আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস এর ধারাপাত-ফজলুল কাদের মজনু

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস এর ধারাপাত-ফজলুল কাদের মজনু
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২





১.   আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক প্রস্তুতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যতিত অন্য কোন নেতার চিন্তা ভাবনা ছিল এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৯৪৭ এর রেড ক্লিপ রোয়েদাদ এর ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার সীমানা নির্ধারণ এবং পরবর্তী ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতা মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীকে তৎকালীন মুসলীমলীগ সরকার পূর্ব বাংলায় আসতে বাধা প্রদান করার থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্থান এর অস্থিত্ব ও পূর্ব বাংলা জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। আরো আগে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে আলাদা ডমিনিয়ন এর মর্যাদা না দেওয়া, শেরে বাংলা ফজলুল হক ও শরৎ বোশ এর যুক্ত বাংলার পরিকল্পনা কংগ্রেস, মুসলীমলীগ এর ষড়যন্ত্রের ফলে ভেস্তে যাওয়ার বঙ্গবন্ধু মনে রেখাপাত করেছিল।

আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস এর ধারাপাত১৯৪৭ এ ভারত থেকে পূর্ব বঙ্গে ফিরে এসে তৎকালীন মুসলীমলীগ এর প্রগতিশীল যুবকর্মী বাহিনীর সাথে বঙ্গবন্ধুর ছিল নিবির সম্পর্ক। এই কর্মীদের নিয়ে প্রথম ১৯৪৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান খান বাহাদুর আবুল হাসনাত এর বেচারাম দেউরির বাসভবনে পাকিস্থান গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে দুই একটি সভা করার পর তার কার্য্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে একটি কার্য্যকর মুসলীমলীগ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষে প্রাক প্রস্তুতি স্বরূপ ১৯৪৮ সনের ৪ঠা জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলের এক ছাত্র সভায় বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্থান মুসলীম ছাত্রলীগ।

১৯৪৮ সনের ২৫ শে ফেব্র“য়ারী পাকিস্থান এর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবী জানান। ১৯৪৮ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারী ভোলার কৃতি সন্তান সামসুল আলমকে আহবায়ক করে রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষায় প্রশ্নে সচিবালয়ের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রজনতার মিছিলে পুলিশ এর বাধাও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ৬৯ জন ছাত্র গ্রেফতার হন।

পূর্ব বাংলার মূর্খমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্থানের গভর্নর জেনারেল মোঃ আলী জিন্নার পূর্ব বাংলায় আগমন নিঃকণ্ঠক করার জন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে এক আপোষ চুক্তি করেন। ১৯৪৮ সনের ১৬ই মার্চ শেখ মুজিব এর নেতৃত্বে ও সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় এক ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব তার বক্তিতায় বলেন খাজা নাজিমুদ্দিন কে চিনি তিনি চুক্তির মর্যাদা রাখবেন না। অবশেষে ১৯শে মার্চ রমনা সেকোর্স ময়দানে গভর্ণর জেনারেল মোঃ আলী জিন্না তার বক্তিতায় বল্লেন উদূ হইবে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।


