ইসলামে ইমামের মর্যাদা

প্রথম পাতা » ইসলাম ও ধর্ম » ইসলামে ইমামের মর্যাদা
শুক্রবার, ১১ মার্চ ২০২২



ভোলাবাণী ইসলামিক ডেক্সঃ ইমাম শব্দের অর্থ পথপ্রদর্শক, নেতা ও পরিচালক। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম ইমাম। তাঁর পরে খোলাফায়ে রাশেদিন ইমামতির গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামকে পূর্ণ এখতিয়ার দিয়ে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর জন্য বিশেষ অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইমাম হলেন (সালাতের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৭)

ইসলামে ইমামের মর্যাদা ও অবস্থান নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো—

---

ইমামতির হকদার ও অধিকার : যাঁর কোরআনের জ্ঞান বেশি, যিনি বিশুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং যিনি ইসলামী শরিয়ত সম্পর্কে অবগত—তিনিই ইমামতির বেশি হকদার। আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেন, ‘আল্লাহর কিতাব কোরআনের জ্ঞান যে সবচেয়ে বেশি রাখে এবং যে কোরআন তিলাওয়াতও সুন্দরভাবে করতে পারে সে-ই সালাতের জামাতে ইমামতি করবে। সুন্দর কিরাতের ব্যাপারে সবাই যদি সমকক্ষ হয় তাহলে তাদের মধ্যে যে হিজরতে অগ্রগামী সে ইমামতি করবে। হিজরতের ব্যাপারেও সবাই যদি সমকক্ষ হয় তাহলে তাদের মধ্যে যে বয়সে প্রবীণ সে-ই ইমামতি করবে। কোনো ব্যক্তি যেন কারো নিজের বাড়িতে (বাড়ির কর্তাকে বাদ দিয়ে) কিংবা কারো ক্ষমতাসীন এলাকায় নিজে ইমামতি না করে। আর কেউ যেন কারো বাড়িতে গিয়ে অনুমতি ছাড়া তার বিছানায় না বসে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪২০)ইমাম না আসা পর্যন্ত কাতারের জন্য দাঁড়ানো নিষিদ্ধ : ইমাম না আসা পর্যন্ত কোনো মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াবে না। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুুল (সা.) বলেছেন, ‘সালাতের ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ধীরস্থিরতার প্রতি লক্ষ্য রাখা তোমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৭)

ইমামের অনুমতিক্রমে ইকামত : সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে তাঁর অনুমতিক্রমে ইকামত দিতে হবে। আলী (রা.) বলেন, ‘মুয়াজ্জিন আজানের মালিক আর ইমাম ইকামতের মালিক। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৪১৭১; তিরমিজি, হাদিস : ২০২)

তবে ইমাম যদি কিছু না বলে ইকামতের অপেক্ষা করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ইকামত দেওয়া যাবে। কেননা চুপ থাকা ইমামের অনুমতি হিসেবে গণ্য হবে। (বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ : ৩/৮০)

ইমামের অবস্থান সবার আগে : জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম সবার আগে দাঁড়াবেন। অর্থাৎ ইমামের কাতার সবার কাতারের আগে হবে। ইমামের আগে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘মূলনীতি হলো ইমাম মুক্তাদিদের আগে থাকবেন। ’ (ফাতহুল বারি : ২/৩৯১)

হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব (প্রসিদ্ধ অভিমত) অনুযায়ী, ইমামের আগে কেউ দাঁড়ালে তার নামাজ হবে না। (ইসলামওয়েব ডটনেট, ফাতাওয়া নম্বর : ৩৩৯৯৩)

---

জ্ঞানী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়াবে : ইসলামে ইমামকে এতই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে শুধু জ্ঞানী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়াবে। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান, তারা যেন আমার নিকটবর্তী দাঁড়ায়; অতঃপর যারা (উভয় গুণে) এদের নিকটবর্তী; অতঃপর যারা এদের নিকটবর্তী। আঁকাবাঁকা (কাতারে) দাঁড়িয়ো না, তাতে তোমাদের অন্তর আলাদা হয়ে যাবে। সাবধান! (হৈচৈ করে) মসজিদকে বাজারে পরিণত কোরো না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৮)সব কাজে ইমামের অনুসরণ এবং তাঁর চেয়ে অগ্রবর্তী না হওয়া : জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সব কাজে ইমামের অনুসরণ করতে হবে এবং তাঁর চেয়ে অগ্রবর্তী হওয়া যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তখন তোমরা ‘রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ/ রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নেবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারি, হাদিস : ৭২২)

সালাতুল খাওফে মুক্তাদি পরিবর্তন হয়, ইমাম নন : যুদ্ধ বা যেকোনো ভয়ের সময় একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে নামাজ পড়ার কথা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি যখন তাদের মাঝে অবস্থান করবে, অতঃপর (ভয় ও যুদ্ধের সময়) তাদের সঙ্গে সালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের এক দল তোমার সঙ্গে (নামাজে) দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র (সতর্ক) থাকে। অতঃপর যখন তারা সিজদা সম্পন্ন করে, তখন তারা যেন তোমার পেছনে অবস্থান করে; আর অন্য এক দল যারা সালাতে শরিক হয়নি, তারা যেন তোমার সঙ্গে সালাতে শরিক হয়, (কিন্তু সর্বাবস্থায়) তারা যেন সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সশস্ত্র থাকে…। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০২)

ভয়ের নামাজের ব্যাপারে ছয় বা সাত ধরনের পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর যেকোনো পদ্ধতি অনুসারেই নামাজ আদায় করা যাবে। (আল মুগনি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা ২৬৮)

ইসলামে ইমামের মর্যাদা ।তারা মসজিদ-ভোলা সদর

এসব পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুসল্লিদের একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে এক ইমামের পেছনে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মুসল্লি পরিবর্তন হয়; কিন্তু ইমাম পরিবর্তন হয় না।মুসল্লিদের কথা ও কাজের ভার ইমামের ওপর : ইসলামে ইমামকে এতই সম্মান দেওয়া হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রে ইমামের কথা, কাজ ও আমল মুসল্লিদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়। যেমন—সুতরা স্থাপন, সিজদা সাহু, বিশেষ ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা ও কিরাত ইত্যাদি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘ইমাম ঢালস্বরূপ। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৬৬)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তারা (ইমামরা) তোমাদের ইমামতি করে। যদি তাঁরা সঠিকভাবে আদায় করেন তাহলে তার সওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি তারা ভুল করেন, তাহলে তোমাদের জন্য সওয়াব আছে, আর ভুলত্রুটির দায়িত্ব তাঁদের (ইমামের) ওপর বর্তাবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৪)

এভাবেই ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাতে ইমামকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আসনে সমাসীন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:২০:৩৪   ১০২ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ইসলাম ও ধর্ম’র আরও খবর


পবিত্র মাহে রমজানের ৮ সুন্নত
আল্লাহর যেসব হক আদায় করা মুমিনের কর্তব্য
তুরাগতীরে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত
আতিথেয়তায় আল্লাহর অনুগ্রহ মিলে যেভাবে
লিবিয়ায় মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
কাদের জন্য ওমরাহ , এর ফজিলত ও কবুল হওয়ার শর্ত
ধর্মীয় সম্প্রীতির নতুন ভুবন: আমিরাতে একই কমপ্লেক্সে মসজিদ-গির্জা-সিনাগগ
পবিত্র হজ আজ লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাতের ময়দান
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

আর্কাইভ