প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ
মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪



 

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

খলিল উদ্দিন ফরিদ।।ভোলাবাণী।।

সুন্দরবনের আদলে গড়ে ওঠা ৮৫৬৫ হেক্টর বনভূমি জুড়ে গহীন সবুজ বন আর সাগরের নির্মল হিমেল হাওয়ায় চিত্রা হরিণের ছুটে চলার সঙ্গে অতিথি পাখির কলকাকলি। এমন এক অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে কে না চায়। এমন নির্মল প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ভোলার চর কুকরি-মুকরিও তাড়ুয়ার দ্বীপে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমী।ইটপাথরের ব্যস্ত জীবন ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে প্রশান্তির খোঁজে আসা এসব মানুষ এখানকার অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ। পর্যটকদের নিজের বুকে আপন করে নেয় কুকরি-মুকরি ও তাড়ুয়ার দ্বীপ প্রকৃতি। চর কুকরি মুকরি এর অবস্থান ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপাসাগরের কোল ঘেষা মেঘনা নদীর মোহনায়। যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত।

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দ্বীপ জনপদ কুকরী-মুকরী। ভোলার দক্ষিণ উপকূল চরফ্যাশনের ম্যানগ্রোভ বাগানকে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে।চর কুকরি মুকরির অভয়াশ্রমে প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি হরিণ। এ ছাড়ারা রয়েছে পাখি পরিযান, লাল কাকড়া,চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল, উদবিড়াল, বন্য মহিষ-গরু, বন মোরগ, বন-বিড়াল প্রভৃতি। এছাড়া বক, শঙ্খচিল, মথুরা, বন মোরগ, কাঠময়ূর, কোয়েল ইত্যাদি নানান প্রজাতির পাখি ও সরিসৃপ রয়েছে। শীতকালের এই চর কুকরি মুকরিতে বিপুল পরিমানে অথিতি পাখির আগমন ঘটে।

 

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

এছাড়া কুকরি মুকরি চরের সমুদ্র সৈকত নিরিবিলি ও পরিছন্ন। এর বনভূমিতে প্রায় ৯ কোটিরও বেশি জীবন্ত গাছ রয়েছে। চর কুকরিমুকরি বুক চিঁড়ে বয়ে যাওয়া ভাড়ানি খাল মেঘনা নদী হয়ে আছড়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। চরের বালিয়াড়ির ধরে ঢাল চর অতিক্রম করে সামনে এগোলেই বঙ্গোপসাগর। এখানেও কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আবহ খুজে পাবেন। স্থানীরা এই জায়গাটিকে বালুর ধুম নামে চেনে। কুকরি মুকরির সাগরপাড় থেকেও সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্থের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

 

 

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

চর কুকরি মুকরি যাবার উপযুক্ত সময় শীতকালে আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আবার এখানে ক্যাম্পিং করার জন্য শীতকালেই উপযুক্ত সময়।

 

কিভাবে যাবেনঃ চর কুকরি মুকরিতে যেতে নদী পথ হচ্ছে সবচেয়ে সহজ উপায়। নদী পথে যাতায়াতে খরচ ও শারীরিক কষ্ট কম হয়। নদী পথে চর কুকরি মুকরিতে যাওয়ার দুইটি উপায় আছে। ঢাকার সদঘাট থেকে ভোলাগামী লঞ্চে চড়ে বেতুয়া লঞ্চ টার্মিনাল নেমে সরাসরি মটরসাইকেল,অটোরিক্সা,সিএনজি অথবা লেগুনা ভাড়া করে চর কচ্ছপিয়া ঘাট আসতে পারেন। তবে চরফ্যাশন থেকে সরাসরি বাসেও যেতে পারেন।