অতঃপর সেই থেকে শুরু বাংলার রাজনীতির নূতন দিক পরিবর্তন এর। ১৯৪৯ সালে শেখমুজিব জেলে অন্তরীণ। শেখ মুজিব জেলের বাহিরে থাকতেই মুসলীমলীগ এর তরুন কর্মীদের কে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন একটি কর্মী সম্মেলন করার জন্য। যথারীতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় একটি অভ্যর্থনা কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সনের ২৩শে জুন সকাল ১০টায় কে এম দাস লেনের বশির সাহেব এর রোজ গার্ডেনের বাসভবনে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। উক্ত সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্থান আওয়ামী মুসলীমলীগ নামে একটি নূতন দল গঠিত হয়। সভাপতি করা হয় মাওলানা ভাষানীকে, সাধারণ সম্পাদক হন টাংগাইল এর সামসুল হক। জেলে বসে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। সেই থেকে তৎকালিন পূর্ব বাংলায় মুসলীমলীগ বিরোধী প্রথম বিরোধী দলের যাত্রাশুরু । জেল থেকে বের হয়েই সারা বাংলায় সংগঠন এর কাজে ঝাপিয়ে পড়েন শেখ মুজিব। কিছু দিনের মধ্যে পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলো আওয়ামী মুসলীম লীগ। ১৯৪৯ সালের ১৫ই আগষ্ট আওয়ামীলীগের নিজস্ব পত্রিকা হিসাবে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশিত হলো। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্থানের মুসলীমলীগ দলীয় শাসক গোষ্টি উদূকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণার পর ১৯৫১ সনে ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫২ সনের ২১ শে ফেব্র“য়ারী হরতাল বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচী প্রদান করা হয়। শেখ মুজিব কে বন্দি অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ৮ই ফেব্র“য়ারী শেখ মুজিব আন্দোলনের প্রশ্নে আপোষ এর বিরুদ্ধে ছিলেন। শেখ মুজিব যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার পরামর্শ দেন। ১৯৫২ সনের ২১শে ফেব্র“য়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র জনতা মিছিলে নামে। মিছিলে পুলিশ এর গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, প্রমুখ। মুহূর্তে রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। ১৯৫২ সালে পূর্ব বঙ্গ ব্যবস্থাপক সভা ভেঙ্গে দেয়া হয়। আন্দোলনের মুখে ১৯৫৪ সালে নির্বাচন ঘোষণা করা হলো। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলো। আওয়ামী মুসলীম লীগ এর প্রণীত ২১ দফাই যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইসতে হারে পরিণত হয়। এয়িনেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী ও মাওলানা ভাসানী, সংগঠক শেখ মুজিব। নির্বাচনের ফলাফল সর্ব মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে সাধারণ আসনের ২৩৭টি মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে। মুসলীমলীগ মাত্র ৯টি স্বতন্ত্র ৫টি।

পূর্ব বাংলার শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। শেরে বাংলা কলকাতা সফরে গিয়ে পাকিস্থান এর সার্ভভৌমত্ব এর উপর আঘাত করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে কেন্দ্রেয় সরকার অভিযোগ করেন। ইতিমধ্যে শেখ মুজিব সহ অনেকেই পূর্ব বঙ্গ মন্ত্রি সভায় অন্তরভূক্ত করা হয়। মন্ত্রিসভা গঠন এর পর পরই নারায়নগঞ্জের আদমজী জুট মিলের বাঙ্গালি বিহারী দাঙ্গা বাধান হয়।


শেরে বাংলায় কলিকাতার বক্তব্য কে অজুহাত ও বাঙ্গালী বিহারী দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে শপথ নেয়ার ১৫ দিন এর মাথায় ৯২ ক ধারা মতে প্রাদেশিক সরকার ভেঙ্গে দিয়ে গভর্নর এর শাসন জারী করে কেন্দ্রীয় সরকার শেরে বাংলাকে কে এম দাস লেনের বাড়ীতে নজরবন্দী করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় গিয়েই ২১শে ফেব্র“য়ারী সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করেছিল। গভর্নর ইস্কান্দায় মীর্জা তাও বাতিল করে দেন। ১৯৫৪ সনে ৩১ শে মে প্রথমে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক জন নিরাপত্তা আইনে নিসিদ্ধ করা হয়। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর ১৯৫৪ সালের ১২ নভেম্বর জুরিখ চলে যান চিকিৎসার জন্য। ১৯৫৪ সালের ১৩ নভেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান এর জামিন হলেও অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই সনের ১৮ই ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়াদীর প্রচেষ্টায় শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্ত হন। ১৯৫৫ সনের ২১ সেপ্টেম্বর সদর ঘাট এর রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন বসে। আওয়ামীলীগ সাধারণ নির্বাচন এর দাবী তুলে। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠ^ন হিসেবে দলকে গড়ে তোলার মানশে মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী প্রস্তাব তোলেন। কাউন্সিলে উপস্থিত সকলে এই প্রস্তাব কে সমর্থন করেন। এই অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসনী। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান গণ-পরিষদে সংবিধান গৃহিত হয়। পরিষদে সে দিন সংবিধান এর উপর আলোচনা করতে গিয়ে শেখ মুজিব বলেছিলেন পূর্ব বঙ্গের নাম পূর্ব পাকিস্তান রাখার অধিকার এই পরিষদের নাই এবং সংবিধানে তা বৈধ নয়।

