ভোলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত॥

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত॥
মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২



আদিল হোসেন তপু ॥ভোলাবাণী
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভোলার আকাশ সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বারার সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সঙ্গে হালকা বাতাস বইছে। এই হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও কৃষকেরা। খুব জরুরী কাজ ছাড়া অধিকাংশ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
নিম্ন চাপের প্রভাবে ভোলার পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা উত্তাল হয়ে উঠেছে। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চরম ঝূঁকির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার বেঁড়িবাধ। ফলে আতংকিত হয়ে পড়েছে উপকূলবাসী।

ভোলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত॥

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, ভোলা জেলায় ৩৫১কি.মি. বেড়িঁবাধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়েনি। ইতিমধ্যে ৩ সদস্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। কোন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ আছে কিনা দেখার জন্য। আমাদের পর্যাপ্ত জিও টিউব মজুদ করে রাখা হয়েছে। কোথাও বেঁড়িবাধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষনি সংস্কার করা হবে বলে জানান।
চরফ্যাশন সামরাজ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি হারুন কিবরিয়া বলেন, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় অধিকাংশ মাছধরা ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। কেউ কেউ সমুদ্রতীরের বিভিন্ন ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা এখনো ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পায়নি, তাঁদেরও সংকেত দিয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি তীরে আনার চেষ্টা চলছে।
ভোলার সাথে লক্ষীপুর ফেরী চলাচল ও লঞ্চ চলাচল এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সিগন্যাল বাড়লে সাময়িক বন্ধ থাকবে বলে জানান, ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান। তিনি জানান ভোলা থেকে লক্ষীপুর ৪টি ফেরী চলে। নদী উত্তাল হলে ফেরী চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তাই আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান।
ভোলা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা মধ্যে ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছি। সংকেত বাড়লে আমরা প্রস্তুতি সভা করবো। ইতিমধ্যে জেলা সিপিপির প্রায় ১৩ হাজার ৬শ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংকেত বাড়লে তারা বিভিন্ন উপজেলায় মানুষকে সচেতন করা, আশ্রয়কেন্দ্র নেওয়াজ জন্য কাজ করবে। এছাড়াও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভলেন্টিয়ারও প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান। ভোলা নৌবন্দরের সহকারী পরিচাল মো: শহীদুল ইসলাম জানায়, ভোলা সাথে রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল, লক্ষীপুর লঞ্চ চলাচল এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। সিগ্যানাল বাড়লে ঢাকার সাথে আলোচনা করে পরবর্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন রুটের ছোট ছোট নৌযানগুলোকে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস,এম, দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বর্তমানে ২ নম্বর সংকেত চলছে। এই সংকেত ৪ নম্বরে পৌঁছালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করা হবে। জেলার ৬৯১টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিসের পাকা ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের। এছাড়াও ৩৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসময় তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘূর্ণিঝড় অশনির ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিপিবি, রেড ক্রিসেন্ট, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সংকেত বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, ভোলা জেলায় এবছর ৬৬ হাজার ৬৫৩ হেক্টর জমিত বরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৩২৮ হেক্টর ধান কর্তন করা হয়েছে। এখন ধান কাটা বাকি রয়েছে ৪৩ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে। তিনি আরো বলেন, আমরা ইতিমেধ্যে প্রতিটি উপজেলা কৃষকদের বার্তা দিতে বলে দিয়েছি যে পরীপক্ক ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য। এর জন্য আমাদের ১২০ হারভেষ্ট মেশিন দিয়েছে। এছাড়াও এবছর মুগ ডাল আবাদ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। কাট হয়েছে ৫০%। চিনা বাদাম আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। যা এখনও সম্পূর্ণ মাঠে রয়েছে ফলন। আর মরিচ আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে যার মধ্যে অর্ধেক ফসল কাটা হয়েছে। বাকি ফসল এখনও মাঠে। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বোরো ধান বা রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে কৃষকদের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বৃষ্টিপাত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তাই কৃষকদের দ্রুত বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যেসব জমিতে পানি জমে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে পানি নিষ্কাশন করার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মিয়া জাহানপুর গ্রামের কৃষক মো: শাহিন জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৪০ শতাংশ জমিতে চিনা বাদাম, মরিচ ও মুগডাল করছি। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এখন চিন্তায় পড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আসবে বলে শুনেছি। ফসলের মাঠে বাদাম, মুগডাল, মরিচ রয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় আমরা প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বাড়লে জেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:১১:৪১   ৯০ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


৩ মাস ধরে বন্ধ বিদ্যুৎ প্লান্টতীব্র গরম আর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ভোলাবাসী
মনপুরায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলার উদ্ভোধন ॥
চরফ্যাশনে স্বামীর প্রহার থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত-৩
চরফ্যাশনে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ মানুষ
চরফ্যাসনে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৯
ইসরায়েলকে ‘সহায়তা করা’ নিয়ে মুখ খুলল সৌদি
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষেকর্মস্থলে ফিরছে মানুষ, ইলিশা ঘাটে যাত্রীদের চাপ
আইপিএলে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড
উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে জনসভা ও পথসভা করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইউনুছ
চরফ্যাসনে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় সাংবাদিক পরিবারের ওপর হামলা আহত-৪

আর্কাইভ