
ভোলাবাণী।। ক্রীড়া ডেস্ক।।
ম্যাচের ফল তখন একপ্রকার নিশ্চিত। ভারতের জয়ের জন্য দরকার মাত্র ১৭ রান, বিরাট কোহলির শতকের জন্য প্রয়োজন ১৩। তাই জয়ের পথে দৌড়ায়নি ভারত, বরং সময় নিয়ে খেলে সুযোগ করে দেয় কোহলির জন্য। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত শতক আসে, সঙ্গে ৬ উইকেটের জয়ও। ভারতের সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত, আর পাকিস্তান কার্যত ছিটকে গেল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবারের আসর থেকে।
কাগজে-কলমে এটাই ছিল বছরের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। মাঠের লড়াইও তার সমানুপাতিক উত্তেজনা নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু একপেশে লড়াইয়ে পরিণত হয় ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। ২৪১ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত জয় তুলে নেয় ১৭ বল হাতে রেখে, ৭ উইকেটের দাপুটে জয়ে। আর সেই জয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন বিরাট কোহলি।
১৪ হাজার রান স্পর্শ, ৫১তম ওডিআই শতক, বিশ্বকাপে দলের সেরা পারফরম্যান্সের অন্যতম ভিত্তি স্থাপন—বিরাট কোহলি যেন একরকম একাই ম্যাচের আলো কেড়ে নিলেন। আর এই শতকের জন্যই শেষদিকে একটু ধীরগতিতে খেলল ভারত। ৯৯ রানে থাকা কোহলির জন্য সহজ দুই রান নিলেন না অক্ষর প্যাটেল, সুযোগ করে দিলেন সতীর্থকে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার। দুবাই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন শুধুই কোহলির নামে ধ্বনি। পাকিস্তানের কোনো অস্তিত্বই যেন ছিল না সেখানে!
এর আগে ভারতীয় বোলারদের দাপটে ছন্নছাড়া ব্যাটিং করে পাকিস্তান। ৩৩.৫ ওভারে ১৫১/২ থেকে ৪৮ ওভারে অলআউট ২৪১—এ যেন ভাঙনের এক নির্মম চিত্র। হার্দিক পান্ডিয়া বল হাতে দুর্দান্ত, প্রথমে বাবর আজমকে ফিরিয়ে পরে পাকিস্তানের ইনিংসের সেরা স্কোরার সৌদ শাকিলকেও সাজঘরে পাঠান। কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে এলোমেলো হয় পাকিস্তান। শেষের ওভারগুলোতে হার্শিত রানার স্লোয়ার বল ছিল একেবারেই অপরাধযোগ্য, পাকিস্তান ব্যাটাররা তা পড়তেই পারেননি।
পাকিস্তান কখনোই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি, তবে কিছু মুহূর্ত সৃষ্টি করেছিল। শাহীন আফ্রিদির ১৪৩ কিমি গতির ইয়র্কারে বোল্ড হন রোহিত শর্মা, আবরার আহমেদের রহস্যময় ক্যারম বলে কাবু শুবমন গিল। কিন্তু সেই মুহূর্তগুলো কাজে লাগানোর সামর্থ্য ছিল না পাকিস্তানের। ৪৭/২ থেকে নামেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, শুরুতেই চার মারলেও এরপর যেন ব্যাটে তালা লাগিয়ে দেন তিনি। ৫০ বলে ২৪ রানের মন্থর ইনিংস, যে সময় সৌদ শাকিল ৫০ করতে খেলেছিলেন মাত্র ২৯ ডট বল, রিজওয়ান সেখানে নষ্ট করেছেন ৪০টি ডট!
ভারত তাদের বোলিং পরিকল্পনায় পুরোপুরি সফল। হার্দিক পান্ডিয়া বল হাতে চওড়া ছিলেন, অফস্টাম্প লাইনে শর্ট লেংথে বল রেখে বারবার বিপাকে ফেলেছেন পাকিস্তান ব্যাটারদের। তার বলে বাবরের বিদায়ের পর পাকিস্তান আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
একপেশে লড়াইয়ের শেষটা হলো বিরাট কোহলির অর্জনের সাক্ষী হয়ে। যখন জয় নিশ্চিত, তখন অপেক্ষা কেবল কোহলির শতকের জন্য। সময় নিয়ে সেটিও পেয়ে গেলেন তিনি, ভারতও তুলে নিলো সহজ জয়। সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল ভারত, পাকিস্তানের জন্য বাকি পথ হয়ে রইল কঠিন সমীকরণের খেলা।
বাংলাদেশ সময়: ৯:১২:২৫ ৬৬ বার পঠিত |