মনপুরায় শিশু ও কিশোর কিশোরীদের সুরক্ষা ত্বরান্বিত করণ এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » মনপুরায় শিশু ও কিশোর কিশোরীদের সুরক্ষা ত্বরান্বিত করণ এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১



মোঃ ছালাহউদ্দিন।।ভোলাবাণী।।মনপুরা প্রতিনিধি॥
ভোলার মনপুরায় ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় কোস্ট ট্রাস্ট আয়োজনে সোমবার সকাল ১০টায় জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় শিশু ও কিশোর কিশোরীদে সুরক্ষা ত্বরান্বিতকরন (এপিসি) প্রকল্পের এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মনপুরায় শিশু বিয়ের কারন প্রতিকার বিষয়ক এ্যাডভোকেসি সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা।

সভায় বাল্যবিয়ে নিয়ে কোস্ট ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত গবেষণার তথ্যসমূহ উপস্থাপন করেন গবেষক ইকবাল উদ্দিন। গবেষণায় মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতাকে বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কোস্ট ট্রাস্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভার সভাপতিত্ব করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুপ কুমার পাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনপুরা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন। শুভে”ছা বক্তব্য প্রদান করেন ইউনিসেফ শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জামিল হাসান।প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিঞা বলেন মেয়েদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই পারে বাল্যবিয়ে কমাতে। সেজন্য সকলকে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে সহায়তা পেতে হটলাইন নাম্বারগুলো সকলকে জানাতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধ করতে গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন করতে হবে। বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশি বেশি করে মানুষের মাঝে প্রচার করতে হবে। প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃআলমগীর হোসেন বলেন ,নৈতিকতার অবক্ষয় আমাদের রোধ করতে হবে। মেয়েদেরকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বিয়ে বন্ধে অনেক সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করে বাধার সৃষ্টি করা হয়। সেটি বন্ধ করতে হবে।

গবেষণায় জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে নারী ছিলেন ৫৭.১% এবং পুরুষ ৪২.৯%। কেন ভোলায় বাল্যবিয়ের হার বেশি এবং জীবনে এর প্রভাব জানতে কোস্ট ট্রাস্ট ২৫ অক্টোবর-৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ এই গবেষণা করে।

গবেষণায় দেখা যায়, বাল্যবিয়ের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসাকে দায়ী বলে মনে করেন ৬৩.৬% উত্তরদাতা। এরসাথে নিরাপত্তাজনিত কারণও জড়িত বলে জানান ৪১.৬%। এছাড়া ছেলে-মেয়েরা যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে তাই পারিবারিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া হয় বলে মত দেন ৪১%। ভালো পাত্র পেলে বিয়ে দেয়া হয় বলে মনে করেন ৪৭.৮%। অসচেতনতার কথা বলেছেন ৪৪.৯% এবং দারিদ্র্যতা এর কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ৫০.৯% উত্তরদাতা।

গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩৭.৮% উত্তরদাতরই ধারণা নেই ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু আর ১৫-১৭ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হওয়াকে অনেকই শিশু বিয়ে বলে মানতে নারাজ। তাছাড়া শিশুবিয়ে দিলেও পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন প্রকাশ্যে সেটি স্বীকার করতে চান না। বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব আছে বলেছেন ২১.৭%, নাই বলেছেন ৩৯.৫% এবং জানি না বলেছেন ৩৮.৭% উত্তরদাতা।

দরিদ্র পরিবারগুলোতে বাল্যবিয়ের হার বেশি বলে মত দিয়েছেন ৭৬.৪% উত্তরদাতা। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেশি বলেছেন ২৯.১% এবং ধনী পরিবারে বেশি বলেছেন ২.৩% উত্তরদাতা। আর শিক্ষার ধাপ বিবেচনায় দেখা গেছে ৫ম শ্রেণি শেষ করার পর মেয়ে শিশুদের বিয়ে হয়ে যায় বলেছেন ১৯.১% উত্তরদাতা। ৮ম শ্রেণি শেষ করার পর হয় বলেছেন ৬৭.৩%। মাধ্যমিক শেষ করার পর হয় বলেছেন ১০% এবং উ”চ মাধ্যমিক শেষ করার পর হয় বলেছেন ১.৩%। বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই যৌতুক দেয়/নেয় বলে মত দিয়েছেন ৬০% উত্তরদাতা।

এলাকায় বাল্যবিয়ে হলে তা প্রতিরোধ করেন বলে জানিয়েছেন ২৭.৯% উত্তরদাতা, করেন না বলেছেন ৪১%, কখনও কখনও করেন বলেছেন ২৪.৩% এবং অন্যরা করে যেমন পুলিশ, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির লোকজন ইত্যাদি বলেছেন ৬.৮%। এছাড়া  স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানরা শিশুবিয়ে প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখেন বলেছেন ২৫.৯%, মাঝে মাঝে ভূমিকা রাখেন বলেছেন ৪০.৮%, কোন ভূমিকা রাখেন না বলেছেন ১৩.৪% এবং তারা ভোটের হিসেব করেন বলেছেন ৮.৯% উত্তরদাতা। এছাড়া শিশুবিয়ে বন্ধে সরকারি হটলাইন নাম্বারের কথাও জানেন না বলেছেন ৫৪.৫% উত্তরদাতা।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আরো কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো: ইউনিয়ন পরিষদকে বাল্যবিয়ে বন্ধে আরো সক্রিয় করা, গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন করা । মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। করোনাকালীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যালয়গুলো সীমিত আকারে খুলে দেয়া। মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে মাধ্যমিক স্তরে ৮০% মেয়েকে উপবৃত্তির আওতায় আনা। উপবৃত্তির অর্থ খুব সামান্য, এটি বৃদ্ধি করা। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ সৃষ্টি করা। ভূয়া জন্ম নিবন্ধন রোধ করা। এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজী, ইমাম, পুরোহিতদের সাথে প্রশাসনের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য আবুল কাসেম মিয়া, মফিজা বেগম, বিবাহ রেজিঃ কাজি রবি উদ্দীন, ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল, মোঃ কবির হোসেন, মেহেদি হাসান রবিন, মোঃ আজাদ হোসেন , রাজিয়া সুলতানা, আব্দুর রহিম, একরাম আব্দুল কাদের, মনপুরা কোস্ট ট্রাস্ট প্রজেক্ট অফিসার(এপিসি) মোঃ আরফি হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৩:২৫   ৫৯ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


ভোলায় মহানবী (সা.) কে কটুক্তিকারীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান
শশীভূষণ বাজারে অগ্নিকান্ডে তিন দোকান পুড়ে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলার কৃষকরা ঝুঁকছেন ক্যাপসিকাম চাষে
স্মার্টফোনে ই-লাইসেন্স দেখিয়েও গাড়ি চালানো যাবে
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় সৌদি সুন্দরী
মনপুরায় রোগীদের সহায়তার ৩ লক্ষ টাকার চেক বিতরন ॥
ভোলা ইসলামী আন্দোলনের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল।
মনপুরায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
ভোলায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন

আর্কাইভ