১৯৫৬ সালের ২৩ জুলাই পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্থানের পূর্ণ সায়ত্বশাসন দাবী করেন। ইতিপূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালের ৩১ মে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদক এর সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন এর সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৫৭ সালের ১৩ জুন শাবিস্থান হলে আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। ওয়াকিং কমিটি নূতন করে গঠন করা হয়। মাওলানা ভাসানী পদত্যাগ করলেও তাকেই সভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে শেখ মুজিব পুনঃ নির্বাচিত হন। মাওলানা ভাসানী পদত্যাগে অনর থাকাতে শেখ মুজিবুর রহমানকেই দলের পরিপূর্ণ হাল ধরতে হলো। মাওলানা তর্ক বাগিশকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৫৮ সনের ১লা এপ্রিল পূর্ববঙ্গ আতাউর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হলো। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী শেখ মুজিবকে কয়েকটি দেশে সফরে পাঠালেন এবং বল্লেন ভবিষ্যতে নেতৃত্ব তাকেই দিতে হবে। সে কথাই পরবর্তী কালে সত্যে পরিণত হলো।


২ .  ১৯৫৮ সালের ২৭ শে অক্টোবর জেনারেল আইউব খান পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে বসেন। ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হলেন।

মুক্তি পেলেন ১৯৫৯ সনের ১৭ ডিসেম্বর। ১৯৬২ সনের ৩০ জানুয়ারী হঠাৎ করেই মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী গ্রেফতার হলেন। গ্রেফতার এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আইউব খানের অগণতান্ত্রিক শাসন এর বিরুদ্ধে ৯ জন বিরোধী দলের নেতা ৬২ সালের ২৪ জুন এক যুক্ত বিবৃতি দান করেন। এই ৯ নেতার মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম।

১৯৬২ সালের ১৯ আগস্ট হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী কে মুক্তি প্রদান করা হয়। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ভৈরুবের একটি হোটেলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী ইন্তেকালে করেন। তার মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভেঙ্গে পড়েন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বর বাড়ীতে এক বিশেষ সম্মেলন ডাকেন।


