মাছ স্বীকারের ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরুভোলায় কর্মহীন হবেন প্রায় ২ লক্ষাধিক জেলে

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » মাছ স্বীকারের ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরুভোলায় কর্মহীন হবেন প্রায় ২ লক্ষাধিক জেলে
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪



খলিল উদ্দিন ফরিদ।।ভোলাবাণী।।

আজ মধ্যরাত থেকে ভোলার মেঘনায় শুরু হচ্ছে মাছ স্বীকারের ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এর আওতায় থাকছে  মেঘনা-তেতুঁলিয়ার ১৯০ কিলোমিটার এলাকা। এতে আগামী ২২ দিন কর্মহীন হয়ে পড়বেন ভোলার ৭ উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক জেলে। তারমধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার। বাকি ৩০ হাজারের বেশি জেলে এই দিনগুলো কীভাবে পার করবেন তা নিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে ঋণের কিস্তি বন্ধ ও অভিযানের প্রথম সপ্তাহে সরকারি খাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন ভোলার জেলেরা।

 

মাছ স্বীকারের ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে শনিবার ১২/১০/২৪ তারিখ রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ, পরিবহণ, ও বিনিময় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আর এতেই বিগত দিনের ধার-দেনা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও সংসার চালানো নিয়ে ভোলার জেলেদের কপালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ২ লাখের বেশি জেলে আছে। এর বিপরীতে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল এসেছে ১ লাখ ৪০ হাজার জেলের জন্য। কিন্তু নিবন্ধিত জেলের সংখ্যাই ১ লাখ ৬৮ হাজার। এতে এ বছর সরকারি প্রণোদনা পাবেন না অন্তত ২৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে। এছাড়া প্রতি বছর ৩০ হাজার অনিবন্ধিত জেলে থাকেন সরকারি প্রণোদনার বাইরে।

সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার নাছির মাঝি,ইলিশা চডার মাথা, ভেদুরিয়া পাকার মাথা, ভোলার খালগোড়া, তুলাতুলি বাজার  ও দৌলতখান উপজেলার চরপাতার খালের মাতা এলাকা মাছের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশ শিকারে সরকারের আরোপিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে প্রায় ৮০ ভাগ জেলে ও ট্রলার মালিকরা তাদের মাছ ধরার সরঞ্জামাদি তীরে উঠিয়ে রেখেছেন। বাকি ২০ ভাগ জেলেরাও নদী থেকে তাদের জাল-ট্রলার তীরে উঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল মাছঘাট এলাকার নাছির মাঝি জানান, নদীতে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুবিধার্থে সরকার ২২ দিনের অভিযান দিছে। আমরা সরকারের আইন মাইন্না (মেনে) জাল-সাভার তরে  উঠাইছি। অভিযান শেষ না হইতে আর গাঙ্গে নামুম না ।

তবে অভিযোগ আছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মৎস্য বিভাগের গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নদীতে চলে মা ইলিশ শিকার। এটি ইলিশ সম্পদের জন্য হুমকি বলে মনে করেন জেলেরা।

একাধিক জেলেরা  জানান, আমরা সাধারণ জেলেরা অভিযান মানলেও ক্ষমতাধরদের কাছে অভিযান একটি ছেলেখেলা। যত আইন আছে সব আমাদের মত গরিব জেলেদের জন্যেই। তাদের জন্য কিছুই না। তারা ঠিকই প্রতি বছর অভিযানের মধ্যে মাছ ধরে। আমরা চাই কঠোরভাবে অভিযান চালানো হোক যাতে কোনো জেলে নদীতে নেমে মা ইলিশ ধরতে না পারেন।

ভোলার খাল মৎস্যঘাট এলাকার জেলে মো.হাদিস মাঝি বলেন, নদীতে এ বছর কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাইনি। আড়তদার থেকে দাদন লইছি, পরে আবার সমিতি (এনজিও) থেকে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিছি। আশা ছিল নদীতে বেশি মাছ পাইলে অভিযানের আগেই আড়তদারের দেনা ও ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু নদীতে আশা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ার কারণে দেনা শোধ করতে পারিনি।

