পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমরা স্মরন করি ও তার প্রতি দুরুদ সালাম পেশ করি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের তিরোধান এর পর পুরো বিশ্ব যখন অন্ধকারের নিমজ্জিত ছিল। মানুষ যখন শান্তির জন্য হাহাকার করছিল । মানুষকে চতুষ্পদ জানোয়ারের মতো বাজারে বিক্রি করা হতো। মেয়েদের নিরাপত্তা ছিল না । কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে জীবন্ত প্রথিত করা হতো । যে সমাজে ধর্ষণ, আর যৌন চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজন ছিল একজন নারীর, সে কার মা, কার মেয়ে, কার বোন, কার স্ত্রী, তা দেখার সুযোগ ছিল না। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান, কাবা ঘরে উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত। যে সময় অর্থনীতি ছিল এমন এক শ্রেণীর মানুষের কাছে আবদ্ধ, যারা অন্যের সম্পদ জোর করে অন্যায় ভাবে গ্রাস করতে কোন কুণ্ঠাবোধ করত না। যে সমাজের নীতি ছিল জোর যার মুলুক তার। মানুষ হন্যে হয়ে খুজছিল একজন ভালো মানুষ, যিনি তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে অন্ধকারের যাঁতাকল থেকে উদ্ধার করবে। ঠিক ঠিক তখন এক মহেন্দ্র ক্ষণে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীতে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ও আমেনা বিনতে ওহাব এর মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে আগমন করলেন শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে রাহমাতুল্লাহি আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ বলছেন, তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এক আলোকময় বস্ত্ত এসেছে এবং তা একটি স্পষ্ট কিতাব । (সূরা মায়েদা, আয়াত ১৫)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালামকে পাঠানোর উদ্দেশ্য: আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহান একটি উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর মানুষ যতদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠানোর উদ্দেশ্য বুঝতে ভুল করবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের মুক্তি সম্ভব হবে না। সে উদ্দেশ্যের কথা আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরআনের তিন জায়গায় উল্লেখ করেছেন। ( সূরা আসসফ, আয়াত-৯, সূরা তওবা, আয়াত-২৩, সূরা আলফাতাহ, আয়াত-২৩) তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত এবং সত্য দীনসহ সকল দীনের উপর ওকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তিন দফা কর্মসূচি: একটি দলের কর্মসূচির উপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ, সফলতা অথবা ব্যর্থতা। কিন্তু একটি দলের কর্মসূচি যদি আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে দেন ,তাহলে তার কোন কথাই নেই আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিন দফা কর্মসূচি আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন সূরা আল-জুমুআ ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রাসূল রূপে যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর আয়াত, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত; ইতোপূর্বেতো তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।
হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়া সূরা বাকারারয় আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়া স্মরণ করিয়ে বলছেন, আল্লাহ যেন এমন একজন নবীকে পাঠান তার কর্মসূচি থাকবে এ চার প্রকারের।
হে আমাদের রাব্ব! তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তাদেরকে আপনার নিদর্শনাবলী পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করবেন ও তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। (সূরা বাকারা-১২৯)