৩.  সম্মেলন জেলা মহকুমা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬৪ সালের ১লা মার্চ সভার সিদ্বান্ত অনুসারে আওয়ামী লীগ ঘোষনা দিয়ে দলের পুনরউদ্ধার ঘটায়। এরই ধারা বাহিকতায় একের পর এক কর্মসূচী নিয়ে আওয়ামী লীগ জেলা, থানা, গ্রাম পর্যায়, সংঘঠিত হতে থাকে। জেনারেল আইউব এর স্বৈরাচার বিরোদী গনতান্ত্রিক আন্দোলন দ্রুতনাগতিতে এগিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৬৫ সালে মৌলিক গনতন্ত্র এর ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৯৬৫ সালে মৌলিক গনতন্ত্র এর ভিত্তিেেত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে ফাতেমা জিন্নাকে প্রার্থী করা হয়। নির্বাচনে শেখ মুজিব সারা দেশে সফর করে দলকে সংগঠিত করায় সাথে সাথে জনগনকে ঐক্য বদ্ধ করতে সক্ষম হন। মৌলিক গনতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচনে ফাতেমা জিন্না হেরে গেলেও দেশে আইউব বিরোধী একটা আবহ তৈরী হয়। ১৯৬৫ সনের পাক ভারত যুদ্ধের পর শেখ মুজিব এর উপর একের পর এক জেল নির্যাতন চলতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্র“য়ারী নেজামে ইসলাম পার্টির প্রধান লাহোরের চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাস ভবনে পাকিস্তানের সকল বিরোধী দলের সভাবসে। বিরোধী দলের এই বৈঠকে শেখ মুজিব ঐতিহাসিক ৬দফা দাবী শেষ করেন। বৈঠকে অনান্য বিরোধী দল স্বায়ত্বশাসন কথা না তোলার জন্য আহব্বান জানান। তিনি লাহোরে সাংবাদিক সম্মেলন করে ৬দফা ঘোষনা করেন। ১৯৬৬ সালের ৭মার্চ পাকিস্তানের সকল পত্র পত্রিকায় ৬ দফার খবর ছাফা হয়। ১১ মার্চ ঢাকায় ফিরে এসে বিমান বন্দরে সাংবাদিক সম্মেলনে ৬ দফার ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি ৬ দফা কে বাংঙ্গালীর বাচার দাবী বলে উল্লেখ্য করেন। ১৯৬৬ সালের ১২ মার্চ আইউব খান ঢাকায় এসে এক বক্তব্যে স্পষ্ট করে বললেন, আওয়ামী লীগের ৬ দফা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের হুমকি স্বরূপ। ১৯৬৬ সালের ১৩ মার্চ  আওয়ামী লীগ এর ওয়াকিং কমিটি ও ৬ দফা অনুমোদন এর জন্য পে করা হয়। দলের সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ তর্ক কাউন্সিল বিরোধিতা করে বৈঠক ত্যাগ করেন। পরে সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কাওসিল অধিবেশন অনুমোদন নেয়ায় মাধ্যমে ওয়াকিং কমিটি ৬ দফা অনুমোদন করে। ১৯৬৩ সালের ১৮ মার্চ মতিঝিলের হোটেল ইডনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা বিপুল সমর্থনে অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯ মার্চ দলের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে দলের সভাপতি জনাব তাজউদ্দিন আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই সম্মেলন এর মধ্যে দিয়েই বঙ্গবন্ধু দলে তার লড়াকু টিম তৈরী করে ফেলতে সক্ষম হন। ১৯৬৬ সালের ২০ শে মার্চ ৬ দফার পক্ষে ঢাকার পল্টন ময়দানে প্রথম জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ধীরে ধীরে ৬ দফা ভিত্তিক গন আন্দোলন রূপ নেয় সারা পূর্ব পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধু সারা পূবৃ বাংলা সফরে বিভিন্ন পর্যায় জেল জুলুমকে উপেক্ষা করে জনসভা করে। ৬ দফা বাংলার ঘড়ে ঘড়ে পৌছে দেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি জনসভায় বলতেন। ওরা বেশি সময় দিবে না। পাশা পাশি ৬ দফা প্রচারে ছাত্রলীগের ভূমিকা দিল সবচেয়ে বেশি। ২০ শে মার্চ এর পর শেখ মুজিব সময় পেয়ে ছিলেন মাত্র পাচঁ সপ্তাহ। ৩৫ দিনে তিনি ৩২ টি মুল জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন জেলা মহকুমা সফর এর শেষ পর্যায় ১৯৬৬ সালের ৭ মে ওয়াকিং কমিটির সভায় তিনি ও ৬ দফা আন্দোলনের কর্মসূচী নুতন করে তৈরী করেছেন। ৮ই মে তিনি নারায়নগঞ্জে বিশাল জনসভা করলেন। মুলত এটাই ছিল ৬ দফা দাবীতে তার শেষ জনসভা। তিনি জানতেন এর পরে আর সময় পাবেন না। ঐ দিনই গভীর রাতে ৩২ নং বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে সরাসরি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দেশ রক্ষা আইনে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ দার করানো হয়। অনান্য আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রেীয় নেতৃব্ন্দৃকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু