খলিল উদ্দিন ফরিদ ॥ভোলাবাণী।। ভোলা সদর উপজেলার একটি বাগানের মধ্যে এক গম্বুজওয়ালা প্রাচীন একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার এলাকায় মোইজুদ্দিন মাঝি বাড়ির বাগানের মধ্যে মসজিদটি অবস্থিত। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাচীন এই মসজিদের ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে পড়লে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌসের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন। পুরাকীর্তির তালিকায় ভোলার কোনো নিদর্শন সংরক্ষিত নেই। এই প্রথম হয়তো কোনো নিদর্শন তালিকাভুক্ত হবে বলে জানান পরিদর্শন দলের প্রধান।
পরিদর্শন দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া, আলোকচিত্রী মোজাহার হোসেন এবং সংরক্ষণ ফোরম্যান মো. আরিফ হোসেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দলটি সরেজমিন প্রত্নস্থল পরিদর্শন করে নিদর্শনের সময়কাল নিরূপণ, পুরাকীর্তির সংরক্ষণ, উপযোগিতা যাচাই, এর স্থাপত্যগত, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নিরূপণের পাশাপাশি ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করবে বলে জানা যায়।
মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, ভোলায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে এ মসজিদের কোনো নাম বা স্থাপনের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। কেউ বলছেন, নেগাবান মসজিদ, কেউ বলছেন, টনির মসজিদ, কেউ বলছেন মাঝি বাড়ির মসজিদ। দ্বীপ জেলা ভোলায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় সংরক্ষণ ঘোষিত কোনো পুরাকীর্তি নেই। এই পুরাকীর্তির সন্ধান পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে ভোলায় প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
পরিদর্শন দলের নেতা মো. গোলাম ফেরদৌস আরও বলেন, সরেজমিনে প্রাচীন এই স্থাপনার ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, স্থাপত্যগত ও নান্দনিক গুরুত্ব পর্যবেক্ষণ করে তাঁদের কাছে প্রাচীন মসজিদটির যথেষ্ট সংরক্ষণ-গুরুত্ব রয়েছে বলে অনুমিত হয়। চুন-সুরকির গাঁথুনিতে বর্গাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত মসজিদের ছাদ আধা গোলাকার এক গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি, প্রস্থে ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি, দেয়ালের পুরুত্ব ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের সম্মুখদেয়াল মুঘল স্থাপত্যরীতিতে গড়ে তোলা হয়েছে। এই দেয়াল নকশা দ্বারা সজ্জিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ধারণা, এই মসজিদ মুঘল আমল-পরবর্তী কোনো এক সময়ে নির্মিত হতে পারে। ১৭ শতকের শেষে কিংবা ১৮ শতকের প্রারম্ভে এটি নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে নবাব মুর্শিদ কুলি খানের আমলে এই দ্বীপে মুসলিম জনবসতি গড়ে ওঠা এবং ইসলাম প্রচারের কারণে এই প্রাচীন মসজিদ গড়ে উঠেছে বলে আমাদের ধারণা।’
মো. গোলাম ফেরদৌস আরও বলেন, ‘সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। সে উদ্দেশ্যে আমরা অচিরেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি সংরক্ষণ প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৫:০২ ৬৫ বার পঠিত |