সূরা বাকারা ১৫১ নম্বর আয়াতে সে কথা পুনরাবৃত্তি করেন, আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে এবং তোমাদেরকে পবিত্র করে, তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয় এবং তোমরা যা অবগত ছিলেনা তা শিক্ষা দান করে।
তিনি আরো ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট তাঁর নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করে এবং নিশ্চয়ই তারা এর পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল। (সূরা আল ইমরান, আয়াত-১৬৪)।
প্রথম কর্মসূচি: কুরআন আবৃত্তি করে শোনানো: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে যে কর্মসূচি গুলো পালনের মাধ্যমে মানব মন জয় করেছেন । মানুষকে পরিশুদ্ধ করেছেন, একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। তা ছিল মানুষদের কোরআন আবৃত্তি করে শোনানো।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সূরা মুজাম্মিল এর চার নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।
প্রথম দিকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর ওহী অবতীর্ণ শুরু হয় তখন তিনি কুরআন নিজে তেলাওয়াত করতেন ,তখন আরব অধিবাসীরা পাগলের মত দাঁড়িয়ে সারারাত তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনত, আর অন্তরের খুদা নিবারণ করত।
কোরআন তেলাওয়াতের সাথে চারটি বিষয় জড়িত রয়েছে, যদি চারটি বিষয়কে পালন করা হয় তাহলে কোরআনের হক আদায় হয়। তা ছাড়া কোরআনের হক আদায় হয় না ।
আর সেগুলো হল: (ক)সহিহ ভাবে তেলাওয়াত করা ৭৩/৪ (খ) অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করা ৪৭/২৪ (গ) সে অনুযায়ী আমল করা ৭/৩ (ঘ) অন্য মানুষের কাছে প্রচার করা ৫/৬৭
কুরআনের আয়াত শুনে হযরত ওমর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস সকলের জানা। পরে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, মোহাম্মদের কুরআন তেলাওয়াত আর শুনতে দেয়া যায় না। তাই তারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে বলতো মুহাম্মদ এর কাছে যেও না। তার কথা শুনলে তোমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ছেড়ে দিয়ে তার ধর্মে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাদের এহেন সিদ্ধান্তের কথা কুরআনের উল্লেখ করেন।
সূরা হামিম আস সেজদার ২৬ নম্বর আয়াত আল্লাহ ইরশাদ করেন, কাফিরেরা বলে তোমরা এই কুরআন শ্রবণ করনা এবং তা আবৃত্তি কালে শোরগোল সৃষ্টি কর যাতে তোমরা জয়ী হতে পার।
আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা: তারা চেয়েছিল ইসলামের নূরকে নির্বাপিত করতে কিন্তু আল্লাহ তা প্রজ্জলিত করে রেখেছেন এবং কেয়ামত অবধি থাকবে সূরা আস সফ এ আল্লাহ এরশাদ করেন, তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফিরেরা তা অপছন্দ করে। ৬১/৮
যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। যখন তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন অন্তরের কান দিয়ে শুনবে, এবং নিঃশব্দ থাকবে আশা করা যায় আল্লাহ তোমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।
দ্বিতীয় কর্মসূচি: আত্মার পরিশুদ্ধি : আত্মার পরিশুদ্ধি ব্যতীত মানুষের আচরণে কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না ।
আল্লাহ সুবাহানাহুওয়া তা‘য়ালা রাহমাতুল্লিল আলামিনকে দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ যখন কোন ধরনের পাপের কাজের সাথে জড়িত হয় তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো দাগ পড়ে, এরপর যখন আরো একটি গুনাহের কাজ করে তখন আরো একটি কালো দাগ পড়ে ।এরপরে এভাবে করে তার অন্তরটি সম্পূর্ণ কালো হয়ে যায় । তওবা ব্যতীত এবং আল্লাহর জিকির অর্থাৎ কোরআন তেলাওয়াত ব্যতীত তার অন্তরার পরিশুদ্ধ হয় না।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, নু‘মান ইব্নু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্ সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)। (মুসলিম হাঃ ১৫৯৯)
প্রশ্ন হতে পারে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে পরিশুদ্ধ করেছেন কোন দিক দিয়ে?