এমন ভাবে সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছেন যে, যাতে করে তৃনমুল এর নেতারাই আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে নিতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলই সমর্থন করে নাই। প্রত্যেকেই এর বিরোধীতা করেছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর নিজ দলের অনেক নেতাও দল থেকে বের হয়ে গিয়ে বিরোধীতা করেছিল। তার পরও ৬ দফা যে ঢেউ বঙ্গবন্ধু তৈরী করে ছিলেন তা গ্রাম পর্যন্ত আছরে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু জেলে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জেলে, তাদেরকে রেখে ১৩ মে পল্টনে জনসভা হয় আওয়ামী লীগ এর ঢাকে, উপস্থিত জনতার উপস্থিতিতে প্রমান হয় ৬ দফায় কোন বিকল্প নাই। ঐ জনসভাতেই ৭ জুন সাড়া দেশে হরতাল এর ডাক দেয়া হয়। ৭ই জুন এর হরতালে তেজগা শ্রমিক মুনুমিয়া পুলিশ এর গুলিতে নিহত হন।  এতে বিক্ষোভ এর প্রবনতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরে। সারাদেশে, ঐ দিনই নারায়নগঞ্জে পুলিশের গুলিতে প্রান হারান ৬ জন শ্রমিক। ঢাকা নারায়নগঞ্জ সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। সরকার সন্ধ্যায় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ কার্পূ জারী করেন। গ্রেফতার করেন অসংখ্য নেতা কর্মীকে। ১৯৬৬ সালের ১৬ জন আওয়ামী লীগ এর তৃতীয় সারীর নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়ে যান। ১৫ তারিখ ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয় । মাওলানা ভাসানীসহ পিভিন পন্থী নেতৃবৃন্দ ৬ দফাকে সি, আইএর উক্সান বলে বিবৃতী প্রদান করা সত্তেও আন্দোলন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। গভর্নর মোনায়েম খান শত চেষ্টা করেও ৬ দফা আন্দোলন স্থিমিত করতে সক্ষম হতে পারলেন না। ১৯৬৭ সালের ৩ জুন মোনায়েম খা ঢাকায় এক সম্মেলন ইংগিত করলেন যে কিছু সরকারী আমলা ও সেনাবাহিনীর সদস্য এই ৬ দফার সাথে জড়িত। তারা ধংসাত্মক পথে পা দিয়েছেন। ব¯ত্তত তার এই বক্তব্য আগরতলা ষড়যন্ত মামলায় ইংগিত স^রূর। ১৯৬৭ সালে কারাচিতে আইউবখান একই ইংগিত করলেন। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারী সরকারী প্রেসনোটে উল্লেখ করা হলো ভারতীয় হাই কমিশনের ফাষ্ট সেক্রেটারী মিঃ ওঝার সঙ্গে যোগাযোগে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার যে ষড়যন্ত হয়েছিল সরকার তার বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যাবস্থা নিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদেরকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্তভূক্ত করা হলো। মামলার শিরোনাম হলো রাষ্ট্র (পাকিস্তান)  বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ জানুয়ারী শেখ মুজিবকে মুক্তির কথা জানিয়ে দিয়ে জেল গেইটে বের করে এনে গভীর রাত্রে পুনরায় গ্রেফতার করে ঢাকা সেনা নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৮ সনে আওয়ামী লীগের ডাকে শেখ মুজিবসহ সকল বন্দির মুক্তি দাবী  করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলায় আসামীদের বিচার করার জন্য সেনা নিবাশে বিশেস আদালত গঠন করা হয়। ইতি মধ্যে ৬ দফা সংবলিত ১১ দফার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর নেতৃত্বে ছাত্র জনতার আন্দোলন ২৪ জানুয়ারী গনঅভ্যূত্থানে পরিণত হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর নেতৃত্বে ৬ ফেব্র“য়ারী চুরান্ত ঘোষনা দেয়া হয়। আগরতলা মমলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। ১৭ ফ্রেব্র“য়ারী সেনানিবাসে আগরতলা মমলার আসামীদের উপর সেনা বাহিনী গুলি চালায় সাজেন্ট জহুর গুলিতে নিহত হন। সাজেন্ট ফজলুলহক আহত হন। খবরটি ঢাকায় ছড়িয়ে পরলে প্রচন্ড গনবিস্ফোরন ঘটে। ঢাকাসহ সারা দেশ প্রজ্জালিত হয়ে উঠে, সারা দেশ থেকে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। আগারতলা ষড়যন্ত মামলার বিচারক এর বাসায় ছাত্র জনতা হামলা চালায়, প্রদেশেএর ১০ জন মন্ত্রির বাসায় আগুন দেয়া হয়। ১৮ তারিখ কারফিউ বলবৎ করা হয়। ছাত্র জনতা কারফিউ ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে।

