শিরোনাম:
ভোলা, সোমবার, ৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

Bholabani
বুধবার ● ১২ এপ্রিল ২০২৩
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » বোরহানউদ্দিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৫৫০ বছরের পুরনো রাজ প্রসাদ
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » বোরহানউদ্দিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৫৫০ বছরের পুরনো রাজ প্রসাদ
৭৩ বার পঠিত
বুধবার ● ১২ এপ্রিল ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বোরহানউদ্দিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৫৫০ বছরের পুরনো রাজ প্রসাদ

ভোলাবাণী ॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনে আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সাড়ে ৫শত বছরের প্রাচীন রাজ প্রসাদ। উপজেলা সদর হতে ৭-৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সাচড়া ইউনিয়নের রামকেশব গ্রামে গুড়িন্দা বাড়িতে এই পুরনো স্থাপনাটি অবস্থিত। ধরনা করা হয় এটি ভোলার সবচেয়ে প্রাচীনতম স্থাপনা। জেলা তথ্য বাতায়ন ও ঐতিহাসিক পূরাকীর্তি বিভাগে এ ধরনের কোনোকিছুর উল্লেখ নেই।
কারুকার্য খচিত এই পুরনো স্থাপনাটি এক নজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন। দর্শনার্থীরা তৎকালীন সময়ের নির্মাণশৈলী দেখে অবাক হচ্ছেন। এমনকি প্রকৌশলীরাও এর নির্মাণশৈলী দেখে বিস্মিত হচ্ছেন। সংস্কার না করায় ভবনটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এখন সেখানে কেউ আর থাকছেন না। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে প্রসাদটি। সরকারিভাবে ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটির সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী মহল।

বোরহানউদ্দিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৫৫০ বছরের পুরনো রাজ প্রসাদ

