কীভাবে বুঝবেন?সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » কীভাবে বুঝবেন?সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু
সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩



ভোলাবাণী স্বাস্থ্য ডেক্স।। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতে যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। ইতিমধ্যে দেশের প্রায় ৫৩ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই রোগ।

শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই মরণঘাতী রোগ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে মানুষের মাঝে।

কীভাবে বুঝবেন,সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু?

এরই মধ্যে চলছে বর্ষার মৌসুম। বর্ষার এই সময়ে বৃষ্টির সামান্য ফোঁটা মাথায় পড়লেই দেখা দেয় জ্বর, সর্দি-কাশি। তাই এই সময়ে জ্বর হলেই ডেঙ্গু ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন মানুষ।চলুন জেনে নেই কীভাবে বুঝবেন কোন জ্বর ডেঙ্গুর আর কোনটি ভাইরাসজনিত।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

১. সাধারণত এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‌্যাশ) হতে পারে। তবে অনেক সময় লক্ষণ ছাড়াই ডেঙ্গু হতে পারে।

২. অনেক ক্ষেত্রে জ্বর ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। এরকম হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত।

৩. জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে বলা হয় স্কিন র‍্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো।

৪. বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর

ডেঙ্গু রোগীদের এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-

১. শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি ইত্যাদি।

২. এই পর্যায়ে অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম

ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো-

১. রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া। নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।

২. শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।

৩. প্রস্রাব কমে যাওয়া।

৪. হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সাধারণ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ

ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর বছরের যেকোনো সময় হতে পারে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে প্রায়শ জ্বর ঠান্ডা লেগেই থাকে। সাধারণ জ্বরের লক্ষণগুলো হল

১. ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে সর্দি, গলাব্যথা, শরীরে হালকা ব্যথা, দুর্বলতার মতো উপসর্গ থাকে।

২. হঠাৎ জ্বর আসে এবং কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।

৩. শরীর-হাতপা ম্যাজ ম্যাজ করে।

৪. জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকে।

৫. নাক বন্ধ থাকে; নাক দিয়ে পানি পড়ে।

৬. মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে খিদে কমে যায় ও বমি বমি ভাব থাকে।
চিকিৎসা ও সাবধানতা

ডেঙ্গু জ্বর হোক বা সাধারণ মৌসুমি জ্বর, জ্বর কখনোই বাড়তে দেওয়া যাবে না। জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো শরীর নরম কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

১. জ্বর ও শরীরের ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর ও ব্যথা কমার ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।

২. নাক বন্ধ থাকলে বয়সভেদে নাকের ড্রপ ব্যবহার করা লাগতে পারে। গলাব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে হবে।

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ) নিতে হবে।

৪. স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাবেন। যেমন-খাবার স্যালাইন, টাটকা ফলের রস ইত্যাদি।

৫. এছাড়া গ্লুকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন।

৬. ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

৭. ডেঙ্গু ধরা পড়লে অবশ্যই প্লাটিলেট পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং সচেতনভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ

এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের কোন ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। তাই প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ হবে সর্বোত্তম পন্থা। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে

১. অবশ্যই মশারী টানিয়ে ঘুমাতে হবে। বৃদ্ধ ও শিশুদের মশারীর মধ্যে রাখতে হবে।

২. বাসায় মশার প্রতিষেধক, কীটনাশক সামগ্রী বা কয়েলের ব্যবহার করতে হবে।

৩. ত্বকের সংস্পর্শে যাতে মশা কম আসতে পারে এমন পোশাক অবশ্যই পরতে হবে।

৪. প্রাদুর্ভাবের সময় স্প্রে হিসেবে কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৫. মশা ডিম পারতে পারে এমন জায়গায় নিয়মিত নজরদারি চালাতে হবে। খোলা পাত্রে পানি জমতে দিলে হবে না, এ জন্য নিয়মিত নজরদারি করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৯:৫১   ১০১ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥
এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
এ কে ফজলুল হককে কেন ‘শেরে বাংলা’ বলা হয়?
জাতীয় পর্যায়ের লোকনৃত্য প্রতিযোগীতায় ভোলার মেয়ে স্বস্তিকার ২য় স্থান অর্জন
ভোলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি

আর্কাইভ