ফজলুল কাদের মজনু সভাপতি,  ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ১৯৬৯ এর ২১ ফেব্র“য়ারী আইউব খান বেতার ভাষনে বল্লেন তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে দাড়াবেন না। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হলো। ২২ শে ফেব্র“য়ারী বন্দি শেখ মুজিবসহ সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৩ শে ফেব্র“য়ারী মুক্ত মুজিবকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রমনার ময়দানে গণ সং বর্ধনা প্রদান করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর পক্ষ থেকে মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ ২৬ শে ফেব্রুয়ারী রাওয়াল পিন্ডিতে গোল টেবিল বৈঠক বসে। গোল টেবিল বৈঠকে ৬ দফা আলোচ্য বিষয়। বঙ্গববন্ধুকে ৬ দফার একটি দফা প্রত্যাহার এর জন্য বলা হয়। বঙ্গবন্ধু তা না করে দেন। ফলে আলোচনা ভেঙ্গে যায়। ২৫ শে মার্চ আইউব খানের পতন ঘটে। জেনারেল ইয়াহীয়া ক্ষমতা দখল করেন। ২৮ শে মার্চ ইয়াহিয়া পঃ পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল করেন। ১৯৭১ এর ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদ ২২ শে অক্টোরব প্রাদের্শিক পরিষদ এর নির্বাচন ঘোষণা করেন। ১লা জানুয়ারী থেকে প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি দেন। ১৯৭০ এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে নির্বাচনি প্রচার সভা শুরু করেন। ১৯৭০ এর ৫ ডিসেম্বর মরহুম হোসেন শহীদ সোহ রান্ডার্দীর মৃত্যু বার্ষিকতে মাজার সংলগ্ন আলোচনা সভায় দাড়িয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বললেন আজ থেকে এই দেশের নাম পূর্বপাকিস্তান নয় পূর্ব বাংলা ও নয়। এই দেশের নাম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার লক্ষে পৌছার জন্য দেশের নাম করণ ও সম্পন্ন করলেন বঙ্গবন্ধু। জাতীয় পরিষদ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু অংশ গ্রহণ করা নিয়ে ইতি মধ্যেই ছাত্রলীগ এর মধ্যে বির্তক শুরু হয়। ইয়াহিয়ার এল.এফ ও অধিনে নির্বাচনে কি সুফল আসবে তা নিয়ে মতবেদ তৈরী হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনের অংশ গ্রহণ এর বিষয় নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের এক বর্ধিত সভা ১৯৭০ এর জুন মাসে বলাকা বিলডিং ছাত্রলীগ এর কার্য্যালয় অনুষ্ঠিত হয়। আমি সেই সভায় ভোলা মহুকমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি। সভায় এক অংশ এল. এফ ও অধিনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করাকে সঠিক হয় নাই বলে বক্তব্য দেন। আর এক পক্ষ সঠিক হয়েছে বলে বক্তব্য প্রদান করেন। সর্বশেষ কোন সিদ্ধান্ত  না হওয়াতে, সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুকেই জিজ্ঞাস করা হউক কেন তিনি এল. এফ ও অধিনে এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেন। এক যোগে সকল ছাত্র নেতারা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং ধানমন্ডির বাসায় মিছিল করে যান। বঙ্গবন্ধুর বাসার পৌছার পর বঙ্গবন্ধু তার দোতালা শিরি দিয়ে নেমে আসছিলেন আর গাইতে ছিলেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি কবি শুরুর এই গানটি। এক পর্যায় ছাত্রলীগ এর তৎকালীন প্রচার সম্পাদক শহীদ স্বপন কুমার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেন এই গান কেন গাইলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন তোমরাও আমার সাথে এই গান গাও। এটাই হলো স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। বঙ্গবন্ধুর এই একটি বাক্য সেদিন ছাত্রলীগের নেতাদের জিজ্ঞাসায় সকল সমাধান হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু বললেন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছি একটি অথরিটি অর্জন করার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। জনগনের মেন্ডেট নেয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধুর সেদিন এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তীতে সঠিক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। জাতীয় পরিষদ এর ১৬৯টি আসন এর মধ্যে আওয়ামীলীগ ১৬৭ টি আসন জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। প্রাদেশিক পরিষদ এর সর্বমোট ৩১০ টি আসন এর মধ্যে আওয়ামীলীগ ২৮৭ টি আসন লাভ করে।

