মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০১৭

আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন

প্রথম পাতা » ভোলার মিডিয়া » আমার সাংবাদিকতা ও নানা প্রসঙ্গ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন
মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০১৭



---ভোলাবাণী: (মানুষের জীবন নদীর ¯্রােতের মতো বয়ে যায়। পবিত্র কোরআনের ভাষায় পার্থিব জীবন হচ্ছে মোহ, মায়া ও ছলনায় ঘেরা। এর মধ্যেই মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। কারন চলার নাম জীবন। প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে থাকে অজ¯্র গল্পের সমাহার। মানুষ ভূল করে আবার ভূল সংশোধন করে, তারপরও এগিয়ে যায় মঞ্জিলে মাকসূদের দিকে। একটি ছোট্ট জীবনে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। প্রতিটি ঘটনার মধ্যেই থাকে কিছু শিক্ষা। একজন আশাবাদী ইতিবাচক মানুষ হিসেবে আমিও আমার জীবনের ভাল-মন্দ প্রতিটি ঘটনা থেকে কিছু না কিছু শেখার উপকরণ পেয়েছি। অসংখ্য স্মৃতিতে ভরা স্মৃতিময় এ জীবন। সেই টুকরো স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাগুলোকে একত্র করে বিনে সূতোর মালা গাঁথার প্রয়াস চালিয়েছি। স্মৃতিচারণ হলেও সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এর পরেও কোথাও তথ্য বিভ্রাট ঘটলে জানিয়ে বাধিত করবেন।)
ভাষা আন্দোলনেরও ৭ বছর পর ১৯৫৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আমার জন্ম। ইলিশা কাচিয়া এবং বাপ্তা ৩ ইউনিয়নের সংগমস্থলে পরানগঞ্জের গ্রামীন পরিবেশেই শৈশব কৈশর কেটেছে। আব্বা ডা: তাবারেক হোসেন সরকারী ছোট চাকুরী করলেও মনের দিক থেকে অনেক বড় মাপের মানুষ ছিলেন। অনেক স্বপ্ন দেখতেন আমাদের নিয়ে। আর্থিক টানা-পোরেন থাকলেও শিক্ষা, ধর্ম ও সুস্থ সংস্কৃতির ছোঁয়া ছিল আমাদের পরিবারে। চারদিকে সব অক্ষরজ্ঞান শূন্য মানুষের সমাহার থাকলেও আমাদের বাড়িতে সবাই কম বেশী শিক্ষিত ছিল। বাড়ির বয়জেষ্ঠ্য ছিলেন আমাদের একমাত্র ফুফু বদরুন্নেসা। যিনি বিধবা হয়ে ১ সন্তান সহ আমাদের বাড়িতে তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত অংশে ছোট একটি ঘর তুলে স-পুত্র বসবাস করতেন।
ফুফু আম্মা সেই শতাধীক বছর পূর্বে নারী হিসেবে জন্ম নিয়েও মৌলিক শিক্ষা টুকু অর্জন করতে পেরেছিলেন। আমার দাদাজান মুন্সী সৈয়দ আলী নিজেই একজন সু-শিক্ষিত তখনকার আমলে টাইটেল পাশ ছিলেন। তিনি আরবী, ফারসী, উর্দুতে অনরগল কথা বলতে পারতেন। বাউফলের জমিদার বাড়ির পাঠশালার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একমাত্র কন্যাকে নিজে কোরআন-হাদীস সহ বাংলা শিক্ষা দিয়েছেন। তাছাড়াও ফুফু আম্মা পরান তালুকদার বাড়ির মক্তবেও পড়েছেন, সেখানে কবি মোজাম্মেল হকের একমাত্র কন্যা মমতাজ মহল তার বান্ধবী ছিলো। এক কথায় তিনি ধর্মীয় ও সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত আমাদের গ্রামের শত শত ছেলে মেয়েদের তিনি বিনা পারিশ্রমিকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর কাছে পুঁথির সম্ভার ছিল। বিকেল বেলা প্রতিদিন তিনি সুর করে পুঁথি পাঠ করতেন। ‘জঙ্গ নামা’ ‘এজিদবদ’ ‘সোনাভান’ ‘গাজীকালু চম্পাবতী’ ‘গুনাই বিবি’ ‘আপন দুলাল’ সহ অনেক পুঁথি ছিল তার ভান্ডারে। সে সময়ে এটাই ছিলো গ্রামের মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম।
তখনকার দিনে পুঁথি পাঠ করতে জানতে হতো। অক্ষরজ্ঞান থাকলেই হতো না, এর একটা ভিন্নতর আর্ট ছিল, সুরের ব্যাঞ্জনা ছিল। পুঁথি পাঠে বিভিন্ন সূর ছিল (পয়ার) (ধ্রপদি) ইত্যাদি সেটা খেয়াল করে গলার সুরে চেঞ্জ হতো। ফুফু আম্মার পুঁথি সোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মহিলারা আসতেন। তিনি সুর করে পাঠ করতেন। তাঁর পুঁথির কাহিনীতে সবাই মশগুল হয়ে যেত। অনেকেই কাঁদতো- হাসতো। এটা ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। আমার একমাত্র চাচী সেও প্রাইমারী পাশ করেছিলেন। এমনকি সেই ছদূর চর থেকে সেই আমলে ভোলা শহরে গিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আমার মা ও প্রাইমারী পাশ করেও কিছুদিন পড়েছেন। তবে সে আমলে বাল্য বিবাহের কারনে এরা কেউই উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। এদের সবারই বিয়ে হয়েছে ১১/১২ বছর বয়সের মধ্যে। এরা শিক্ষিত হওয়ার কারনেই হয়তো আমাদের সকল ভাই বোনরাই মোটামুটি উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। চাচী আম্মা এবং মা এরাও বিনা পারিশ্রমিকে বছরের পর বছর আশ পাশের মেয়েদেরকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এ ধারা আমাদের বাড়িতে বহু বছর চালু ছিল। আর তখনকার দিনে আশপাশের সকল চিঠি পড়ে এবং লিখে দিতেন আমাদের বাড়ির এই ৩ জন মহিলা। সে চিত্র এখন আর কল্পনা করাও সম্ভব নয়।— চলবে

বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৮:০০   ৩৭৮ বার পঠিত  |