ভোট ও ভাতের অধিকারের নেত্রী

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভোট ও ভাতের অধিকারের নেত্রী
শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১



ভোলাবাণী ডেক্সঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা একটি অবিস্মরণীয় নাম এবং বিশ্বের ইতিহাসে নারী নেতৃত্বের অসীম সাহসী বীরকন্যা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে সম্বোধন করতে আমরা বেশকিছু বিশেষণে বিশেষায়িত করি। কেউ বলি জননেত্রী, কেউ আবার দেশরত্ন, মানবতার জননী, মুকুট মণি (Crown Jewel), “জনতার রানী” (Queen of the Masses) প্রভৃতি কিন্তু শেখ হাসিনা এমন একটি নাম যার কোনো বিশেষণের প্রয়োজন হয়না। এই নাম নিজ কর্মগুণে, স্বমহিমায়, সমুজ্জ্বল একটি নাম ‘শেখ হাসিনা’।
গণতান্ত্রিক ধারা থেকে ছিটকে পড়া, দুর্যোগ, দুর্বিপাক, ক্ষুধামন্দা, অপশাসন, অপুষ্টি এবং জঙ্গিবাদে দুষ্ট ও স্বজন তোষণে তুষ্ট বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনে তিনি উন্নীত করেছেন মধ্যম আয়ের দেশে।২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং শত বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে সুখী ও উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে বিরতিহীন এবং নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ভোট ও ভাতের অধিকারের নেত্রী

মূলত নারীর ক্ষমতায়নে এক সংগ্রামী নারীর অপরনাম শেখ হাসিনা। রাজনীতি তিনি উত্তরাধিকার সুত্রে পেলেও রাষ্ট্রক্ষমতা তিনি অর্জন করে নিয়েছেন, এ অর্জনের পথ ছিল বড়ই দুর্গম, বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ। পিতা-মাতা, ভ্রাতাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালে আমরা দেখি, এখানে উত্তরাধিকারকেন্দ্রিক রাজনীতি বিদ্যমান। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, তাঁরপুত্র রাজীব গান্ধী, শ্রী মাভো বন্দর নায়েকে, তাঁর কন্যা চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী, অং সাং সু চি ও বেনজীর ভুট্টোর দিকে তাকালে আমাদের এই ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়। শ্রীমতী ইন্ধিরা গান্ধী পিতার অবর্তমানে, রাজীব গান্ধী তাঁর মাতার শূন্যস্থান পূরণে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বন্দর নায়েকে, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী বা বেনজীর ভুট্টোদের স্বল্পকাল পরেই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। অং সাং সু চি জান্তার সঙ্গে আপস করে ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে অংশ নিয়ে নোবেল শান্তি পদককেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। ব্যতিক্রম, অনন্য শেখ হাসিনা সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে রাজনীতির জটিল পাঠ নিয়েছেন এবং এই রাজনীতিই তাঁকে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত করেছে। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা থেকে আপন মহিমায় রাজনীতিতে অধিষ্ঠিত হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রনায়কে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সাল অবধি তিনি টুঙ্গিপাড়াতেই থাকতেন। কেরাল কোপা বিদ্যালয়ে তাঁর হাতেখড়ি হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি মায়ের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় তাঁর শিক্ষাগ্রহণ শুরু হয় টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে (বর্তমানে শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নামে পরিচিত)। পরবর্তীতে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। শেখ হাসিনা মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্বৈরাচারী শাসকদের উপর প্রণীত ২০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর না লিখেই পরীক্ষা দেন, তাঁর ফলাফল ঝুঁকিতে পড়লেও তিনি নীতিতে ছিলেন অটল। স্কুলে পড়ার সমইয়েই তিনি ৬২-র শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে বকশি বাজার ‘সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক মহাবিদ্যালয়’ (এখন যার নাম বদরুন্নেসা সরকারি মহাবিদ্যালয়) কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে ভিপি নির্বাচিত হন। অনেকেই তখন তাঁর এই বিজয়কে শেখ মুজিব ঘোষিত ৬ দফার প্রারম্ভিক বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই সময় তিনি কলেজ ছাত্রলীগেরও সভানেত্রী নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে অনার্স পড়াকালে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অনার্স পড়াকালীন অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে। কিন্তু ১৯৬৯ সালে শেখ হাসিনা স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডে চলে যান। সাত মাস পর ফিরে এলেও মুক্তিযুদ্ধের কারণে শিক্ষাজীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি তাঁর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম এবং ১৯৭২ সালে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্ম। ৭১ পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা পুরোদস্তর সংসারী হয়ে পড়েন। ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানি চলে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মোশতাক-জিয়ার ষড়যন্ত্রে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসা কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্যের সাথে আমরা তাঁকেও হারাতাম। এরপর প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৬ বছরের জোরপূর্বক রাজনৈতিক নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে, সেই ক্রান্তিলগ্নে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের অনুরোধে শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জোরপূর্বক রাজনৈতিক নির্বাসন ফিরে এসে আওয়ামী লীগের সভাপতির গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন।তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরের সময়কাল ছিল সর্বোচ্চ ত্যাগ ও রাজনৈতিক পরিপক্কতার। এসময় কালে তাঁর নেতৃত্বে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন সংঘটিত হয়। ৯০ এর গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার এবং ৯৬ এর অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ভোট ও ভাতের অধিকারের গণতন্ত্র।
অদ্যাবধি তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে সুসংহত ও শক্তিশালী করেন। এর ফলেই শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে সক্ষম হন। তিনি একাধারে সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতির দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষ ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। তাঁকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ২২ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাঁকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দুই বার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাঁকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

