স্টাফ রিপোর্টার ॥ভোলাবাণী।।
যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা শীর্ষক জেলা মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে জাতীয় যক্ষা নিরোধ কমিটি (নাটাব) ভোলা শাখা এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে, নাটাব ভোলা জেলার সভাপতি ও দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ভোলা ডাঃ মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক ডাঃ এটিএম মিজানুর রহমান। সভায় ভোলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নাটাব ভোলা জেলার সহ-সভাপতি মাষ্টার মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, যক্ষা রোগ প্রতিরোধে সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায় নির্মূল করা সম্ভব না হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে শিক্ষকরা সচেতন হলে তারা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সহজে সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারে। এই জন্য নাটাব সরাসরি শিক্ষকদের সাথে যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে থাকেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ভোলার সিভিল সার্জন মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, যক্ষ্মা প্রতিরোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই, যক্ষ্মার যথাযথ চিকিৎসা ও নিশ্চিত আরোগ্যের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না থাকলেও যক্ষ্মা এখনও বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছে মরণব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এর কারণ অশিক্ষা, কুসংস্কার ও সচেতনতার অভাব। প্রকৃতপক্ষে যক্ষ্মা কোন মরণব্যাধি নয়। নিয়মিত চিকিৎসায় যক্ষ্মা ভালো হয়। যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, ইহা অতি সূক্ষ্ম জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। প্রধানত ফুসফুসই যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সর্বাধিক আক্রান্ত হয়। এ রকমের যক্ষ্মাকে ফুসফুসের যক্ষ্মা বলে। যক্ষ্মা জীবাণু দেহের অন্য অংশকেও আক্রান্ত করে যক্ষ্মা রোগ তৈরি করতে পারে, তাকে ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষ্মা বলে।কাশি যক্ষ্মা রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ। অনেক সময় কাশির সঙ্গে রক্তও যেতে পারে। যক্ষ্মা রোগীর ক্ষেত্রে রক্তের রঙ উজ্জ্বল লাল হয়ে থাকে। কাশি ছাড়া যক্ষ্মা রোগীর অন্যান্য উপসর্গ- যেমন জ্বর থাকা, খাবারে অনীহা, দ্রুত ওজন হ্রাস, বিষাদময়তা হয়ে থাকেন। যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী বিনা চিকিৎসায় থাকলে হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে কোনো মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে। যক্ষ্মা বা টিবি হলে ঘাবরে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ডাক্তার ও রোগীর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যক্ষ্মা বা টিবি রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, অনেক সময় আমরা সচেতনতার অভাবে যক্ষ্মার লক্ষণ থাকলেও বুঝতে পারিনা। যক্ষ্মা শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে ধৈর্য সহকারে অতি সচেতনতার মাধ্যমে নিয়মিত ও ক্রমাগত এ রোগের জন্য চিকিৎসা নিতে হবে। অনিয়মিত ওষুধ সেবন বা নির্ধারিত সময়ের আগে ওষুধ বন্ধ করলে যক্ষ্মা নিরাময় হবে না এবং অনেক সময় ব্যয়বহুল এম ডি আর যক্ষ্মা হতে পারে। এম ডি আর যক্ষ্মা খুবই ভয়াবহ যা সহজে নিরাময় হয় না। যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়লে ওষুধ নিয়মিত ৬ মাস সেবন করলে যক্ষ্মা স¤পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
নাটাব ভোলা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন বলেন, নাটাব যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নাটাব সরকারের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অংশীদার হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা স¤র্পকে সচেতন করে তোলা এবং তাদের চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে, এসব কর্মসূচির মধ্যে বার্ষিক যক্ষ্মা সম্মেলন, র্যালি ও আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উদযাপন, ওয়ার্কশপ, রোগীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৩:২২ ৪০ বার পঠিত |