
ভোলাবাণী স্পোর্টস ডেক্স।।মাথায় হাত মাহমুদউল্লাহর, চোখেমুখে অবিশ্বাস। কারণ জয়ের নায়ক হওয়া থেকে তাকে অবিশ্বাস্যভাবে পরাজিত দলের অংশ করে দিয়েছেন এইডেন মার্করাম, বাউন্ডারি লাইনে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের মোড় বদলের মুহূর্ত ওটাই। কেশব মহারাজের ফুলটসে মাহমুদউল্লাহর শটে বলটা সীমানা পেরোলেই বাংলাদেশ জিতে যেত। কিন্তু সেটা হয়নি, বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গেছে ৪ রানে।

টস জিতে এইডেন মার্করাম নিলেন ব্যাটিং, নিউ ইয়র্কের উইকেটে যে সিদ্ধান্তটা অনেকের চোখেই রীতিমতো আত্মঘাতী। যদিও তার ব্যাখ্যা ছিল ব্যবহৃত উইকেটে রান তাড়া হবে কঠিন আর নাজমুল হোসেন শান্ত চেয়েছিলেন আগে বোলিংই করতে। দুই অধিনায়কের চাওয়া-পাওয়া মিলে গেল একই বিন্দুতে। তারপর যেটা হলো, সেটা বোধহয় মার্করাম কল্পনাও করেননি। বাংলাদেশের পেস আক্রমণ এভাবে ধসিয়ে দেবে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার, সেটা কেইবা ভেবেছে! তানজিম হাসান সাকিব-তাসকিন আহমেদ; এ দুজন মিলে শুরুর চার ওভারেই ফেলেছেন ৩ উইকেট। দলীয় ২৩ রানের মাথায় ডাগআউটে ফেরত গেছেন রেজা হেনড্রিকস, কুইন্টন ডি কক আর মার্করাম নিজেই। তারপরও যে প্রোটিয়াদের ইনিংসটা ৬ উইকেটে ১১৩ রান পর্যন্ত গেল, সেটা লিটন দাসের বদান্যতায়। মাহমুদউল্লাহর বলে উইকেটের পেছনে ১৩ রানে থাকা মিলারের ক্যাচটা লিটন না ফেললে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসটা হয়তো এতটাও এগোয় না।
দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। কুইন্টন ডি কক তাকে শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলছিলেন। ম্যাচের দ্বিতীয় বলে ছয়, প্রথম স্কোরিং শট। পরের বলে চার। বড় ওভার হওয়ার লক্ষণ, পঞ্চম বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে নিলেন সিঙ্গেল। স্ট্রাইকে হেনড্রিকস, প্রথম বলেই লাইন মিস করে প্যাডে লেগে এলবিডব্লিউ। পরের ওভারে তাসকিন এসে দ্বিতীয় বলেই ছয় হজম করলেও এর বেশি মার হজম করতে হয়নি। তৃতীয় ওভারে সাকিব আবারও বল হাতে, দুটো ডটের পর একটা ওয়াইড, তার পরের বলেই ডি ককের স্টাম্প ছত্রখান। ম্যাচের মাঝে সাকিব বলেছেন, ‘আমার শিকার করা ৩ উইকেটের ভেতর ডি ককেরটাই সেরা, কারণ সে আমার বলে চার-ছয় মেরেছিল আর আমি তাকেই আউট করেছি।’ পরের ওভারে তাসকিন ভাঙেন মার্করামের স্টাম্পও। ৩.৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৩ রানে হারায় ৩ উইকেট। তিন বল পর সাকিব শূন্য রানেই বিদায় করে দেন ট্রিস্টান স্টাবসকে। নড়বড়ে শুরুর পর প্রোটিয়াদের ইনিংস সামাল দেন হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। আইপিএলে তারা যেভাবে খেলেন, ঠিক বিপরীত ছন্দে খেলছেন বিশ^কাপে। পঞ্চম উইকেটে ৭৯ বলে ৭৯ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের মেরুদ-টা গড়ে দিয়েছেন দুজন। এটা ভাঙা যেত আগেই, মাহমুদউল্লাহর প্রথম বলেই থিক আউটসাইড এজে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিলার। গ্লাভসে যাওয়ার আগে বল লাগে লিটনের ঊরুতে, তাই বেঁচে যান মিলার। শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরিয়েছেন রিশাদ হোসেন, ম্যাচে তার একমাত্র শিকার মিলার যার নামের পাশে ৩৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস একদমই বেমানান। অন্যদিকে হাফসেঞ্চুরির ঠিক আগে আগে ৪৬ রান করা ক্লাসেনকে বোল্ড করেছেন তাসকিন।

বাগে পেয়েও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে না পারার অনেকখানি দায় বাংলাদেশের টপ অর্ডারের। অল্প রানের লক্ষ্যের ম্যাচটাও কঠিন করে তোলে তাদের অপরিণামদর্শী ব্যাটিং। তানজিদ তামিম ৯ বলে ৯ করে আউট হয়েছে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে, লিটন দাস ১৩ বলে ৯ করে ক্যাচ দিয়েছেন কেশব মহারাজের প্রথম বলেই। সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং রীতিমতো কুৎসিত, বোঝাই যাচ্ছে আইনরিখ নরকিয়ার বল তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ছে না। ৪ উইকেটে ৫০ রান, এই জায়গা থেকে মাহমুদউল্লাহ ও তাওহীদ হৃদয় আরও একবার হাল ধরেন বাংলাদেশের ইনিংসের। ৪৫ বলে ৪৪ রানের জুটির পর হৃদয় আম্পায়ার্স কলে রিভিউতে এলবিডব্লিউ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জয়ের আশা কমে যায়। হৃদয়ের বিদায়ের পর আর কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেনি বাংলাদেশ। হতাশ করেছেন জাকের আলী অনিক। এরকম পরিস্থিতির জন্যই দলে তার উপস্থিতি, এমন সময়ে ৯ বলে ৮ রান, কোনো বাউন্ডারি নেই জাকেরের ব্যাটে। শেষ ওভারে কেশব মহারাজের বলে ওই ছক্কাটা হলেই ম্যাচটা জিতে যেত বাংলাদেশ, নিশ্চিত করত পরের পর্বে উত্তরণ। মার্করামের অসাধারণ ক্যাচে সেটা হয়নি বলেই বাংলাদেশ ৪ রানে পরাজিত, এখন অপেক্ষা বাকি দুটি ম্যাচের।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪০:৫৪ ৭১ বার পঠিত |