ওই স্থাপনার বর্তমান মালিক এবং স্থানীয়রাও এর পূর্ব ইতিহাস জানেন না। গত দেড়শ বছরের ইতিহাসে ওই স্থাপনার মালিকানা সিএস, আরএস, এসএ খতিয়ানে বর্তমান মালিকানা পূর্বপুরুষদের নামে বলে ওই ঘরে বসবাসরতরা জানান। ধারণা করা হয় রায়তি সূত্রে ওই প্রসাদের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।
বরিশাল বিভাগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ৫৫০ বছর আগে চন্দ্রদীপের (বর্তমান পটুয়াখালীর অংশ) রাজা জয়দেবের ছোট মেয়ে বিদ্যা সুন্দরী ও জামাতা গুড়িন্দার জন্য ওই রাজবাড়ী নির্মাণ করেন। রাজার জামাতা গুড়িন্দা রাজসভার মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী গুড়িন্দা ১৪৭৫ সালের দিকে বিদ্যা সুন্দরীর নামে বিশাল দীঘি খনন করেন। এলাকায় বিদ্যা সুন্দরীর দীঘি নিয়েও নানা কল্প-কাহিনী প্রচলিত আছে। (সূত্র-বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, সিরাজউদ্দীন আহমেদ)।
তবে প্রফেসর মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরীর ভোলা জেলার ইতিহাস ও এবিএম আমিনউল্যাহর বোরহানউদ্দিন থানার ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা জয়দেব তাঁর মেয়ে বিদ্যা সুন্দরীকে তারই রাজ্যসভার গোয়েন্দা প্রধানের সাথে বিয়ে দেন। তার মেয়ে ও জামাতার জন্য ওই রাজকীয় প্রসাদ নির্মাণ করেন। রাজার জামাতা গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করার কারণে ওই বাড়ির নাম এক সময় গোয়েন্দা বাড়ি ছিল। ধারণা করা হয়, জমিদারি প্রথার পর কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে ওই বাড়ির নাম গুড়িন্দা বাড়ি হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির দক্ষিণ ভিটায় স্থাপত্যটির অবস্থান। সামনের অংশে নানা ধরনের নকশা করা। অনেক অংশ দিয়ে পলেস্তারা খসে গেছে। অযত্নে ভাঁজে ভাঁজে শ্যাওলা পড়ে আছে। প্রবেশ দুয়ার একটি। তবে আয়তন উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। দুয়ারের প্রস্থ তিন ফুট আর উচ্চতা মাত্র পৌনে ৬ ফুট। ভেতরের দেয়ালে বিভিন্ন নকশা, আল্পনা। বারান্দা থেকে ভিতরের ঘরের দুটি দরজা।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওই দরজা দুটির উচ্চতা মাত্র সাড়ে চার ফুট। দেয়াল এবং ছাদে চুন-সুড়কি ব্যবহার করা হয়েছে। দেয়ালের প্রস্থ কমপক্ষে ২৫ ইঞ্চি। ছাদের প্রস্থ ১০-১১ ইঞ্চি। তবে মেঝে ক্ষয়ে গেছে। পশ্চিম দিক দিয়ে ইট-সুড়কির সিঁড়ি সরাসরি ছদের সাথে মিশেছে। ভবনের পেছনের দিকে মাটির সাথে ২-৩টি সুরঙ্গ মুখ। সিঁড়িতে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা দৈর্ঘ্যে ১২ ইঞ্চি ও প্রস্থে ৬ ইঞ্চি। যে কয়টা ইট দেখা যায় সম্পূর্ন  অবিকৃত। ভেতর-বাহিরের সব দিকের নির্মাণশৈলী দেখলে ৫৫০ বছর আগে কিভাবে এ কাজ করা সম্ভব হয়েছে তা এক বিস্ময়ের জন্ম দেবে।
এটির পূর্ব ইতিহাস সম্পর্কে না জানলেও ওই ঘরের বর্তমান উত্তরাধিকারী নান্নু মিয়া গুরিন্দা জানান, তার বাবার দাদা আঃ গফুর গুরিন্দা রায়তি সূতে প্রথমে সেখানে বসবাস শুরু করেন। তার তিন ছেলে ফজলে করিম, আঃ মজিদ ও দেলোয়ার হোসেন। ১ম পুত্র ফজলে করিম এর দুই সন্তান জয়নাল হোসেন ও মফিজল হোসেন, ২য় পুত্র আঃ মজিদ এর ছিল এক পুত্র আঃ আজিজ তার ছেলে আঃ লতিফ, এবং ৩য় পুত্র দেলোয়ার হোসেন এর তিন পুত্র খোরশেদ আলম, সোনা মিয়া ও নান্নু গুরিন্দা।
জায়গা সংকট থাকায় বেশির ভাগ ওয়ারিশগন আলাদা আলাদা ঘর করে থাকেন। উত্তরাধিকারী হিসেবে নান্নু মিয়া ও আঃ লতিফ গুরিন্দার পরিবার বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু ঘরটি এখন বেশ ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমানে কেউ বসবাস করছেন না। তারা ওই ঘরের পিছনে আলাদা ঘরে করে বাস করছেন। তাই সেটি এখন পরিত্যক্ত লাকড়ির ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সে আরো জানায় কিছুদিনের মধ্যেই ঘরটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করা হবে। নান্নু গুড়িন্দা ও আঃ লতিফ গুড়িন্দার ছেলে রাকিব জানান, সরকারিভাবে ঘর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
ভোলা সরকারি কলেজ থেকে সদ্য মার্স্টাস শেষ করা জাহিদ গুরিন্দা জানান, অনেকেই এটা দেখতে আসেন এটার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন। সংস্কার ও সংরক্ষনের অভাবে বর্তমানে এসব পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মতো নতুন প্রজন্মদের ইতিহাস জানতে এগুলো সংরক্ষন করা অত্যান্ত জরুরি।
শিক্ষক ও সাংবাদিক মোবাশ্বির হাসান শিপন জানান, স্থাপনাটি বোরহানউদ্দিনের ইতিহাসের একটি বড় অংশ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সংরক্ষনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সাঁচরা ইউপি চেয়ারম্যন মোঃ মহিবুল্ল্যাহ মৃধা জানান, এটা আমার এলাকায় হওয়ায় অনেকবার সেখানে গিয়েছি। ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় সরকারিভাবে এটা সংরক্ষণ করা উচিত।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাইদুল ইসলাম খান জানান, ইতিহাস ঐহিত্য রক্ষায় এগুলো অবশ্যই সংরক্ষন করা উচিত। এটি সংরক্ষনে আমাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হলে সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করবো।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, যেহেতু এটা আমাদের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পরিদর্শনপূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবো।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মনপুরায় অপহৃত এসএসসি পরীক্ষার্থীকে মুন্সীগঞ্জ থেকে উদ্ধার
ভোলায় আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে বাল্য বিবাহ পড়াইলেন কাজি।।
তজুমদ্দিনে প্রায় ১১”শ কোটি টাকার প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম
চরফ্যাশনের তিন যুবক ব্যতিক্রমি উদ্দ্যেগসুপারি পাতার খোলে তৈজসপত্র তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন
ভোলায় ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১।
ঈদে শাহী বোরহানি
মনপুরায় পাচারকালে কোটি টাকা মূল্যের ১ টি তক্ষক উদ্ধার
বোরহানউদ্দিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৫৫০ বছরের পুরনো রাজ প্রসাদ
প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজবাহী রণতরী চালু করল তুরস্ক।
ভোলার গ্যাস যাচ্ছে ঢাকায়