খলিল উদ্দিন ফরিদ।।ভোলাবাণী।।
ভোলার ইলিশ ও কাচা দই বাংলাদেশ সহ বিদেশেও সমাদৃত৷ তারই ধারাবাহিকতায় মহিষের দুধের কাঁচা দই এত দিন সেটি স্থানীয়ভাবে সমাদৃত থাকলেও সেটি এখন জিআই পন্যের স্বীকৃতি পেল। যা ভোলা সহ বাংলাদের জন্য গৌরবের। এটি এখন বানিজ্যিক ভাবে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দইকে এবার অন্যভাবে চিনবে দেশ ও বিশ্ববাসী। কেননা গত মঙ্গলবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে সাগর আর নদীবেষ্টিত ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই। পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ২৪/৯/২৪ তারিখ বিষয়টি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভোলার ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আরিফুজ্জামান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯/১২/২৩ ইং তারিখ হতে ২৯ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৫৫ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ভোলার মানুষের জীবনমানে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। খাবারেও রয়েছে নিজস্বতা। কোন অনুষ্ঠানে ধদি না থাকলে অপূর্নতা থেকে যায়। তারই অংশ হিসেবে এই জেলা দীর্ঘকাল ধরে পরিচিতি পেয়েছে মহিষের দুধের কাঁচা টক দইয়ের জন্য, যা স্থানীয়ভাবে ‘মইষা দই’ নামে পরিচিত।ভোলা
সদর উপজেলার থানার মোরের ধদি বিক্রেতা জলিল মিয়া জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খামারিরা দুধ দিয়ে যান। পরে সেগুলো ছোট ছোট মাটির হাঁড়িতে রাখা হয়। পরদিন সেগুলো দইয়ে পরিণত হয়। মহিষের দুধের কাঁচা দইয়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে দেশ বিদেশে । ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দোকানে দই কিনতে আসে। দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার দই বিক্রি হয়।
ভোলার বিখ্যাত ধদি বিক্রয় হয় ভোলা জজ কোর্টের সামনে। ধদি বিক্রেতা আব্দুল হাই মিয়া জানান মহিষের দুধের কাঁচা দই খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি,স্বাস্থসম্মত। কোর্টে আসা অনেকেই ধদি কিনে নেয়। যে কেউ একবার খেলে তা বারবার খেতে চাইবে। তাঁরা প্রতিদিন দই খাওয়ার জন্য একবার হলেও চলে আসেন এই দধি ঘরে। দই চিড়া বিক্রি হয় অনেক। ভোলার মানুষ ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে গেলে তারা উপঢৌকন হিসেবে ভোলার ধদি নিয়ে যায়।
ভোলার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুমন খান বলেন, ‘এত দিন ভোলা ইলিশের জন্য বিখ্যাত ছিল; কিন্তু সাধারণ মানুষ জানত না মহিষের দুধের কাঁচা দই কতটা সুস্বাদু ও স্বাস্থসম্মত।ভোলায় যে অনুষ্ঠান হয়ে বিশেষ করে
বিয়ের অনুষ্ঠানে মহিষের দুধের কাঁচা দই না হলে এ অঞ্চলের মানুষ মনে করে বিয়ের অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন সম্পন্ন হয় না। আমরা চাই পণ্যটি বেশি বেশি উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে।’
ভোলার প্রবীন সাংবাদিক শওকত হোসেন বলেন, ‘৮০০ বছরের পুরোনো এই দ্বীপ জেলা ভোলা। ধান-সুপারির পরে এ জেলা,ইলিশ, গ্যাসের জন্য সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত। মহিষের দই আগেও মানুষের কাছে প্রিয় ছিল, কিন্তু এটি স্বীকৃতি পায়নি। ভোলার চরাঞ্চলে নানান সমস্যা ও বিভিন্ন রোগের কারণে মহিষ পালন কষ্টসাধ্য, অনেক মহিষ মারা যাচ্ছে, মহিষের চারণভূমিগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। মহিষের জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন, তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না।দই উৎপাদন খরচ পরে অনেক বেশী তাই দধির দাম বেশী। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। এখন স্বীকৃতি পেয়েছে। আশা করি, সরকার এ নিয়ে কাজ করবে।’
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ভোলায় এসেই ভোলার দধির ও ইলিশের অনেক চাহিদা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ধান-সুপারি, ইলিশের পর এখন সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহিষের কাটা দই। ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দইয়ের যে স্বীকৃতি, সেটি অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মহিষের দুধের কাঁচা দই ভোলার ঐতিহ্য। যেটি অন্য জেলার নেই। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক প্রচেষ্টায় ফিরে পেয়েছে এর বৈশ্বিক স্বীকৃতি । এই স্বীকৃতির মাধ্যমে পণ্যটির বাণিজ্যিকীকরণের সুবিধা বাড়ল। এই দই এখন রপ্তানি করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, দই উৎপাদনে মানের উন্নতি হবে। কেননা জিআই স্বীকৃতি পণ্যের মান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।’
জেলা প্রশাসক জানান, ভোলায় মহিষের কাঁচা দইয়ের উৎপাদন বাড়াতে শিল্প ও একটি বৃহত্তম প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে। যাতে করে ভোলার মহিষের কাচা দই রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভুমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৫:২৩ ৪২ বার পঠিত |