এম শাহরিয়ার ঝিলন ॥ভোলাবাণী।।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোলার এক মহান রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক খান বাহাদুর নুরুজ্জামান এমবিই এর ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৮৯৫ সালে দৌলতখানের বিজয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। তার পিতা মুন্সি সেহালউদ্দিন (সেলু মুন্সি) একজন সমঝদার ব্যক্তি ছিলেন। খান বাহাদুর নুরুজ্জামান ভোলা ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্কুলে পড়াশুনা করে ১৯১০ এন্টার্স পাশ করেন। ১৯১২ সালে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি ভোলা কোর্টের আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯২১ সালে তিনি ভোলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নির্বাচিত হন। নিজ যোগ্যতায় তিনি বহুবার ভোলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বৃটিশ সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৩ থেকে ২৫ সালে তিনি ধনিয়া গঙ্গাকীর্তি গ্রামে মল্লিকা বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে ভোলায় নারী শিক্ষার সূচনা করেন। ১৯২৫ সালে ভোলায় এ রব হাই মাদ্রাসা পরে এ রব স্কুল প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯২৬ সালে ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেন। ১৯২৩-২৫ সালে ধনিয়া গঙ্গাকীর্তি গ্রামে এবং ইলিশা রাস্তার মাথায় দীঘি খননসহ ভোলা শহরে গভীর নলকূপ স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রেখে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন। ১৯২৮ সালে ভোলা টাউন নাগরিক বিদ্যালয় স্থাপনের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
জনকল্যাণ মূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৩৫ সালে বৃটিশ সরকার তাকে সোনার মেডেল প্রদান করেন এবং ১৯৩৮ সালে খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৩৮ থেকে ৪০ সালে তার সমাজকর্ম যোগ্যতা ও সেবা কর্মের সুনাম সারা ভারতে ছড়িয়ে পরে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালে বৃটিশ সরকার তাঁকে এমবিই (মেম্বার অফ বৃটিশ এম্পায়ার) সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত করে। বৃটিশ আইন অনুযায়ী জমিদার ছাড়া কাউকে এমবিই খেতাবে ভূষিত করা যেত না। তাই সরকার ভারতবর্ষে শুধুমাত্র তার বেলায় খেতাব প্রদানের আগে চরফ্যাশনে তার নামে নুরাবাদ ও তার স্ত্রীর নামে আমিনাবাদ মৌজা সৃষ্টি করে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তাকে ৫০০ একর জমি প্রদান করে নুরাবাদ স্টেটের জমিদার বানিয়ে এমবিই খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৪১ (বাংলা ১৩৪৮) সালে ঝড় জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। অধ্যাহার, অনাহার ও মহামারীতে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। দুর্গত মানুষের জন্য খান বাহাদুর নুরুজ্জামান তার জমিদারির ৫০০ একর জমি বিক্রি করে লঙ্গরখানা খুলে প্রতিদিন শত সহস্র অনাহারী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা করেছেন।
১৯৪০ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য এমএলএ নির্বাচিত হন। ওই সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কলকাতাসহ সারা দেশে বহু মানুষ নিহত হয়। কিন্তু তার নেতৃত্বে ভোলায় পুরো সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিল। জিন্নাহ সাহেবের আহবানে তিনি তার ২০০ ভরি ওজনের প্লাটিনাম ও সোনার মেডেল লন্ডনে ফিরিয়ে দিয়ে বৃটিশ সরকারের সকল খেতাব বর্জন করেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর নির্দেশে তার জ্যেষ্ঠা কন্যা তাইবুন নাহার রশিদ মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। খান বাহাদুর নুরুজ্জামান এমবিই ১৯৭২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
তার পুত্র ভাষা সৈনিক আব্দুল মমিন মিয়া একজন সমাজসেবী ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তি ছিলেন। তার কন্যা কবি তাইবুন্নাহার রশিদ কবিরত্ন বিখ্যাত কবি, সমাজসেবী ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার দৌহিত্রগণ ‘রশিদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ এর মাধ্যমে ভোলা ডায়াবেটিক হাসপাতালের ভবন নির্মাণসহ ভোলা ও সারাদেশে বিভিন্ন কল্যাণ কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৩:৩৩ ৩৬ বার পঠিত |