন মাস আগে রেজাউল করিম এই কলেজ থেকে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে তিনি বাউরা ইউপির সফিরহাটের একটি ইফতেদায়ি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শুনেছি।
কলেজছাত্রী ও শিক্ষকের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাউরা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি মেয়েটিকে মহিলা ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগমের হেফাজতে রেখেছি। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে ওই কলেজের অবিভাবক মহল মনে করেন, যদি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ এ রকম জঘন্য হয় তাহলে তাদের মেয়েদের পড়াশুনার বিষয়টি অবিভাবকদের নিরুৎসাহিত করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০২:১৮   ১৫৩ বার পঠিত  |