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

এক নজরে চর কুকরি মুকরি যাবার বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ঢাকার সদরঘাট থেকে ফরহান,তাসরিফ,কর্ণফুলী লঞ্চ থেকে সুবিধামত সময় লঞ্চে চড়ে ভোলার বেতুয়া লঞ্চ টার্মিনাল নামতে হবে। (মনে রাখা জরুরী ঢাকা থেকে সবগুলো লঞ্চ বিকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে ছেড়ে যায় এবং বেতুয়া থেকে ছাড়ে বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে। আর লঞ্চের রুট প্লান প্রায়শই পরিবর্তন করা হয় তাই যাত্রার আগেই কোন পথে লঞ্চ যাত্রা করবে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন।)এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ভাড়া ১০০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া নিতে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা লাগে। ঘাট থেকে ১৫০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়া করে কিংবা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় টেম্পোতে চরে চরফ্যাশন সদরে এসে সেখান থেকে ৩০ টাকা বাস ভাড়া অথবা ২০০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়ায় দক্ষিণ আইচা আসুন। দক্ষিন আইচা থেকে ১৫ থেকে ৩০ টাকায় টেম্পো বা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চর কচ্ছপিয়া যেতে পারবেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় ট্রলারে চেপে পৌঁছে যাবেন চর কুকরি-মুকরি।

 

 

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

কুকরিতে কোথায় থাকবেনঃ আপনি ইচ্ছা করলে চর কুকরি মুকরিতে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। এছাড়া বন বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ),কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ) এর হোম স্ট্রে ভাড়া ৩০০ টাকা ,কোস্টাল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কাম রেস্ট হাউজ(বনবিভাগের) ভাড়া-সিঙ্গেল রুম-২০০০ টাকা,ডবল রুম-৪০০০ টাকা।বনবিভাগের রেস্ট হাউজে থাকতে চাইলে আগেই জানিয়ে যাওয়া ভালো।বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা(এফডিএ)।যোগাযোগ - ০১৭৪৬-৭৬৫৯৫৯ । চর কুকরি মুকরি রেস্ট হাউজের যোগাযোগ নাম্বার ০১৭৪৯৭১৭৫৮১।
কুকরিতে কোথায় খাবেনঃ বন বিভাগ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে এরা খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে।এছাড়া কুকরি বাজারে হোটেল হানিফ(হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট) রয়েছে।এখানে থাকা এবং খাওয়ার সু ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রকৃতির এক বিশ্বয় চর কুকরিমুকরি দ্বীপ

কুকরির দর্শনীয় স্থানঃ সমুদ্র সৈকত তাড়ুয়ার দ্বীপ আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান।এছাড়া পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে একের পর এক স্থাপনা গড়ে উঠছে। এরই মধ্যে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ফাইভস্টার মানের বনবিভাগের কোস্টাল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কাম রেস্ট হাউজ (একটি টুরিস্ট হোটেল)। দর্শনীয় স্থান হিসেবে রয়েছে নারিকেল বাগান, বালুর ধুম, লাল কাঁকড়া, সাগর পাড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সমুদ্র সৈকত ও সাগরের গর্জন। এ ছাড়া কুকরীর বিভিন্ন কে বাঁকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৭:৪৫   ১২৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

এক্সক্লুসিভ’র আরও খবর


জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ভোলায় বাস মালিক সমিতির ধর্মঘট প্রত্যাহার
ভোলায় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় ন্যাশনাল ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপর হামলা আহত ৩, আটক-২
তজুমদ্দিনে দখল হওয়া সরকারি খাসজমি উদ্ধারে তৎপরতা নেই প্রশাসনের ভূমি অফিসের সহায়তায় শ্রমিকলীগ নেতার আলিশান বাড়ি তৈরী খাসজমিতে
মুক্তি না দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা তোফায়েল স্যার ষড়যন্ত্রের শিকার : সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ
৪৭ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি হামাগুড়ি দিয়ে চলছে চরফ্যাশনের পাবলিক লাইব্রেরী
৪৭ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি হামাগুড়ি দিয়ে চলছে চরফ্যাশনের পাবলিক লাইব্রেরী
রাষ্ট্রের ৩০ লাখ টাকা গচ্চা একদিনও চলেনি তজুমদ্দিন হাসপাতালের নৌ-অ্যাম্বুলেন্স ॥
চরফ্যাশনে চালু হলো ৬ মাসের ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা প্রকল্প
বিয়ের ৩৩ বছর পর ধর্ম বদলালেন শাহরুখের স্ত্রী গৌরী!
মনপুরায় পাঙ্গাসের পোনা নিধনের অবৈধ ১৬ চাই জাল জব্দ

আর্কাইভ