ভোলায় গুচ্ছগ্রামের সরকারি জমি দখল করে ঘর নির্মান।। অভিযোগ দেওয়ার পরও নেওয়া হয়নি পদক্ষেপ

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলায় গুচ্ছগ্রামের সরকারি জমি দখল করে ঘর নির্মান।। অভিযোগ দেওয়ার পরও নেওয়া হয়নি পদক্ষেপ
বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২



স্টাফ রিপোর্টার ॥ভোলাবাণী।।ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চাচঁড়া ১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামে প্রভাব দেখিয়ে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে ঘর নির্মাণ করছে ভূমিদস্যু আঃ গফুর মাঝি। স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিলে আঃ গফুর ও তার লোকজন স্থানীয়দেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখায় এবং আঃ গফুর মাঝি বাদী হয়ে স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

ভোলায় গুচ্ছগ্রামের সরকারি জমি দখল করে ঘর নির্মানএ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এ্যাসিল্যান্ড বরাবরে অভিযোগ দেওয়ার পরও সরকারি জমিতে ঘর নির্মান বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের ১নং দিশারী আদর্শ গুচ্ছগ্রামে ১৯৮৮-৮৯ সালে সরকার মৃত সেকান্তর আলীর ছেলে বৃদ্ধ ভূমিহীন মোঃ কাজল ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকে ৮ শতাংশ জমি ও একটি ঘর বন্তোবস্ত দেয়। বন্দোবস্ত পাওয়ার পর থেকে কাজল তার পরিবারকে নিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছেন। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর আগে কাজল তার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রতনের স্ত্রী লাইজু বেগমের কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। কাজল ধার নেওয়া টাকা লাইজু বেগমকে পরিশোধ করতে ব্যার্থ হয়ে এক পর্যায়ে সরকারের নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে বন্তোবস্ত নেওয়া জমি থেকে লাইজুকে আড়াই শতাংশ জমি প্রদান করে। সরকারের দেওয়া বন্তোবস্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকা সত্ব্যেও কাজল সরকারের আইন অমান্য করে লাইজুকে উক্ত জমি দখল দেন। কাজলের দেওয়া সরকারী বন্তোবস্ত জমিতে ঘর উত্তোলন করে লাইজু বেগম সেখানে বসবাস শুরু করে। কিছুদিন পর দেখা যায় লাইজু বেগম এলাকায় দেহ ব্যবসাসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে পেতে এলাকাবাসী লাইজু বেগমকে উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১২-০৮-২০১৫ইং তারিখে উপজেলা আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়ে লাইজু বেগমকে উক্ত সরকারী জমি থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয় এবং তার বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। অবৈধ ও বেয়াহাপনা কাজে লিপ্ত থাকায় এলাকাবাসী সেখান থেকে লাইজুকে উচ্ছেদ করে দেয়। পরে লাইজু বেগম ১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ সেলিমসহ এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি ও লাইজু বেগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাবাসী মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার বরাবরে লাইজু বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কাজলের কাছ থেকে নেওয়া আড়াই শতাংশ জমি লাইজু বেগম আঃ গফুর মাঝির মেয়েকে নোটারী স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বুজিয়ে দেয়। যা সরকারি নিয়মনীতি বর্হিভূত। ওই জমি বন্তোবস্ত পাওয়ার জন্য ১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ সেলিম আবেদন করলে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আঃ গফুর মাঝি তার মেয়ের নামে লাইজু বেগমের কাছ থেকে নোটারী স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নেয়া উক্ত জমিতে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও লোকজন নিয়ে ঘর নির্মান করতে আসে। আঃ গফুরের অবৈধ ঘর উত্তোলন বন্ধের দাবীতে ১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ সেলিম এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে পৌর তশিলদার সরজমিনে তদন্তে গিয়ে উক্ত জমিতে আঃ গফুর মাঝিকে ঘর উত্তোলন বা দখল থেকে বিরত রাখেন এবং উক্ত সরকারি সম্পত্তি, দখল ও ক্রয় বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মর্মে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আঃ গফুর মাঝি বাদী হয়ে স্থানীয় সেলিম, সালাহউদ্দিন, জাকির, মাইনুদ্দিন, জাকিরের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

সাইন বোর্ড টানিয়ে দেওয়ার দীর্ঘ দুই বছর পর গত ১৫-১০-২০২২ইং তারিখে আঃ গফুর মাঝি দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র, প্রায় শতাধিক লোকজন নিয়ে উক্ত জমির সরকারী সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সেখানে জোরপূর্বক ঘর উত্তোলন করে। ১৬-১০-২২ইং তারিখে এ ব্যাপারে ১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ সেলিম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উক্ত আবেদনটি ভোলা সদর উপজেলা ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড বরাবরে প্রেরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। কিন্তু আবেদন করার ১০ দিন পেরিয়ে গেলো এখন পর্যন্ত সরকারী জমিতে জোরপূর্বক ঘর উত্তোলনকারী ভূমিদস্যু আঃ গফুর মাঝির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সরকারী জমিতে ঘর উত্তোলনে বাঁধা প্রদানকারী ১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ সেলিম ও অন্যান্য এলাকাবাসীকে আঃ গফুর ও তার লোকজন মামলা দিয়ে হয়রানী করবে বলে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। সরকারি জমিতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ঘর উত্তোলনকারী আঃ গফুর মাঝির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।

১নং দিশারী গুচ্ছগ্রামের সভাপতি মোঃ সেলিম বলেন, আঃ গফুর মাঝি লাইজু বেগমের কাছ থেকে একটি নোটারী স্ট্যাম্প নিয়ে সরকারি বন্দোবস্ত জমিতে জোরপূর্বক ঘর উত্তোলন করেছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আঃ গফুর মাঝি এই ঘর নির্মান করে। আমরা বাঁধা দেওয়ায় আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এব্যাপারে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আঃ গফুর মাঝি বলেন, এটি আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। তাই ওই জমিতে আমি ঘর নির্মান করছি।

এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারের জমি কেউ দখল করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড মোঃ আলী সুজা বলেন, আঃ গফুর মাঝির বিরদ্ধে সরকারি জমিতে ঘর উত্তোলনের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৪:২৯   ৬৯ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


আইপিএলে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড
উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে জনসভা ও পথসভা করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইউনুছ
চরফ্যাসনে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় সাংবাদিক পরিবারের ওপর হামলা আহত-৪
আজ পহেলা বৈশাখ
ইসরায়েলে ইরানের হামলা শুরু
চর কুকরি মুকরি দ্বীপঈদের পর বেড়াতে যাবেন যেখানে
ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করতে গিয়ে বিপাকে বিপাশা
যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপনে গোলাগুলি, আহত ৩
সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
চরফ্যাশনে ঈদের আগে পাকা ঘর পেলেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার

আর্কাইভ