ডিজিটাল যুগের কলের মেশিনের আধিপত্য হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি।

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ডিজিটাল যুগের কলের মেশিনের আধিপত্য হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি।
শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০



সাব্বির আলম বাবু।।ভোলাবাণী।। বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ও বউ ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পার দিয়া…
ঢেঁকি নাচে বউ নাচে
হেলিয়া দুলিয়া..
ও বউ ধান ভানে রে…
গ্রামে-গঞ্জে কৃষানীদের সমবেত কন্ঠে এই রকম গান আর উৎসবের উপলক্ষ্য দেখা যেতো যখন পৌষপার্বণের নবান্নের ঘনঘটা হতো। অগ্রহায়ণ মাসে মাঠে কৃষকের পাকা ধান কাটা আরম্ভের সাথে সাথে কৃষানীরা সকলে মিলে ঘরে ঘরে ধানের চাল ভানা বা চাল গুড়া করা আর পীঠা-পুলি তৈরীর মহাসমারোহ শুরু করে দিতো। একে অপরের হাত ধরে নানারকম গান গাওয়া আর গালগল্পে মগন থেকে এই সকল কাজ করতো। যেন চারিদিকে হৈ-হুল্লোড় পড়ে যেতো। এ জন্যই হয়তো প্রবীন জ্ঞানী ব্যাক্তিরা প্রবাদ রচনা করছেন, “ধান ভানতে শিবের গীত”।

ডিজিটাল যুগের কলের মেশিনের আধিপত্য হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি।এসব কর্মকান্ডের প্রচলন সাধারণত হিন্দু সমাজের কৃষক-কৃষানীদের বাড়ীতেই বেশী দেখা যেতো। কৃষানী উষারানী জানান, ঢেঁকিতে ধান ভানার আলাদা একটা ছন্দ থাকে। ২/৩ জন গৃহবধু মিলে পা দিয়ে ঢেঁকির পাটাতনে পাড় দেয় বা চাপ দেয় আর একজন ঢেঁকির সামনে দাঁত বা মৌনার নীচে গর্তের ভেতর রাখা চাল নাড়াতে থাকে। এই কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এভাবে ধান ভানতে কখনো কখনো গৃহবধুদের সারা রাত লেগে যেতো। তবে এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না, শোনা যায় না ধুপধাপ ছন্দময় চাল গুড়া করার শব্দও। শহরেতো বটেই আজকাল অনেক গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও চোখে দেখেনি। অনেকেরই কৌতুহল মেশিন ছাড়া কেমন করে ধান থেকে চাল বের করা হতো। আসলে ঢেঁকি হচ্ছে কাঠের তৈরী হাতে কাজ করার বিশেষ ধরনের কল। কৃষক ও কাঠমেস্ত্রী নিখিল বৈদ্য জানান, একটা লম্বা ১৮ ইঞ্চি ব্যাস বিশিস্ট ধর থাকে ঢেঁকিতে। মেঝে থেকে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড়ের সামনে এক ফুট বাকী রেখে দুই ফুট লম্বা একটি গোল কাঠের মাথায় লোহার রিং পড়ানো থাকে। এটাকে মৌনা বলা হয়। পিছনে দুটি বড় কাঠের দন্ডের ভেতর দিয়ে একটি হুড়কা হিসাবে গোলাকার খিল থাকে। এভাবেই এক সময় ধান ভানার কাজ হতো ব্যাপকভাবে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গ্রাম এলাকার সম্ভান্ত পরিবার গুলোতে ঢেঁকির জন্য আলাদা ঘর থাকতো। সুপ্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলায় ঢেঁকির প্রচলন শুরু হলেও আধুনিক প্রযুক্তির মেশিনের কলের আধিপত্যে বা ডিজিটাল যুগের ছোঁয়ার কারনে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কারন মেশিনের কলে ধান ও চাল ভানা অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমে করা যায়। তাই সবাই সহজেই সেই কলের সুবিধা নিতে চায়। অথচ পুষ্টিবিদদের মতে কলে ছাঁটা চালের চেয়ে ঢেঁকিতে ছাঁটা চালের পুস্টিমান বেশী। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ঢেঁকিকে দেখা যাবে যাদুঘরে অথবা ইতিহাসের বইয়ের পাতায়। তাই এটিকে সংরক্ষন বা বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৭:৩৯   ১৯৫ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়ে ১৩ দোকান ছাই পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি ॥
এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
এ কে ফজলুল হককে কেন ‘শেরে বাংলা’ বলা হয়?
জাতীয় পর্যায়ের লোকনৃত্য প্রতিযোগীতায় ভোলার মেয়ে স্বস্তিকার ২য় স্থান অর্জন
ভোলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি

আর্কাইভ