নির্বাচনে ফলাফল পাকিস্তানী শাসক গোষ্টির টনক নড়ে ওঠে। ২৬ শে জানুয়ারী ভূট্রো ঢাকায় আসলেন। ২৭ জানুয়ারী হোটেল ইন্টাকনে মুজিব ভূট্রো বৈঠকে বসলেন। ভূট্রো বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করলেন ৬ দফার ব্যাপারে  ছাড় দেয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু বল্লেন ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসেনা কারন জনগন ৬ দফার উপর মেন্ডেট দিয়েছে। একটি দফাও প্রত্যাহার করার অধিকার জনগন কাহাকে দেয় নাই। ১লা মার্চ ইয়াহিয়া পূর্ব ঘোষিত ৩রা মার্চ জাতীয় সংসদ এর অধিবেশন স্থগিত করেন। এই ঘোষনার পর ঢাকা সহ সাড়াদেশ ছাত্র জনতা বিক্ষোভ ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তৎক্ষনিক শান্তিপূর্ন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অচল হয়ে পড়ে সারা দেশ। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নির্দেশে পরিচালিত হয় সাড়া বাংলাদেশ। কার্য্যত তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জন সভায় চুড়ান্ত সংগ্রামের ঘোষনা দেন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ভাষনের মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংঙ্গালীর জাতিকে তৈরি করলেন। মহা মুক্তির সংগ্রামে১৯৭১ ২৫শে মার্চ রাত্রিতে বর্বর পা হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে বাংঙ্গালী জাতির উপর তাৎক্ষনিক বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেস যোগেও টেলিগ্রাম এর মাধ্যমে স্বাধীনতার আসোগ ঘোষনা পৌছে দিলেন। সাড়া বিশ্বে আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, একটি পাক হানাদার বাহীনি জীবিত থাকতে ও প্রতিরোধ চালিয়ে হানাদার মুক্ত বাংলাদেশ  গড়ে তুলতে সমস্ত্য জাতিতে আহব্বান জানান। সেই থেকে ৯ মাসের প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসাবে ১৬ ডিসেম্বর জিয়া, অহন, আব্বাসদের জাতিয় হাজার বৎসরের আখাংখার প্রতিফলন গঠলো। স্বাধীনতা ঘোষনার পর ১০ এপ্রিল নির্বাচিত হন প্রতিনিধিগন এক সভায় মিলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনাকে সমর্থন ও অভিন্দন জানিয়ে গ্রহন করেন আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র। এই গন পরিষদেই বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপুস্তিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহাম্মেদ কে প্রধান মন্ত্রী করে পরিষদ ঘঠন করা হয়। ১৭ই এপ্রিল শপথ গ্রহন করে মুজিব নগর সরকার ১০ই জানুয়ারী পাকিস্তানের কারগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন স্বদেশে ফিরে এলেন বাংঙ্গালী জাতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার মানষে পূনগঠন কাজ সমাপ্ত করে বঙ্গবন্ধু যখন দৃঢ় পায়ে অগ্রগতির পথে জাতিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিললেন ঠিক সেই মূহর্তে বাংলার স্বাধীনতার শত্র“রা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন দেশের বাইরে অবস্থান করায় কারনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা থেকে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর উচ্চ বিলাসী সামরিক চক্র বাংলার স্বাধীনতা ও স্বকিয়তাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। ঠিক সেই এক কঠিন সময়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেথে পত্যাবর্তন করেন বরং দলের দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন সেই থেকে আওয়ামী লীগের নতুন অভিযান শুরু। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এর মধ্য দিয়ে দলের নেতা কর্মী বাহিনীর সকল ভয়ভীতি যেন এক নিমেশেই উড়ে গেল। জেগো উঠলো দলের নেতা কর্মীরা।

