দুর্গাপূজা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তায় পুরো দেশ

প্রথম পাতা » জাতীয় » দুর্গাপূজা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তায় পুরো দেশ
শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২



 ভোলাবাণী ডেক্স রিপোর্ট।। আগামীকাল ১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। এর আগে আগামীকাল সায়াংকালে দেবীর বোধন হবে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে  কঠোর নিরাপত্তায় পুরো দেশ

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যুহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।হিন্দু পুরাণ মতে দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরত কালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায় ।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের হরি প্রেমানন্দ মহারাজ বলেন, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতী) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড় বৃষ্টি হবে এবং শস্য এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে ।

এদিকে পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে সায়াংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মণ্ডপ এলাকা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘সারাদেশে এবছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।’

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, ‘বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আগামী শনিবার থেকে শুরু হবে যা আগামী ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।’

দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

কঠোর নিরাপত্তায় পুরো দেশ

গত বছরের সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই পাঁচদিন দেশজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বিবেচনায় তালিকা করে প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া এবার প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। টহলে থাকবেন র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে যায় এক যুবক। এর জেরে ওই মণ্ডপসহ নগরীর আরও কয়েকটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালানো হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরের বিভিন্ন স্থানে। গতবারের এ সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে এবার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট মিলে সারাদেশের সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মণ্ডপে আনসার, পুলিশ থাকবে টহলে। স্বেচ্ছাসেবকরা সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশ-র‌্যাবকে ফোন করে জানাবেন। যেসব এলাকায় আগের বছর প্রতিমা ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং যেসব মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে, সেসব স্থানে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চলছে, যেন কেউ গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে না পারে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, পূজা কমিটি ও মণ্ডপের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন ও ৬০টি ক্যাম্প। সাদা পোশাকে মাঠপর্যায়ে নজরদারির পাশাপাশি তৎপরতা রয়েছে সাইবার স্পেসেও। মণ্ডপকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় থাকবে স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা-ঝুঁকি দুই ধরনের হয়। একটা হল জঙ্গি হামলার আশঙ্কা। আর অন্যটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণদের উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা করা। আমরা জঙ্গি হামলার শঙ্কা আমরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কারণ গত ১ মাস ধরে আমরা একটা বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আপনারা জানেন ৫০ জন ছেলে তাদের বাসা-বাড়ি ছেড়েছে। তারা কোথায় ট্রেনিং নিচ্ছে আমরা এখনও তা জানি না। তবে আমাদের গোয়েন্দারা এ নিয়ে কাজ করছে, আমরা আশা করি তারা ফিল্ডে কোনো অপারেশনে আসার আগেই তাদের ধরে ফেলতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৩:৩৪   ৬৩ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


কাউকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকবিদ্যুত বিহীন মনপুরা ॥ তীব্রতাপদাহে ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ
আজ পহেলা বৈশাখ
সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে , ভোটের চিন্তা থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরও সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী
১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ

আর্কাইভ