“ত্যাগ স্বীকারে কুরবানি”

প্রথম পাতা » সর্বশেষ সংবাদ » “ত্যাগ স্বীকারে কুরবানি”
শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১



 

“ত্যাগ স্বীকারে কুরবানি”

 

 

 

মোঃজাবের আল আব্দুল্লাহ: ‘কুরবান’ শব্দটি আরবী, এর শাব্দিক অর্থ হল, নিকটবর্তী হওয়া।কিন্তু আমরা প্রচলিতঅর্থে যে ‘কুরবানি’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি তা উর্দূ ও ফারসি ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

তবে আরবীতে একে ‘কুরবান’ই বলা হয়।যেমন কুরআন মাজিদে, রব্বে কারিম তিনটি জায়গায় এই কুরবান শব্দটি উল্লেখ্য করেছেন।

১নং. সূরা আল ‘ইমরানের ১৮৩ নং আয়াত, ২নং. সূরা মায়িদা’র ২৭ নং আয়াত, ৩নং.  সূরা আহক্বাফের ২৮ নং আয়াত।

 

 

কিন্তু হাদীসে ‘কুরবানী’ শব্দটি ব্যবহৃত না হয়ে তার পরিবর্তে ‘উযহিয়্যাহ’ এবং ‘যাহিয়্যাহ’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

ইসলামি পরিভাষায় ‘কুরবানি’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন ও তার ইবাদাতের জন্য পশু যবেহ করা হয়।

তবে বর্তমানে আমাদের নিকটে কুরবানীর পশুকেই বিশেষভাবে ‘কুরবান’ বলা হয়।

আর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ওই পশু জবাই করাকে উযহিয়্যাহ বলে। আর এই উযহিয়্যাহ থেকেই ঈদুল আযহা নামকরণ করা হয়েছে।

 

কুরবানির বিধান:

মুহরিম, বালেগ, সুস্থ মস্তিষ্ক ও নিসাব পরিমান সম্পদের অধিকারী প্রত্যেক মুসলিমের ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব।

কুরআনের ভাষায়,

 

   فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ

 ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।

 [সূরা কাওসার ২]

তবে এই কুরবানি অবশ্যয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে।

রব্বে কারিম বলেন,

 قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

 ‘বল,আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।

[সূরা-আন‘আম:১৬২-১৬৩]

সুতরাং সকল ইবাদাতের পাশাপাশি কুরবানিটাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে।

এবং কুরবানি করার ক্ষেত্রে আমরা যেন উদাসীন না হই কারণ রাসূল( সা.)বলেছেন,

 من وجد سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا

 ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’ ( ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩১২৩)

 

কুরবানির ফজিলত:

কুরাবানি করার ব্যাপক ফজিলত রয়েছে,

নিম্নে তার সংক্ষেপে কয়েকটি উল্লেখ করা হল,

১:- বিশ্বনবী (স.) কে প্রশ্ন করা হল, নবী! আমরা কুরবানি কেন করব?

বিশ্বনবী(স.) বললেন এটা তোমাদের জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নত।

তাই কুরবানি দাতা ইব্রাহিম(আ.) ও বিশ্বনবী (স.) এর আদর্শ বাস্তবায়নের নেকি অর্জন করবে।

২:- আর্থিক ত্যাগের মাধ্যমে কুরবানী দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন।

 যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :-

لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ

 আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে।[সূরা হজ্জ্ব:৩৭]

৩:- হাদিস শরিফে এসেছে, কুরবানি দাতা কুরবানির পশুর একেকটি পশমের বিনিময়ে একেকটি নেকি পাবে। যদিও তা ভেড়া দুম্বা হয়।

৪:- পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা এমন মধুময় আনন্দ যা কুরবাণীর গোশতের পরিমাণ টাকাও যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না!

 


কুরবানি দাতার করণীয় :

 সুন্নাহ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানীর পশু যবেহ না করা পর্যন্ত কুরবানীদাতার শরীরের কোন লোম বা চুল, নখ ইত্যাদি না কাঁটা ওয়াজিব। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে-

 عن أم سلمة رضى الله عنها أن النبى صلى الله عليه وسلم قال: « إذا رأيتم هلال ذى حجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره وأظفار

 উম্মু সালামাহ (রা.) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে- ‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে ‘কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৭)

সুতরাং যারা কুরবানি দিব তারা যেন অবশ্যয় এই ১০দিন চুল,নখ ইত্যাদি কাঁটা থেকে বিরত থাকে।

 

 


---কুরবানির ওয়াক্ত বা সময়: 

ঈদুল আযহার দিনগুলোতে কুরবানি করারও একটা ওয়াক্ত বা সময় লিপিবদ্ধ আছে,

যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানীর সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকেই। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কুরবানীর পশু যবেহ করা হয় তাহলে কুরবানী আদায় হবে না।

যেমন হাদিসে এসেছে-

 عن البراء بن عازب رضى الله عنه قال:سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب فقال: « إن أول ما نبدأ به يومنا هذا أن نصلى ثم نرجع فننحر فمن فعل هذا فقد أصاب سنتنا ومننحر فإنما هو لحم قدمه لأهله ليس من النسك في شئي

 আল-বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সা.) খুতবাতে বলেছেন, ‘এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানীর কিছু আদায় হলো না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৫,৫২২৬)।

সুতরাং সময়মত কুরবানি করা কুরবানি দাতার জন্য একান্তই কর্তব্য।।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২৯:২২   ১৬৪ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সর্বশেষ সংবাদ’র আরও খবর


চরফ্যাসনে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
ভোলায় তীব্র প্রবাহে অস্থির জনজীবন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে ॥
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন ২০২৪আপনাদের পবিত্র ভোট ৫ বছরের জন্য ভাল পাত্রে জমা রাখবেন-মোহাম্মদ ইউনুছ
দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কংগ্রেস: নরেন্দ্র মোদি
ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার খালের উপর ব্রিজ নির্মানের দাবী মনপুরাবাসীর ॥
লালমোহনে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়
লালমোহনে আবাসনের ঘর জবরদখলের অভিযোগ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৪ভোলার ৩ উপজেলায় ৩৮ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল
কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

আর্কাইভ