বাঙালির বাতিঘর শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন।

প্রথম পাতা » জাতীয় » বাঙালির বাতিঘর শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন।
মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১



ভোলাবাণী ।।সম্পাদকীয়।। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও তিনি অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে তার নেতৃত্বে আজ বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতার কন্যা, বাঙালির বাতিঘর শেখ হাসিনার আজ ৭৫তম জন্মদিন।

জাতির পিতার কন্যা, বাঙালির বাতিঘর শেখ হাসিনার আজ ৭৫তম জন্মদিন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন। তখন বিদেশে ছিলেন শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা।১৯৮১ সালে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯০ এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়। বিজয় হয় গণতন্ত্রের।১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে জাতির নেতৃত্ব।

এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই লড়াই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের, উদার আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার।

শেখ হাসিনা তার এক লেখায় বলেছেন, ‘পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি’ এবং তিনি যথার্থই বলেছেন যে, তার চলার পথটি বরাবরই বন্ধুর। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে তাকে ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে দেশকে আরও বেশি করে জাপটে ধরল পাকিস্তান প্রেমীরা, যেমনটা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই লড়াই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের, উদার আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার।

তার শাসনামলে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির স্থিতিশীলতা এসেছে, মানুষের মনে একটা উন্নয়ন স্পৃহা তৈরি হয়েছে। তাই যে বিশ্বব্যাংক প্রায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এ দেশ থেকে, সে নিজ থেকেই সেই দেশকে দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেল স্বীকৃতি দিয়ে ফিরে আসে উন্নয়নের বড় অংশীদার হতে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে হতদরিদ্র কমেছে, দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি নিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে চলতে শুরু করেছে।

জাতির পিতার কন্যা, বাঙালির বাতিঘর শেখ হাসিনার আজ ৭৫তম জন্মদিন।

মানুষের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। কিন্তু এ মুহূর্তে সবচেয়ে অনিরাপদ শেখ হাসিনা নিজে। যারা বাংলাদেশকে পেছনে দেখতে চায়, সাম্প্রদায়িক দেখতে চায়, জঙ্গি দেখতে চায় তারা সবাই একজোট তাকে হত্যা করার জন্য। কারণ শেখ হাসিনা মানে যুদ্ধাপরাধের বিচার, শেখ হাসিনা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলা দেশ, শেখ হাসিনা মানে উদার ও প্রগতির বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাথা উঁচু করে চলা বাংলাদেশ।একাত্তরের পরাজিত শক্তি যেমন লক্ষ্যে অবিচল তাকে তার পিতার পরিণতি ভোগ করাতে, তৎপর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দেশ ও গোষ্ঠীও। শেখ হাসিনার সামনে তাই পথ হলো অবিচলভাবে এগিয়ে চলা। তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা জানেন। তিনি এদেশের তারুণ্যের স্বপ্ন বোঝেন।

তাই জাতির পিতার কন্যার জন্মদিন উৎসবের সাথে পালনের সময় বাংলাদেশের আত্মার গভীরে গিয়ে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করা প্রয়োজন। আজ আমাদের বুঝতে হবে কোথায় চলেছি আমরা।

সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার যে আবেগ-নির্ভর শক্তি তাকে মোকাবিলা করার উপায় কী? যারা গণতান্ত্রিক উদার বাংলাদেশ চান, শুভ নিয়তির প্রতি যদি তাদের বিশ্বাস থাকে তবেই বাংলাদেশের আত্মা, যা গঠিত হয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে। তবেই তার চেতনায় চলার লড়াইটা সার্থকভাবে চালানো সম্ভব হবে।

শেখ হাসিনা কী চান সেটা বোঝাটাই বড়। একদিকে শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন, যার মাধ্যমে এক নতুন রাষ্ট্রীয় পরিচয় পাবে এ দেশের মানুষ। অন্যদিকে তার দল সেই পরিচয়কে বড় করে তুলতে কতটা বৃহত্তর পরিসরের রাজনীতি করছে সে প্রচেষ্টাও তাকেই নিতে হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে চ্যালেঞ্জ বহুমুখী।

শেখ হাসিনা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলা দেশ, শেখ হাসিনা মানে উদার ও প্রগতির বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাথা উঁচু করে চলা বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়ন, সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থল সীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন।

সততা, নিষ্ঠা, রাজনৈতিক দৃঢ়তা; গণতন্ত্র, শান্তি, সম্প্রীতি ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের রূপকার তিনি, মানব কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ তিনি, আবার দলনেত্রী তিনি। বহুবার বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত’ কিন্তু বাংলাদেশ তো তাকে হারাতে চায় না। এ মুহূর্তে তার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু শেখ হাসিনা ধৈর্য ও সাহসের যেমন প্রতিমূর্তি, তেমনি দেশ ও জাতির বাতিঘর।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতি, দুইয়ের সাফল্যই নির্ভর করছে রাষ্ট্রীয় সুশাসনের ওপর। কেন্দ্র আর প্রান্তের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা আর আর্থিক অসাম্যর শিকড় বহু যুগ ধরে বিস্তৃত। বিস্তৃত আছে মানুষে মানুষে ব্যাপক বৈষম্য। উন্নত শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি আমরা। এ সময়ে যদি বৈষম্য বাড়তে থাকে, তা হলে কিন্তু রাজনৈতিক শৃঙ্খলাও আঘাতপ্রাপ্ত হবে।

প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে ভরসা আছে। এদেশে মানুষের শক্তির একটা নিজস্ব চাপ রয়েছে। চাপ আছে শান্তি আর স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও। তাই পেট্রোল বোমা দিয়ে মাসের পর মাস সহিংসতা করে, মানুষকে পুড়িয়ে যেমন প্রবৃদ্ধির চাকা থামানো যায়নি, তেমনি বিদেশি হত্যা করে, শিয়া-সুন্নি বিভেদের প্রচেষ্টাকেও ব্যর্থ করেছে মানুষই।

দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবার প্রগতির পথে ফিরেছে। এই অন্তর্নিহিত শক্তি আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা আর সেই ভরসা তৈরি করেছেন, করে চলেছেন শেখ হাসিনা।

যেকোনো সম্ভাবনায়, যেকোনো ক্রান্তিকালে বাংলাদেশকে ফিরতে হয় একাত্তরে। যদি আমরা সেই উদার, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্নটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তরিকভাবে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করি, তবে সামনের সময়টা বাংলাদেশের রূপান্তরের কাল।

প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্ব, সঠিক সিদ্ধান্ত ও অদম্য সাহসিকতায় বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে।
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

খলিল উদ্দিন ফরিদ ।।প্রকাশক ও সম্পাদক,ভোলাবাণী

বাংলাদেশ সময়: ১৩:২২:৪২   ১০৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী
১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ
জেলায় মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
১০৪তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
ভোলায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা
বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি পেলেন ১২০ র‌্যাব সদস্য
প্রধানমন্ত্রীর বাণী ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু
দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীনিত্যপণ্যের দাম নিয়ে গুজবে কান দেবেন না

আর্কাইভ