তিনি আরও জানান, অভিযানে আড়তদাররা দেনা শোধ করতে চাপ না দিলেও এনজিওর লোকজন কিস্তির জন্য ঘর ছাড়বে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই অভিযানে সমিতির কিস্তি যেন বন্ধ করে। এতে কিছুটা নিশ্চিতে থাকতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, অভিযানে ভোলার প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল ঠিকমতো পান না। কিছু জেলে চাল পেলেও তার মধ্যে আবার ওজনে কারচুপি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলিশা রাস্তার মাথা এলাকার কয়েকজন জেলে বলেন, অভিযানের মধ্যে সরকার আমাগো  জন্য ২৫ কেজি করে চাল পাঠায়। বিগত দিনে ওই চাল স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানেরা নিজেগো পছন্দের লোকদের দিতেন। প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হইতাম। কিছু জেলে সরকারি সহায়তার চাল পেলেও ওজনে কম দিতেন তারা।

জেলেরা আরও বলেন, অন্যদিকে জেলেদের সময় মতো চালও দিতেন না তারা। এতে আমরা কর্মহীন জেলেরা অভিযানের মধ্যে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাতাম। আমরা চাই এ বছর যেন প্রকৃত জেলেদের সঠিক ওজন এবং অভিযানের প্রথম সপ্তাহে সরকারি সহায়তার চাল যেন আমরা পাই। এটাই আমাদের দাবি।

ভোলার তুলাতুলি মৎস্যঘাটের আড়তদার আলাউদ্দিন জানান, এ বছরে এখনো লাভের মুখ দেখিনি। আজ মধ্যরাত থেকে অভিযান শুরু হবে। তাই আগামী ২২ দিনের জন্য আড়ত বন্ধ থাকবে। আড়ত বন্ধ করার প্রস্তুতি শেষ। অভিযান শেষ হলে ফের আড়ত চালু করবো।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, অভিযান সফল করার লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা সভা করেছি। এ বছর ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযানে কোনো নৌকা যেন নদীতে নামতে না পারে সে জন্য সব খালের মধ্যে মাছ ধরা নৌকা ঢুকিয়ে খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমাদের অভিযান সফল করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ বছর আমাদের উদ্দেশ্য জেল-জরিমানা না, শুধু নদী জেলে মুক্ত রাখা। যেন মা ইলিশ নির্বিঘ্নে নদীতে প্রজনন করতে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বছর ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ জেলের জন্য সরকারি প্রণোদনার চাল পেয়েছি। এতে ভোলার ৭ উপজেলার জেলেদের আমরা অভিযানের প্রথম সপ্তাহে ২৫ কেজি করে চাল দিতে পারবো।

অসাধু মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এ বছর যদি কেউ তার নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি কর‍তে চাইলে প্রমাণ পাওয়া মাত্র তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, আজ মধ্যরাত থেকে ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়ায় ইলিশ স্বীকার বন্ধসহ ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। আমরা এ বিষয়ে সব ব্যবস্থা নিয়েছি। নদী পাড়ে মোবাইল কোর্টসহ নদীতে বিশেষ পাহারা থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২১:৫৮   ১৬৭ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


তারেক রহমানকে নিয়ে কুটক্তির প্রতবাদে শশীভূষণ থানা বিএনপি’র বিক্ষোভ
জয়াকে টালিউডে নিষিদ্ধের দাবি
কারফিউয়ের মাঝে গোপালগঞ্জে চলছে বিশেষ অভিযান
বিএনপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বোরহানউদ্দিনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
জাতীয় সমাবেশ সফল করতে ভোলায় জামায়াতের স্বাগত মিছিল
গোপালগঞ্জে নেতৃবৃন্দের উপর হালার প্রতিবাদে ভোলায় এনসিপি’র বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল
কাঁপছে গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি
এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ভোলাবাসীর দাবীকে আমরা সমর্থন জানাই নাহিদ ইসলাম
ভোলায় গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, যুবক গ্রেফতার
ভোলায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

আর্কাইভ