ভোলাবাণী ডেক্স।। আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) হলো আঙুলের অগ্রভাগে থাকা সূক্ষ্ম চিহ্নের সাহায্যে পাওয়া তথ্য। যা কোনো পদার্থে আঙুল দ্বারা স্পর্শ করলে সৃষ্টি হয়। মানবদেহের আঙুলের ছাপকে একজন ব্যক্তির পুরো ডেটা ব্যাংক বলা হয়। এর অর্থ হলো এক বা একাধিক বিষয়ে তথ্যের ভাণ্ডার। মানুষের ত্বকের ‘ইকরিন গ্ল্যানডস’থেকে নিঃসৃত ঘাম হলো এর মূল রহস্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডারমাটোগিফিক্স’।
ফরেনসিক এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ তার মধ্যে অন্যতম। ১৬ শতকের শেষ দিকে ইউরোপীয় শিক্ষাবিদরা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আঙুলের ছাপ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর ১৬৮৬ সালে বিজ্ঞানী মার্সেলো মালপিঘি পৃষ্ঠের ওপর রেখে যাওয়া আঙুলের ছাপগুলোতে শিলা, সর্পিল ও লুপ শনাক্ত করেছিলেন। পরবর্তী সময় ১৭৮৮ সালে জার্মান অ্যানাটমিস্ট জোহান ক্রিস্টোফ আন্দ্রেয়াস মায়ার আবিষ্কার করেন যে, আঙুলের ছাপ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অনন্য। এরপর ১৮৮০ সাল থেকে গবেষণা শুরু করে ১৮৯২ সালে দুজন বিজ্ঞানী হেমচন্দ্র বসু এবং আজিজুল হক আবিষ্কার করেন যে, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না, যার আঙুলের ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে। বর্তমানে অপরাধ তদন্তের জন্য গোটা বিশ্বে আঙুলের ছাপ পদ্ধতির গুরুত্ব রয়েছে অনেক। এর মাধ্যমে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম অপরাধও নিখুঁতভাবে শনাক্ত করা যায় খুবই সহজে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আধুনিক বিজ্ঞানপূর্ব যুগে অর্থাৎ এই আবিষ্কারের শত শত বছর আগে পবিত্র কোরআন এই আঙুলের ছাপ তথা ফিঙ্গার প্রিন্ট থিওরির তথ্য নিশ্চিত করেছে। অবিশ্বাসীরা এক সময় পুনরুত্থানের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করত এবং নিজেরা হাসি-তামাশা করে বলত, ‘আমরা মরে গেলে আমাদের শরীরের সবকিছুই তো মাটির সঙ্গে মিশে যাবে, তাহলে আল্লাহ আমাদের অস্থিমজ্জাগুলো পুনরায় কীভাবে একত্রিত করবেন? বস্তুত এটা সম্ভব নয়।’ মহান আল্লাহ অবিশ্বাসীদের পুনরুত্থান বিষয়ে সেই সন্দেহের বক্তব্য পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেছেন, ‘তারা বলে, আমরা (মৃত্যুর পর) হাড্ডিতে পরিণত হয়ে পচে গেলেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরায় উত্থিত হবো? (সুরা বনি ইসরাইল ৪৯)
অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে কোরআনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এটা হচ্ছে তাদের (যথার্থ) শাস্তি। কেননা তারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করত, তারা আরও বলত (মৃত্যুর পর) যখন আমরা অস্থিতে পরিণত হয়ে যাব, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাব, তখনও কি আমরা নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হব? (সুরা বনি ইসরাইল ৯৮)আঙুলের ছাপের সংমিশ্রণে রয়েছে জৈব এবং অজৈব উপাদান। জৈব উপাদানে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, গ্লুকোজ, ল্যাকটেজ, ইউরিয়া, পাইরুভেট, ফ্যাটি অ্যাসিড ও স্টেরল। অন্যদিকে অজৈব উপাদানে রয়েছে ক্লোরাইড, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও আয়রন। সাধারণত ওষুধে পাওয়া তেল, প্রসাধনী, এমনকি খাদ্যের অবশিষ্টাংশ আঙুলের ছাপ তথা ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এই আঙুলের ছাপ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ব্যক্তির সাক্ষর,
অবিশ্বাসীদের ভ্রান্ত ধারণা এবং হাসি তামাশার জবাবে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি ধরে নিয়েছে, (সে মরে গেলে) আমি তার অস্থিমজ্জাগুলো আর কখনো একত্রিত করতে পারব না? নিশ্চয়ই (আমি তা পারব) আমি তো বরং তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করে দিতে পারব।’ (সুরা কিয়ামাহ ৩-৪)
পবিত্র কোরআন জ্ঞানীদের জন্য এক মহাবিস্ময়। যার অন্যতম জলন্ত প্রমাণ আঙুলের ছাপ তথা ফিঙ্গার প্রিন্ট। ইংরেজ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন বলেছেন, যিনি বিজ্ঞানকে অল্প জানবেন তিনি নাস্তিক হবেন। আর যিনি ভালোভাবে বিজ্ঞানকে জানবেন তিনি অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫০:০৯ ৪৯ বার পঠিত | আঙুলের ছাপফিঙ্গার প্রিন্ট