এম,এ আশরাফ।।ভোলাবাণী।।দৌলতখান প্রতিনিধিঃ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত পহেলা জুলাই থেকে সারাদেশে লকডাউনের কঠোর বিধিবিধান ঘোষণা করেছে সরকার।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের ১-৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে দোকানপাট, শপিংমল, গণপরিবহন সহ অন্যান্য লোকসমাগম বন্ধ থাকবে এবং বের হওয়া যাবে না বাসার বাহিরে, থাকবে না কোনো মুভমেন্ট পাশ।
সপ্তাহব্যাপী এই কঠোর লকডাউনের আজকে সপ্তম দিন। এর মধ্যে ভোলার দৌলতখান উপজেলার কর্মহীন ও অসহায় হয়ে পরেছে জীবনযাত্রা।
দৌলতখান পৌরসভার (প্রতিবন্ধী) আক্কেল আলী জানান, আমার অভাবের সংসার। করোনার আগে আমি মোটামুটি একটা চাকরি করতাম কিন্তু এই করোনার জন্য আমার চাকরিটা চলে যায়। এতে আমার বৃদ্ধি বাবা-মা ও ৮ সদস্যের পরিবারকে নিয়ে না খেয়ে প্রায় থাকি। এখন আমি পেটের টানে রাস্তায় মাস্ক বিক্রি করি। আমি ৪শত টাকা বিক্রি করছি, তাতে আমি সামান্য কিছু লাভ করতে পারবো। হয়তো সেই টাকা দিয়ে দুই থেকে তিন কেজি চাউল কিনতে পারবো। ঘর থেকে বের হবার সময় ছোট মেয়ে বায়না করছে কিছু কিনে দিতাম কিন্তু টাকা না থাকার কারনে কিছু কিনে দিতে পারি না। আমাদেরকে বাঁচান না হয় না খেয়ে মরে যাব।
দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের দিনমজুরি রুহুল আমীন জানান, আমার পরিবারে আট সদস্য। তাদের যে চাহিদা তা মেটাতে পারছি না এবং করোনার জন্য আগের মতো কাজ পাচ্ছি না। এতে পরিবার নিয়ে অসহায় হয়ে পরেছি এবং সরকার থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না।
ভবানীপুর ইউনিয়নের রিকশাচালক মনির- সংসারে রয়েছেন বয়স্ক মা-বাবা, স্ত্রী আর ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। সরকার ঘোষিত প্রথম দফায় লকডাউন রিকশা নিয়ে বের হননি সে। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় ৬ জনের সংসার চালাতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন মনির। রাস্তায় লোকজন না থাকায় ভাড়া কম এবং জেল জরিমানা থাকার কারনে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। তার মতো একই অবস্থা জামাল, হাসনাইন, মাকছুদ,নাজিম প্রমূখ।
রিকশাচালক শাহাবুদ্দিন বলেন, গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হলে এখন আর ভাড়া পাচ্ছি না। আগে যেখানে ৮’শ টাকা রোজগার করতাম সেখানে এখন দু’শ টাকাও রোজগার করতে পারছি না। এতে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সংসারে রয়েছে এক বছরের ছোট একটা বাচ্চা। তার দুধ কিনতে হয় কিন্তু এই লকডাউনের জন্য সে তার বাচ্চার দুধ কিনতে পারছে না। ঘরে বসে থাকলে আমার বাচ্চাটা মারা যাবে। না খেয়ে থাকবে! বের হলে জেল জরিমানা, কি করব ভেবে পাচ্ছি না, একদিকে না খাওয়ার যন্ত্রনা অন্যদিকে পরিবারের আহাজারি। রিকশা নিয়ে বাইরে বের হলে প্রশাসন বাঁধা দিচ্ছে। স্যার অনেক কষ্টে দিন পার করছি।
তার মতো একই অবস্থা উপজেলার শ্রমজীবী মানুষের। কাজের খোঁজে বাইরে বের হলেও প্রশাসনের বাধায় কাজ করতে পারছেন না। ফলে এক প্রকার কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবারের ভরণ পোষণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের।
দৌলতখান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ এবং বেকারত্ব হয়ে পরেছে অনেক যুবক। কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। পেটের তাগিদে বাইরে বের হলেও পুলিশি, প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ছেন তারা।
এদিকে তাদের মত একই অবস্থা দোকান কর্মচারী ও মালিকদের। দোকান পাট বন্ধ থাকায় ব্যবসা বানিজ্য করতে পারছেন না তারা। এতে দোকান মালিকদের কাছ থেকে বেতন তো দূরের কথা আর্থিক সহযোগিতাও পাচ্ছেন না। ফলে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের।
দোকান মালিক কবির বলেন, এমনিতেই ব্যবসায়ের অবস্থা তেমন ভালো না। এরপর সামনে আসছে ঈদুল আযহা। আমাদের সংসারে ৯ জন সদস্য। তাদের যে ভরনপোষণ তা ঠিক মতো সামলাতে পারছি না। এতে বিপাকে পরছি। আমি না খেয়ে বিভিন্ন এনজিও কর্মীদের ঋণ শোধ করছি। এখন পযর্ন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। তার মতো মিরাজ, সোহেল, আমজাদ, মনির, ছোটন প্রমূখ। তারা সরকারের কাছে দাবী জানায়, লকডাউনে সকল দোকান খুলে দিতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে।
করোনা মহামারীর জন্য স্কুল কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৬ মাস ধরে বন্ধ। এতে বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা টিউশন করে তাদের অভাব পূরণ করে। কিন্তু এই মহামারী ও লকডাউনের জন্য তাদের টিউশন বন্ধ। এতে বিপাকে পরতে হচ্ছে তাদের এবং এর থেকে বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা ঝুঁকে যাচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন গেমস, মরন নেশায় এবং বিভিন্ন নাশকতা মূলক কাজে। এতে দিশেহারা হয়ে পরেছে তাদের পরিবার। এ অবস্থায় তারা সরকারের কাছে দাবী জানায়, অতি বিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকল কার্যক্রম অব্যহতি রাখতে।
দৌলতখান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক হাওলাদার বলেন, লকডাউন ঘোষণার পর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় প্রচার প্ররোচনা জরিমানা করা হচ্ছে এবং প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিছে। ইতিমধ্যে কয়েক জনকে অযথা ঘোরাফেরা করার কারনে জরিমানা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৯:২১ ৬১ বার পঠিত |