জিয়ার পতন, এরশাদের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন ৯০ এর গন আন্দোলন এরশাদের পতন এর মধ্য দিয়ে নূতন বিজয় সুচিত হলো। এই বিজয় হোচট খেলো খুনি জিয়া বি.এন.পির চক্রান্তের কাছে। পরবর্তীতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে ১৯৯৬ ফেব্রুয়ারী মার্চের গণ আন্দোলন, অসহযোগ, জনতার মঞ্চকে খিড়ে গন অর্ভূস্থান এবং খালেদা জিয়ার পদত্যাগ জাতীয় ইতিহাসের মোর ঘুড়িয়ে দেয়।

অবশেষে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব বিজয় লাভ করে ঐক্যমতের সরকার গঠন করে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ৫ বছর শাসন আমলে এক সম্ভবনার দেশ হিসাবে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। দেশের সামনে উল্লেখিত হলো অপার সম্ভাবনার এক স্বর্ণধুয়ার, অনেক বাধা বিবাত অতিক্রম করতে হয় রাষ্ট্র পরিচালকা করতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। মাঝ পথে পুরানো ষড়যন্ত্র চক্রান্ত এর কারণে ২০০১ এ বিপত্তি ঘটে আওয়ামীলীগের। ২০০১ এর পর দেশ যখন দুরবৃত্ত কবলিত হয় এবং বি.এন.পির জামাত জোটের ৫ বৎসরের দু: শাসন এর ফলে জাতির সম্ভবনার অপমৃত্যু ঘটে। তখন আবার জাতীয় বোধোদয় হয় পুনরায় দ্বিতীয় বারের মতো জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে ২০০৮ এর ২৯ শে ডিসেম্বর একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ট নির্বাচনে এর নেতৃত্বে মোহো জোট সরকার ঐতিহাসিক আওয়ামীলীগ বিজয় অর্জন করে। এরই ফলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনর বাংলা গড়ার লক্ষে ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বি.এন.পি গোবরলো তাদেরকে বিজয় লাভের গ্যারান্টি দিলে নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহণ করবে, কি অদভুত দাবী। দেশের সংবিধান এর ধারাবাহিকতা ও অগ্রযাত্রা কে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে অবশেষ নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রতিদয় মধ্যে দিয়ে জাতি এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন এর মহিসোপানের দিকে। ২০২০-২১ এর মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত করার মানষে ইতিমধ্যেই অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হোয়েছে। এর মধ্যে দিয়েই আওয়ামীলীগ আজ তার প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পালন করছে।

জয় বাংলা  জয় বঙ্গবন্ধু

লেখক:

ফজলুল কাদের মজনু

সভাপতি,

ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৩:৫৩   ১৩৭ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


ভোলায় মহানবী (সা.) কে কটুক্তিকারীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান
শশীভূষণ বাজারে অগ্নিকান্ডে তিন দোকান পুড়ে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলার কৃষকরা ঝুঁকছেন ক্যাপসিকাম চাষে
স্মার্টফোনে ই-লাইসেন্স দেখিয়েও গাড়ি চালানো যাবে
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় সৌদি সুন্দরী
মনপুরায় রোগীদের সহায়তার ৩ লক্ষ টাকার চেক বিতরন ॥
ভোলা ইসলামী আন্দোলনের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল।
মনপুরায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
ভোলায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন

আর্কাইভ