বিশেষ প্রতিনিধি ॥ভোলাবাণী।।
তীব্র ভাঙনে মেঘনায় বিলীন হচ্ছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মূল ভূখন্ডের বাহিরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর। এই ইউনিয়নটিতে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বাস। ভাঙনে দিন দিন বিলীন হচ্ছে বসতঘর, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বসতঘর হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন।

তবে বেশ কয়েক বছর ধরে ঢালচর ইউনিয়ন মেঘনার ভাঙনের শিকার হলেও এখনো ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই ইউনিয়নটির তিন দিকে মেঘনা নদী ও একপাশে বঙ্গোপসাগরের মোহনা।
জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠে বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন। আগে এটি চর কুকরি-মুকড়ি ইউনিয়নের সঙ্গে থাকলেও ২০১০ সালের দিকে পৃথক ইউনিয়ন হিসেবে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় ঢালচর ইউনিয়ন। শুরু থেকে ঢালচর ইউনিয়নে প্রায় ১৭ হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও বর্তমানে বাস করছেন ১২ হাজার মানুষ। ঢালচর ইউনিয়নে রয়েছে তারুয়া সমুদ্র সৈকত। এখানকার মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস মাছ শিকার ও কৃষিকাজ। বেশ কয়েক বছর ধরে অল্প অল্প করে ভাঙন শুরু হয় ঢালচর ইউনিয়নটিতে। কিন্তু গত প্রায় ১০ বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঢালচর ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অনেক পরিবার বসতঘর, ফসলি জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে সরকারি জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে কোনো রকম বাস করছেন। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ছেড়েছেন ঢালচর।
ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের, মো. রফিক ও মো. রিয়াজ জানান, তারা ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে ঢালচরে বসবাস করছেন। তাদের বসতঘর একবার ভাঙলে আবার কিছু দূরে গিয়ে আবারও বসতঘর তুলেন। আবারও ভাঙনের শিকার হচ্ছেন তারা। এভাবে তারা পৃথকভাবে কেউ ৩ বার, কেউ ৭ বার, আবার কেউ ১০ বার রাক্ষুসে মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন। নদী ভাঙনের কারণে কয়েক দফায় বসতঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে এখন নিঃস্বপ্রায় তারা। বর্তমানে সব হারিয়ে সরকারি জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন তারা।
ওই ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও শাহে আলম বলেন, নদী ভাঙনের কারণে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেক পরিবার ঢালচর থেকে চলেও গেছে। এখনও প্রায় ১২ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়া এবং ভাঙনের শিকার হয়ে সব হারিয়ে যারা এরইমধ্যে নিঃস্ব হয়ে সরকারি জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন তাদের পুনর্বাসন করার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো-২) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, ভোলায় বর্তমানে মেইন ল্যান্ড ভাঙন রোধে কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলোর কাজ শেষ হলে প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ঢালচরকে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ঢালচরের ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে শিগগিরই পূর্ণবাসনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২৮:৫১ ৭৫ বার পঠিত |