উত্তর:তিনটি দিক দিয়ে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেছিলেন ।
প্রথম: আকিদাগত দিক থেকে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেছেন।
দ্বিতীয়: আমলগত দিক থেকে ,
তৃতীয়: নৈতিক দিক থেকে,
আকিদাগত পরিশুদ্ধি: আকিদা শব্দের অর্থ বন্ধন বা দৃঢ় বিশ্বাস। তাওহিদ রিসালাত এবং আখিরাত সম্পর্কে মানুষের অন্তরে লালিত যে নিশ্চিত বিশ্বাস তাকেই আকিদা বলে। তাদের আকিদা ছিল বহু ইলাহের। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শিখালেন তোমাদের প্রভু একজন, তিনি আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, বলো আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যখন দাওয়াত দেন তখনই তাদেরকে আকিদা শিখিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, হে মানব মন্ডলী, তোমরা বলো আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই তাহলে তোমরা সফলতা অর্জন করবে।
আমলগত পরিশুদ্ধি: মানুষ তখন গুনাহের কাজ কে পুণ্যের কাজ মনে করে পালন করত। যেমন কাবা ঘরে উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা। জীবিত শিশু হত্যা করা, মদ,জুয়া, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, ছড়িয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আমলগত চারিত্রিক দিকগুলোকে পরিবর্তন সংশোধন করেছেন । যেমন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘য়ালা সূরা ইব্রাহীম এর প্রথমে বলেন; আলিফ লাম্ র। হে মুহাম্মাদ। এটি একটি কিতাব, তোমার প্রতি এটি নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে নিয়ে আসো তাদের রবের প্রদত্ত সুযোগ ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে, এমন এক আল্লাহর পথে যিনি প্রবল প্রতাপান্বিত ও আপন সত্তায় আপনি প্রশংসিত। (সুরা: ইবরাহীম,আয়াত-১)
রাসূল বলেছেন, আমি যেভাবে নামাজ পড়ি তোমরা সেভাবে নামাজ পড়ো। যে ওমর (রা:) রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যা করতে এসেছিলেন তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সাথে থেকে মানুষকে হেফাজতকারী হয়েছেন। যারা মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করত, তারা তাদের সমস্ত সম্পদ এবং জীবন পর্যন্ত ইসলামের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। এটি ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আমলগত সংশোধন বা সংস্কার।
নৈতিক পরিশুদ্ধি: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থেকে সাহাবায়ে কেরামদের নৈতিক মান কতটা উন্নত হয়েছিল তা বুঝার জন্য একটি উদাহরণ: আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এক বছর বিচারপতি থেকেছেন। কিন্তু তার কাছে একটিও বিচার আসেনি, এর মাধ্যমে বুঝা যায় সমস্ত মানুষগুলো কতটা উন্নত চরিত্রের আধিকারি হয়েছিল ।
তৃতীয় কর্মসূচি: কিতাব ও সুন্নাত শিক্ষা দেয়া: আল কিতাব দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ কিতাবকেই বোঝানো হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটি সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আরও এরশাদ করেন, আমি আপনার ওপর কিতাব নাজিল করেছি আর এতে সবকিছুর বর্ণনা দিয়েছি।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সর্ব সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেন, আমি প্রেরিত হয়েছি শিক্ষক হিসেবে । তার শিখানো পদ্ধতিটাও ছিল সর্বাধুনিক। তিনি নিজে আমল না করে অন্যকে শেখাতেন না তিনি নিজে কম বলে তার সাথীদের থেকে বেশি কথা বলানোর চেষ্টা করতেন। তাই তিনি প্রথমে মাঝে তাদেরকে প্রশ্ন করতেন তারপর তারা না পারলে তিনি নিজেই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিতেন। যেমন: কুরআনের কোন আয়াত নাযিল হলে, সাহাবে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সেগুলো লিখে রাখতেন।
