২৩ সালে ৪৩টি দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে কতটুকু প্রস্তুত আওয়ামী লীগ ও সরকার

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ২৩ সালে ৪৩টি দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে কতটুকু প্রস্তুত আওয়ামী লীগ ও সরকার
বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২



ভোলাবাণী সম্পাদকীয় ঃ দেশে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে- কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন বক্তব্যে এমন আশঙ্কার কথা বলছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে দেশে ফিরে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এডিবিসহ দাতাসংস্থাগুলোর পূর্বাভাস তুলে ধরে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন তিনি। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে তিনি অভিমত দেন, বাংলাদেশে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা না দেয়, সেজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও সংকট মোকাবিলায় তিনি খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান দেশবাসীর প্রতি।

দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে কতটুকু প্রস্তুত আওয়ামী লীগ ও সরকার এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে দিয়ে জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে পৃথিবীর ৪৩টি দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। সংস্থা দুটি বলছে, ২০ কোটি মানুষের জন্য জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের সরকারি ও বিরোধী দলগুলো কী ভাবছে, কী প্রস্তুতি নিচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ দাবি করছে, ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় তারা করোনাকালের মতো সরকারি ও দলীয় দুভাবেই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৃষক লীগ এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে টিম করে কাজ শুরু করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপি জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে হবে। ষড়যন্ত্র ও নিপীড়ন বন্ধ করে সরকারকে বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকেও সহযোগিতা নিতে হবে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশে খাদ্যঘাটতির মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলায় সরকারি ও দলীয়-দুভাবেই জনগণের পাশে থাকার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর যে আহ্বান জানিয়েছেন, সে বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ শুরু করেছেন। দেশের কৃষক, শ্রমিকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে টিম করে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ।

নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকেও কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়াসহ খাদ্য আমদানির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তারা দাবি করেছেন, করোনা সংকটে সরকার ও আওয়ামী লীগ যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, একই প্রক্রিয়ায় আগামী দিনের সংকটও সামাল দেওয়া হবে। এ সংকটকে পুঁজি করে বিএনপি যে ষড়যন্ত্র করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে তারা ব্যর্থ হবে।

  • বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও সংকট মোকাবিলায়  সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী
  •  বিএনপি জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে হবে।

 আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, চলমান এ সংকট বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা সরকার বা আওয়ামী লীগের জন্য তৈরি হয়নি। এটা হয়েছে করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। আর পুরো বিশ্বের অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। তারা বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যেকোনো সংকটকে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন। কোনো কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করেন না।

নেতারা দাবি করেন, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন, ২০ লাখ লোক না খেতে পেয়ে মারা যাবে। কিন্তু একটা লোকও অনাহারে মারা যায়নি। তখন বলা হয়েছিল, সরকার ভ্যাকসিন দিতে পারবে না। কিন্তু সরকার শুধু যথাসময়ে ভ্যাকসিনও দেয়নি, বিনামূল্যে দিয়েছে। যেটা অনেক উন্নত দেশই দেয়নি। শুধু সরকারিভাবেই নয়, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবেও তখন সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আগামী দিনের সংকট মোকাবিলার জন্য নেত্রী জনগণের প্রতি কৃচ্ছ্রতা সাধনের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদ করতে বলেছেন। নেত্রীর এই বার্তার পর দলের নেতারাও যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি বলেন, জাতির সংকটে আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের সঙ্গে থেকেছে। আগামী দিনেও যেকোনো সংকটে জনগণের পাশে থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।

আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্ত বলেন, সরকার বা প্রধানমন্ত্রী জনগণের কাছে কোনো কিছুই গোপন করেন না। কিন্তু বিরোধীদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের গুজব রটানো হচ্ছে। বৈশ্বিক এই সংকটের কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সংকট সামাল দিতে সব দেশ তার রিজার্ভ থেকে অর্থ নিচ্ছে। খাদ্য জ্বালানির মতো জরুরি জিনিসগুলোর জোগান দিচ্ছে। সেটা প্রধানমন্ত্রীও তার বক্তৃতায় বলছেন। সরকারের সৎসাহস ও আন্তরিকতা আছে বলেই জনগণের সামনে এসব তুলে ধরা হচ্ছে।

বিরোধীদের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই নেতা বলেন, বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল এই বৈশ্বিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচারে নেমেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না। যেকোনো সংকটে আওয়ামী লীগের প্রতিটা নেতাকর্মী জনগণের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যে প্রভাব ফেলেছে, তা থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের এক ইঞ্চি জমি নষ্ট না করে তাতে চাষাবাদ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন নিয়মিত। শুধু জনগণের প্রতি নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীদের প্রতিও তিনি একই আহ্বান জানিয়ে এই বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সর্বশেষ জেল হত্যা দিবসের আলোচনা সভাতেও সরকারের নেওয়া পদক্ষেপসহ নেতাকর্মীদের নিজ নিজ বাড়ি ও জমিতে খাদ্য উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও শেখ হাসিনা।

এদিকে সরকারিভাবেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ভবিষ্যৎ সংকটের কথা মাথায় রেখে। সম্প্রতি আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে তাদের ঋণের শর্ত হিসেবে কৃষি ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। তবে সরকার কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর পক্ষে নয়। মূলত ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই সরকার এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সবসময় ভর্তুকি কমানোর কথা বলে। কিন্তু সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আইএমএফ বা অন্য কারও পরামর্শে সরকার সারে এক টাকাও ভর্তুকি কমাবে না। তিনি বলেন, আগের বছরগুলোতে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতো। গত বছর সারে ভর্তুকি বেড়ে ২৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই বছরের প্রথম ৬ মাসেই ৪৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, সারে ভর্তুকির পরিমাণ যতই বাড়ুক না কেন, সরকার যেকোনোভাবে তার সংস্থান করবে। কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি (শেখ হাসিনা) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সরকার শুধু দেশি উৎপাদনের ওপরই নয়, খাদ্যপণ্য আমদানির ওপরও জোর দিচ্ছে। তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশের উৎপাদন দিয়েই খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। করোনাকালে ৩৩৩-এ কল করে অনেকেই খাদ্যসহায়তা পেয়েছে। তখন একটি মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, দলীয় সভাপতির আহ্বানের পর নেতারা যে যেখানে কর্সূচিতে যাচ্ছেন, সেখানেই এ বিষয়ে কথা বলছেন। এমনকি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেছেন। করোনাকালেও যেমন, তেমনি আগামীতেও সমস্যা হবে না। দল ও সরকার একসঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়াবে। বৈশ্বিক সংকটকে পুঁজি করে বিএনপি যে অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, তাতে তারা ব্যর্থ হবে। কারণ দেশের মানুষ বিএনপি নেতাদের কথা বিশ্বাস করে না।

এ প্রসঙ্গে কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ বলেন, দূরদর্শিতার কারণে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে আগাম সতর্ক করেছেন। অতীতে নেত্রীর যেকোনো নির্দেশনা বাস্তবায়নে কৃষক লীগ সবসময় মাঠে থেকেছে। এবারও নেত্রীর এই আহ্বানের পর কৃষক লীগ সারা দেশে টিম করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, নেত্রীর এই বার্তা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। সম্প্রতি সাতক্ষীরা কৃষক লীগের সম্মেলন থেকেও একই আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১৬:৫৯   ১১৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি
ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার খালের উপর ব্রিজ নির্মানের দাবী মনপুরাবাসীর ॥
লালমোহনে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়
লালমোহনে আবাসনের ঘর জবরদখলের অভিযোগ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ভোলার ৩ উপজেলায় ৩৮ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল
কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

আর্কাইভ