বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭

লালমোহনে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মী দশার শিকার শিক্ষার্থীরা: ক্ষোভ অভিভাবকদের

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » লালমোহনে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মী দশার শিকার শিক্ষার্থীরা: ক্ষোভ অভিভাবকদের
বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭



---

আমজাদ হোসেন, (লালমোহন প্রতিনিধি) ভোলাবাণী: সারা দেশে এবারের ২০১৭-১৮ সেশনের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্ব স্ব শিশু বোর্ডের নির্দেশে অনলাইনে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের নিজ নিজ মুক্ত মতের স্বপক্ষে থাকলেও ব্যক্তি মতের অধিকার স্বাধীনতা থাকছেনা ভোলার লালমোহন উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অভিভাবকদের । ফলে মুখ বুজা কষ্ট ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা।

লালমোহনে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে গোপনে এ ভর্তি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে নতুন কলেজের বিরুদ্ধে। এতে করে ওই সকল শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে চরম ভোগান্তির শিকার হবে বলে জানিয়েছে অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার কয়েকজন শিক্ষার্থী এব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর লালমোহনের কয়েকটি স্কুল এন্ড কলেজ ভর্তি রেজিষ্ট্রেশন মিশনে নেমেছে। নতুন ওই কলেজগুলো স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে গোপনে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরে পছন্দের কলেজে ভর্তি হবার জন্য আবেদন করতে গেলে দেখতে পায় তাদের নামে আগেই আবেদন করা হয়ে গেছে। অথচ শিক্ষার্থীদের নিজেদের ও পরিবারের মোবাইল নম্বরে এসএমএস এর মাধ্যমে অথবা অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা।

কিন্তু কলেজগুলো নিজেদের ব্যক্তিগত একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে এভাবে গণ আবেদন করে শিক্ষার্থীদের এক ধরণের বাধ্য করছে তাদের কলেজে ভর্তি হতে। ভর্তি নীতিমালায় এ ধরণের কাজ অপরাধ হলেও কলেজগুলো তা মানছে না। এনিয়ে পুরাতন কলেজগুলোও শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে অভিভাবকরাও পরেছে চরম বেকায়দায়।

লালমোহন গজারিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে নুসরাত জাহান তামান্না। সিন্ধান্ত নিয়েছে ভর্তি হবে পাশের অন্য একটি কলেজে। কিন্তু অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে দেখে তার আবেদন করে ফেলেছে গজারিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওই কলেজের সুমন স্যার তার মোবাইল নম্বর দিয়ে আবেদন করে ফেলেছে।

তার পরিবার থেকে ভর্তি পরিবর্তনের জন্য পাসওয়ার্ড চাইলে তাও দেওয়া হয়নি বলে জানান ছাত্রীর মা একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা রাশিদা বেগম। পরে তিনি বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। একই দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন মহেষখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী।

গজারিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সুমন স্যারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৫ বছর আমরা তাদের পড়িয়েছি, সে হিসেবে আমাদের একটা অধিকার রয়েছে। তারা আমাদের এখানেই ভর্তি হবেন এমন আত্মবিশ্বাসে আমরা রেজিষ্ট্রেশন করেছি। এরপরও কেউ যদি ভর্তি হতে না চান তাহলে তাদের আটকানো হবে না। পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়নি বলে যেই অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয় বলেও তিনি জানান।অপরদিকে এ উপজেলার পাংগাশিয়া স্কুল এন্ড কলেজের ও একেবারে নাজেহাল অবস্থা,এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আরও বিস্তর।এখানেও এসএসসি পরীক্ষায় যারা পাস করেছে তাদের না জানিয়ে এইচএসসি ভর্তির আবেদন করে ফেলেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রথম চয়েজ রেখে অন্য উপজেলার অজপাড়া গাঁয়ের কলেজ গুলোতে চয়েজ দিয়ে রেখেছে,তাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে আরও বেশি ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। অনেক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের জিম্মি করেছে এখন আমরা নিজেদের পছন্দের কলেজে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়ার সুযোগ হারাচ্ছি।আমাদের এখন ভোলা বরিশাল যাওয়া আশা করতে হচ্ছে।

এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা তারা বলেন বাচ্চাদের ঠিক মতো উপবৃত্তির টাকা না দেয়া,এসএসসির সনদ এবং মার্কসিট তুলতে আসলেও ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা। খোজ নিয়ে জানা গেছে এবারের নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনে জন প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ধার্য্য করেছে কর্তৃপক্ষ,অথচ বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের নোটিশে দেখা গেছে ১৭৫ টাকা নিবন্ধন ফি।এ অভিযোগ পুরো উপজেলার সব প্রতিষ্ঠানে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শামছুল আরিফ জানান, অভিযোগ বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করা হবে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মু. জিয়াউল হকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, যাদের এরকম হয়েছে তারা বোর্ডে আবেদন করলে ওই কলেজের ভর্তি বাতিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫০:৪০   ৪৪৯ বার পঠিত  |