স্টাফ রিপোর্টার ॥ভোলাবাণী।।ভোলায় ঘরে ঘরে আবাসিক গ্যাস সংযোগ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিতসহ চার দফা দাতিবে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষো ভোলা শহরের সদর রোড কে-জাহান মার্কেটের সামনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তর শাখার আয়োজনে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে তারা ভোলার জেলা প্রশাসক বরাবর চার দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। মানববন্ধনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তরের সভাপতি মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি মোবাশি^র উল্লাহ চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তরের সেক্রেটারী মাওলানা তরিকুল ইসলাম, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের ভোলা জেলা উত্তরের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারী মুফতি আব্দুল মমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইউছুফ আদনান, ছাত্র ও যুব সম্পাদক মাওলানা ইব্রাহীম, শ্রমিক আন্দোলনের সেক্রেটারী মাওলানা গেলাম মোরশেদ, ইসলামী আন্দোলন ভোলা শহর শাখার সভাপতি মাওলানা মো. আকতার হোসাইন, যুব আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব আহমেদ শরীফ, সহসভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ভোলা জেলা উত্তরের প্রশিক্ষণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহারী, সদর থানার সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ শাহিন, দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের সভাপতি এমদাদুল্লাহ সালেহী প্রমূখ।
এ সময় বক্তারা ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিত, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের সিন্ডিকেট দূর করা এবং সংশ্লিষ্ট খাতে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ভোলার তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রে ৯টি কুপ রয়েছে। সেখান বিপুল পরিমান গ্যাস মজুদ রয়েছে। এর পরও ভোলার আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। মানুষের কাছ থেকে আবেদন নিয়েও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। ভোলায় গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট থাকার পরও ভোলার মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সংগঠন গ্যাস সংযোগের দাবিতে আন্দোলন করলেও স্বৈরচারী সরাকার ভোলার মানুষের এ দাবি মেনে নেয়নি। উল্টো সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি সাবেক জ¦ালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের মালিনাকাধীন ইনট্রাকো কম্পানির সাথে চুক্তি করে বোতলজাতের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস জেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভোলার মানুষ গ্যাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অতি দ্রুত যদি ভোলার মানুষের গ্রাণের দাবি ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেওয়া না হয় তাহলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও ইনট্রাকোর সাব অফিস ঘেরাও করা হবে। ভোলায় গ্যাস না দিয়ে গ্যাস বহনকারী আর একটি গাড়িও ভোলার বাইরে যেতে দেওয়া হবে না।
বক্তারা আরো বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস নিয়ে ভোলার মানুষের সাথে বার বার প্রতারণা করে যাচ্ছে। ভোলার মানুষ আর প্রতারিত হতে চায় না। ভোলার গ্যাস কাজে লাগিয়ে ভোলায় শিল্প কারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান বক্তারা।
ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি মোবাশি^র উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকা, ময়মনসিংহের ভালুকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবারহ করার লক্ষে চলতি বছরের গত বছরের ২১ মে ইন্ট্রাকো কম্পানির সাথে সরকারের ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গত ডিসেম্বর থেকে গ্যাস নেওয়া শুরু হয়েছে। ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে ভোলায় গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকার কথা বলে এই চুক্তি করা হচ্ছে। অথচ ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের কোন ব্যবস্থা না করে ঢাকার শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। এমনকি ভোলার আবাসিক খাত এখন পর্যন্ত এই গ্যাসের সংযোগ পায়নি। এ চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে এ চুক্তি বাতিল করতে হবে। ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাসের সংযোগ দিতে হবে। ভোলার বিসিক শিল্পনগরীতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। ভোলাসহ বরিশাল বিভাগে শিল্পাঞ্চলে ও আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা করতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সুন্দর বন গ্যাস কোম্পানীর মাধ্যমে ঘরে ঘরে গ্যাস দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে ৪০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন বসিয়েছে। ২০১৩ সালে দুই হাজার ৩৫০টি পরিবারকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। আরও ২০০ পরিবারকে সংযোগ দেয়ার জন্য ঘরের সামনে রাইজার স্থাপন করা হয়েছে এবং আরো চার হাজার পরিবারের কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ভোলা অফিস সূত্রে জানায়, ২০১৩ সালের দিকে সর্বপ্রথম ভোলায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। ভোলায় বর্তমানে দুই হাজার ৩৪০টি ঘরে আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এর পর সারা দেশে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় জ¦ালানী বিভাগ। এর পর থেকে আবাসিক খাতে আর কোনো সংযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য ভোলায় তিন হাজারেরও অধিক আবেদন জমা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি ঘরের সামনে রাইজার বসানো হয়েছে এবং ৭১২টি চাহিদাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। তবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে।
বাপেক্সের একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, ভোলার শাহবাজপুর, টবগী ও ভোলা নর্থ নামের আলাদা তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে মোট ৯ টি কূপ খনন করা হয়। এসব কূপে মোট গ্যাস মজুদের পরিমান ১ দশমিক ৭ টিসিএফ ঘনফুট। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২২মে ভোলার ইলিশা-১ নামের কূপটিকে দেশের ২৯তম গ্যাস কূপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৯৪-৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মিলে। এর পর থেকেই একের পর এক গ্যাস কূপের সন্ধান পাওয়া যায়। যা বর্তমানে ৯টি কূপে এসে দাড়িয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন চার দফা দাবি নিয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। তাদের দাবিগুলো আসলে জেলা প্রশাসকের এখতিয়ার বহির্ভুত। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:০৪ ৪৭ বার পঠিত | ইসলামী ছাত্র আন্দোলনগ্যাস সংযোগভোলা৪ দফা