একজন ইহুদী মসজিদে নববীতে এসে দাঁড়িয়ে পেশাব করছিল। সাহাবীরা তার উপর ক্ষেপে তাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিশ্বনবী সাহাবীদের বারণ করলেন, এবং বললেন, তাকে তার কাজ সারতে দাও। তার যখন হাজত পূরণ হলো ,তখন বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাছে ডেকে বললেন, এটা আমাদের এবাদত খানা ,এখানে এ কাজ করতে হয় না । সাহাবীদের বললেন তোমরা এখানে পানি ঢেলে দাও । তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেখানো। পদ্ধতি দেখে তিনি বিমোহিত হলেন, তার ব্যবহার আপ্লুত হয়ে তিনি তার দীর্ঘদিনের লালিত ধর্মকে ছেড়ে নতুন ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করলেন। এভাবে করে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষদেরকে হেকমত অর্থাৎ বিজ্ঞান শিখিয়েছেন। রাসূল বলেছেন তোমরা যদি তাকে এ অবস্থায় বরণ করো তাহলে তার পেশাবের রাস্তায় কষ্ট হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডায়রিয়া রোগীকে খেজুর খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে গবেষণা করে, বর্তমানে ডাইরিয়া রোগীকে স্যালাইন খাওয়ানো হয়। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতা। তার মত নেতা পৃথিবীতে আর কখনো আসেনি, আসবেও না ।তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কর্মী বাহিনীকে তৈরি করার জন্য তাদেরকে সকল দিকের শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আজও যারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিতে চায়, তাদেরকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে ।এবং মুসলিমদেরকে নেতৃত্ব দিতে হলে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, চারিত্রিক যোগ্যতা, আমলগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এজন্য আমাদের সকল নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন, তারা যেন তাদের কর্মী বাহিনীকে এ শিক্ষাগুলো দান করেন। মানুষদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেওয়া অসৎ কাজে নিষেধ করা। এটা যেন তাদের মূল কাজ হয়। আর কোন বাহিনীকে যদি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না করে । তাহলে তারা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করবে। মানুষকে মেরে তারপর মৃত্ লাশের উপর নৃত্য করবে। মানুষকে দিনে দুপুরে ছুরির আঘাতে হত্যা করবে। মানুষকে আবদ্ধ করে আয়না ঘরে আটকে রাখবে। মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করবে। জুলুম ,নির্যাতন অন্যায় ভাবে মামলা দিয়ে বিশ্বভরেণ্য আলেমদের কে হত্যা করবে ।এগুলো সব কিছুর মূল কারণ হলো
তারা ইসলামী শিক্ষা পায়নি। যে শিক্ষা মহানবী দিয়েছিলেন তার কর্মী বাহিনীকে। রসুল বলেছেন তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে কুরআন নিজে শিখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। তাই একটি রাষ্ট্রকে কল্যাণ রাষ্ট্র, ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র তৈরি করতে হলে প্রথম কাজ হল এদেশের নাগরিককে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা ।
তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন থাকবে, এদেশে ধর্মীয় শিক্ষা অর্থাৎ ইসলামের শিক্ষাকে *কোরআন এবং হাদিসের শিক্ষাকে) স্কুল এবং কলেজের প্রতিটি সাবজেক্টের সাথে বাধ্যতামূলক করে দেয়া। তাহলে এ জাতি ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে সংশোধিত হবে। এ কর্মসূচির বাইরে থেকে যে রূপটি দেখা যেত ,সেটি ছিল তাবলীগের কাজ। যে কাজটি ফরজ করেছেন আল্লাহ।
আল্লাহ বলছেন, হে রাসূল! যা কিছু তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তুমি (মানুষকে) সব কিছুই পৌঁছে দাও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমাকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেনা; আল্লাহ তোমাকে মানুষ (অর্থাৎ কাফির) হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেননা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূল কাজ ছিল মানুষদের মাঝে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হলে ন্যায় বিচার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা এ সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘য়ালা তোমাদেরকে ন্যায় এবং ইনসাফের আদেশ করছেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের-পরিতাপের বিষয়ে যে, আমরা দেখতে পাই, ২য় স্বাধীনতা অর্জনের পরে কিছু লোক, মানুষের ঘরে ঘরে হামলা করছেন, মানুষের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, গোয়ালের গরু ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, মানুষকে নির্যাতন করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছে, মানুষকে মেরে ঝুলিয়ে রাখতেছে। এজন্য তো এই যুবসমাজ স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয় নি, সুতরাং যুবকদের কাছে আমার আকুল আবেদন ,স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেমন আমার ভাই এবং বোনেরা জীবন দিয়েছেন, ঠিক