ভোট ও ভাতের অধিকারের নেত্রী

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁকেসহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শহীদ হন, আহত হয় শতাধিক। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাঁকে লক্ষ্য করে ২ বার গুলি বর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো সনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী র‍্যালিতে বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে ১৪টি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২ জন নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন এবং ৫‘শর বেশি মানুষ আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেখ হাসিনার ডান কানের শ্রবণশক্তি। রক্তাক্ত আগস্টের হৃদয়বিদারক ক্ষত বুকে নিয়ে, স্বজন হারানো শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিলে তিলে নিজেকে তৈরি করেছেন বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির কাণ্ডারী হিসেবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতো ত্যাগ, এতো নির্যাতন আর কোনো নেতাকে সইতে হয়নি। একজন শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ জীবন কাটিয়ে হয়ে উঠেছেন আজ নির্ভরতার প্রতীক।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে একুশ বছর পর বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছিল ভোট ও ভাতের অধিকারের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সরকার প্রধান হিসেবে আজ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। চারবারের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের কারণে। জননেত্রী থেকে এখন রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহান স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের স্বাধীনতার জন্য, বাংলার দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর জীবনের ৪৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দারিদ্রের হার ২০.৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে, মাথাপিছু আয় পাশের দেশ ভারতকেও ছাপিয়ে ২২২৭ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষিত হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২%।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ আজ বাস্তবতা, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের বাস্তব সম্মত স্বপ্ন আজ দৃশ্যমান। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, ইন্টারনেট আজ হাতের মুঠোয়, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রামে পৌঁছে গেছে। শহরের নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌঁছে যাওয়ায় গ্রাম পরিণত হচ্ছে শহরে। বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতুর ৮০ ভাগ কাজ শেষ, ঢাকায় মেট্রোরেল, কক্সবাজার-রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ চলমান। ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ হবে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি, যার জন্য মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সমুদ্র বিজয়ের ফলে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিরঙ্কুশ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে, এই অঞ্চলে তেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটন কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জনের সম্ভাবনা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) সফলভাবে অর্জন করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সূচকে বাংলাদেশের এবছরের সার্বিক স্কোর ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে যখন এসডিজি গৃহীত হয়, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বিশ্বের ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নত, সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আজ তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুস্পর্শে বাস্তবতা।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে, জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই কার্যকর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী টিকা নিয়ে হাহাকারের সময়েও বাংলাদেশে প্রয়োগ হচ্ছে ফাইজার, মর্ডানা, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্মা, সিনোভ্যাকের মতো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত সকল টিকা। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে ২৩ টি প্যাকেজে ১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, অভিনন্দন ও অভিবাদন প্রিয় নেত্রী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আগলে রাখার জন্য। সফল রাষ্ট্রনায়ক মুকুট মণি শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।শতায়ু হোন প্রিয় নেত্রী।
গাজী হাসান মাহমুদ
লেখক- আইন গবেষক, কলামিস্ট
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৮:২৪   ৬৭ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


চরফ্যাশনে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ মানুষ
চরফ্যাসনে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৯
ইসরায়েলকে ‘সহায়তা করা’ নিয়ে মুখ খুলল সৌদি
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষেকর্মস্থলে ফিরছে মানুষ, ইলিশা ঘাটে যাত্রীদের চাপ
আইপিএলে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড
উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে জনসভা ও পথসভা করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইউনুছ
চরফ্যাসনে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় সাংবাদিক পরিবারের ওপর হামলা আহত-৪
আজ পহেলা বৈশাখ
ইসরায়েলে ইরানের হামলা শুরু
চর কুকরি মুকরি দ্বীপঈদের পর বেড়াতে যাবেন যেখানে

আর্কাইভ