রোজাদারের জন্য বিশেষ পুরস্কার

প্রথম পাতা » ইসলাম ও ধর্ম » রোজাদারের জন্য বিশেষ পুরস্কার
মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১



ভোলাবাণী ডেক্সঃ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই—রোজা ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)

উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত ‘রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব’ হাদিসবিশারদরা বাক্যটির একাধিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
‘আল্লাহর জন্য’ হওয়ার ব্যাখ্যা

---

রোজাকে আল্লাহ নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য’। মুহাদ্দিসরা বলেন, রোজা ‘রিয়া’ বা প্রদর্শনপ্রিয়তামুক্ত হওয়ার কারণেই আল্লাহ তাকে নিজের দিকে সম্বোধন করেছেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, “অন্যান্য ইবাদতে ‘রিয়া’ (অন্যকে দেখানোর আগ্রহ) থাকলেও রোজার ক্ষেত্রে তা নেই। রোজা সম্পর্কে কেবল আল্লাহই জানেন। এ জন্য আল্লাহ রোজাকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।” আর ইবনুল জাওঝি (রহ.) বলেন, ‘প্রায় সব আমলই কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং কাজগুলোর খুব কমই অন্যকে দেখানোর মোহ থেকে মুক্ত থাকে। কিন্তু রোজা এর বিপরীত।’ আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) বলেন, অন্য সব ইবাদতের ওপর রোজার মর্যাদা প্রমাণের জন্য আল্লাহ বলেছেন—রোজা আমার জন্য। আবু উমামা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেমনটি বলেছিলেন, ‘তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো, যেহেতু এর কোনো বিকল্প নেই।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২২০)নিজে পুরস্কার দেওয়ার অর্থ
পৃথিবীর ভালো কাজের প্রতিদান ও মন্দ কাজের শাস্তি আল্লাহ নিজে দেন। তার পরও উল্লিখিত হাদিসে আল্লাহর ভাষ্যে বলা হয়েছে, আমি তার পুরস্কার দিই। হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, নিজে দেওয়ার দ্বারা রোজার বিশেষ মর্যাদা ও প্রতিদান প্রদান উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, আমলের সাধারণ হিসাব আল্লাহ মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আমলের প্রতিদান ১০ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। রোজা এর ব্যতিক্রম। আল্লাহ রোজাদারের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রেখেছেন। যেমনটি অন্য বর্ণনায় এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষের সব ভালো কাজের প্রতিদান ১০ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা তা আমার জন্য এবং আমিই তার পুরস্কার দিই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)

রোজা আল্লাহর প্রিয় আমল

শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘হাদিসটি নানাভাবে রোজার মর্যাদা প্রমাণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব আমলের মধ্যে রোজাকে নিজের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। আর তা করেছেন আল্লাহর কাছে রমজানের বিশেষ মর্যাদা থাকায় এবং তিনি রোজা পছন্দ করায়। কেননা রোজার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য বান্দার নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। এই আমলের রহস্য আল্লাহ ও তাঁর বান্দা ছাড়া অন্যরা জানে না। রোজাদার নির্জন স্থানে থাকে এবং সে চাইলে নিষিদ্ধ বিষয় গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু সে তা করে না। সে জানে আল্লাহ এই নির্জন অবস্থার খবরও রাখেন এবং তিনি তার জন্য বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করেছেন। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে এবং তাঁর প্রতিদান লাভের জন্য সে তা পরিহার করে। বান্দার এই নিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ সব ইবাদতের মধ্যে নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য তিনি বলেছেন, ‘বান্দা আমার জন্য তার প্রবৃত্তি ও পানাহার পরিহার করেছে।’ রোজার এই বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন পরকালেও দেখা যাবে। সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহ.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার হিসাব নেবেন এবং তার পাপের পরিবর্তে নেক আমল কর্তন করবেন। এমনকি রোজা ছাড়া আর কোনো আমল অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর আল্লাহর রোজার প্রতিদান হিসেবে তার অবশিষ্ট পাপ মার্জনা করবেন এবং রোজার মাধ্যমে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মাজালিসু শাহরি রমাদান, পৃষ্ঠা ১৩)

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫১:৩৩   ৮৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ইসলাম ও ধর্ম’র আরও খবর


নারীরা যেভাবে ইতেকাফ করবেন
পবিত্র মাহে রমজানের ৮ সুন্নত
আল্লাহর যেসব হক আদায় করা মুমিনের কর্তব্য
তুরাগতীরে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত
আতিথেয়তায় আল্লাহর অনুগ্রহ মিলে যেভাবে
লিবিয়ায় মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
কাদের জন্য ওমরাহ , এর ফজিলত ও কবুল হওয়ার শর্ত
ধর্মীয় সম্প্রীতির নতুন ভুবন: আমিরাতে একই কমপ্লেক্সে মসজিদ-গির্জা-সিনাগগ
পবিত্র হজ আজ লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাতের ময়দান

আর্কাইভ