তেমনি আজকে বাংলার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদেরকে আরেকটি আন্দোলন শুরু করতে হবে। আমরা হিন্দুদের উপাসনালয় পাহারা দিব, আমরা মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখব, বাংলার জমিনে যেখানে চাঁদাবাজি হবে আমরা সেই চাঁদাবাজদের কে দেশ থেকে বিতাড়িত করব । আমরা সংঘবদ্ধ ভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কখনো সন্ত্রাস, যুলুম, অন্যায় ও অত্যাচারকে প্রশ্রয় দেয় না; বরং এগুলোকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। মূলত সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এবং সন্ত্রাসবাদকে মূলোৎপাটন করার জন্যেই ইসলাম বিনা কারণে হত্যার পরিবর্তে হত্যা তথা কিসাসকে জায়েয করেছে। ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই মূলত সন্ত্রাসী কাজ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এসব কিছুর বিরুদ্ধে মুসলমানদের আপোষহীন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
১. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা পুরো জাতিকে হত্যার শামিল এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। (সূরা মায়িদা ৫:৩২)
২. যে কাউকে হত্যা করল সে চিরকাল জাহান্নামী আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন। (সূরা নিসা ৪:৯৩)
৩. ধ্বংসের কাজের দিকে বিন্দুমাত্রও যাওয়া যাবে না নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা বাক্বারা ২:১৯৫)
৪. যালিম ও বিদ্রোহীরাই অপরাধী, কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর যুলম করে এবং যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (সূরা শুরা ৪২:৪২)
৫. সামান্য জমিও জবর দখলকারীর করুণ পরিণাম হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: কোনো ব্যক্তি যদি কারো সামান্য জমিও অন্যায়ভাবে দখল করে নেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সাত তবক জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিবেন। (বুখারী, হাদীস ৪/৩১৯৮)
৬. যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ কেবল সেই মুসলিম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন: যার জিহ্বা ও হাত হতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকতে পারবে সেই প্রকৃত মুসলিম। আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করে সেই প্রকৃত মুহাজির। (বুখারী, হাদীস ১/১০)
ন্যায়-ইনসাফ: আদল (১) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- ভারসাম্য রক্ষা করা, ন্যায়বিচার করা, ইনসাফ করা, সোজা করা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে শরীআতসম্মত জীবন বিধানে যার যে হক বা পাওনা তা আদায়ে সুব্যবস্থা করা সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডকে আদল বলা হয়। অত্যাচারের প্রতিবিধান এবং বিচারে ন্যায়ের মানদণ্ড এমনভাবে ধারণ করা, যাতে পক্ষদ্বয়ের কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব না হয়; এটাও আদল। বস্তুত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, ন্যায়-নীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা ফরয। যেহেতু ইসলাম ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দিয়েছে, তাই আদল-ই হলো ন্যায়বিচারের একমাত্র উপায়। সামাজিক জীবনে আদল বা ন্যায়বিচার তথা ন্যায়-নীতি ইসলামের এক অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ যেরূপ আদিল ন্যায়বিচার বা তেমনি মানবজাতিকে তাদের সামগ্রিক জীবনে আদল প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ করেছেন। তাই দ্বিতীয় বিজয় অর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের কাছে আমার পরামর্শ,
প্রিয় ভাইয়েরা, আপনারা যে সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছেন, যে দেশ নির্মাণ করতে চেয়েছেন, সে সমাজ সে দেশ তৈরি করে গিয়েছিলেন আমাদের নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনারা মাত্র একটি ঘোষণা দিন, “দেশ চলবে ইসলামের আইন ও বিধান অনুযায়ী” তবে দেখবেন আপনার সব দাবি পূরণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের দেশ হবে একটি শান্তিপূর্ণ ,বৈষম্য মুক্ত, এদেশে দল মত নির্বিশেষে সবাই শান্তিতে থাকবে, সবাই ইসলামের ছায়াতলে আসার ও ইসলামের আইন কানুন গুলো মেনে চলার সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৮:৫২ ২০২ বার পঠিত |