আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও বাংলার গ্রামীন নারীদের বর্তমান অবস্থান।

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও বাংলার গ্রামীন নারীদের বর্তমান অবস্থান।
সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১



সাব্বির আলম বাবু।।ভোলাবাণী।। বিশেষ প্রতিনিধি:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু সৃস্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ এই চিরন্তন সত্য বানীটির মর্মার্থ উপলব্ধি করেই আজ উন্নত বিশ্বে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে সার্বিক উন্নয়নে নারীরাও ভূমিকা রাখছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশেও। ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’ এবার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এসডিজি লক্ষ্য পুরনে এই শতাব্দিতে এসে বাংলাদেশের গ্রামীন নারীদের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে দেখা যায়, মল্লিকা বিবির তিন ছেলে মেঘনা নদীতে মাছ ধরে। যখন সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায় তখন তাদের পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ থাকে। মল্লিকার বৃদ্ধ স্বামী আবদুল আজিজও এক সময় মাছ ধরতেন। এখন বার্ধক্যের কারণে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে সহায়তা করছেন সেতারা। তিনি হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করেন এবং এসব বিক্রি করে সংসারের নানা প্রয়োজন মেটান।

---

ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমে ঘোষণার কারণে মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাস মাছ ধরা, ক্রয়–বিক্রয় ও পরিবহন নিষেধ। এ নিষেধাজ্ঞার সময় সেতারার মতো পাঁচ শতাধিক জেলে পরিবারের গৃহবধূরা সংসারের খরচ জোগাড় করতে স্বামী অথবা সন্তানদের সহায়তা করছেন। এখন পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারা পৃথিবীতে নানা সংকটের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পেয়েছেন সাফল্য। একইভাবে ভোলায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় আর্থিক সংকট মোকাবিলায় জেলে পরিবারের নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভোলার নারীদের এ উদ্যোগ দেশের অন্য এলাকার নারীদেরও নানা সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করবে।
পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি সংসারের অভাব দূর করার লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছেন মল্লিকা বেগম। এই সাহসিকা নারীর বাড়ি ভোলার সদর উপজেলার মধ্য ভেদুরিয়া গ্রামে। অভিযানের সময় সংসার চালাতে তিনি সারা বছরই কিছু সঞ্চয় করেন। মাঝে মধ্যে হাঁস-মুরগি পালন। জমি বর্গা নিয়ে ছেলেদের কৃষি কাজে লাগান। সেখানে খোরাকির ধান ও সবজি হয়। সেতারা জানান, দুই বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁকে দুটি ছাগল দেয়। ওই ছাগল বেড়ে এখন ১৫টি হয়েছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি দুটি খাসি বিক্রি করবেন। ব্যবসায়ীরা ৩০ হাজার টাকা দাম বলছে। আরও বেশি দাম পেলে তিনি খাসিগুলো বিক্রি করে দেবেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও বাংলার গ্রামীন নারীদের বর্তমান অবস্থান।

ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের বাঁধের বাইরে বলরামসুরা ও গঙ্গাকৃতি গ্রাম। এই দুই গ্রামে শতাধিক পরিবার বাস করে। তাঁদের পেশা নদীতে মাছ ধরা। বর্তমানে এই জেলেরা বেকার। তাঁদের চাষবাষের জমি নেই। আছে মাথা গোঁজার একটু জমি। বলরামসুরা গ্রামে ছকিনা বিবির (৪২) বাস। তাঁর চার ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নাতি-নাতনি আছে। কিন্তু নিজেদের কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে বছরে এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ঘর তুলে বাস করেন। পরিবারে এখন ১০ সদস্য। স্বামী আবু তাহের ডায়াবেটিসের রোগী। ছকিনা নিজেও হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি মাসের সংসার খরচের সঙ্গে কয়েক শ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। এসব খরচ আসে নদীতে ধরা মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে। কিন্তু দুই মাস মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে আবু তাহের ও তাঁর ছেলেরা বেকার।
তাহলে এ সময় সংসার চলছে কী করে, এমন প্রশ্নে ছকিনা মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, ‘আল্লায় চালায়।’ বিষয়টি খোলাসা করতে বললে তিনি জানান, তিনি ঘরে বসে নিজেই জাল বোনেন, জেলেদের ছেঁড়া জাল ঠিক করেন, শীতলপাটি বোনেন, নদীর তীরে পরিত্যক্ত বাঁধের গায়ে সবজি আবাদ করেন। মাঝে মধ্যে কাঁথা সেলাই করেন। এসব করে যা আয় হয়, তা–ই দিয়ে স্বামীকে সংসার পরিচালনায় সহায়তা করেন। ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘বলরামসুরা ও গঙ্গাকৃতি গ্রামের অধিকাংশ জেলে মৎস্য আইন মানছেন। তাঁদের জমি না থাকার পরও জেলে পরিবারের গৃহবধূরা সুসময়ে সঞ্চয় করছেন। তাঁরা হাঁস–মুরগি ও গবাদি পশু পালন করছেন। এগুলো বিক্রি করে চলছে তাঁদের সংসার।’ সদর উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি এরশাদ আলী বলেন, বলরামসুরা ও গঙ্গাকৃতি গ্রামের জেলে পরিবারগুলো সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছে। তাঁদের পরিবারের কম বেশি আয় থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা জেলেনিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করছে। তাঁদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি করছে। কারণ, জেলে পরিবারের গৃহবধূরাই জাটকা সংরক্ষণসহ বড় ইলিশ উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান জীবন যাপনে সাংসারিক খরচ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের নারী স্বামীর পাশাপাশি নিজেরাও বিভিন্নভাবে পরিবারে আয়-রোজগারে সহায়তা করছেন। কেউ হোগলা বিছানা, পাটি বিছানা বুনছেন, কেউ কৃষি ক্ষেতে চাষ করছেন, কেউ গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগী পালন করছেন। আবার মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত নারীরা যোগ্যতা হিসাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এনজিও সহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মসংস্থান বেছে নিচ্ছেন। ভোলার কোস্ট ফাউন্ডেশন এনজিও কর্মকর্তা রাশিদা বেগম জানান, ‘এখন গ্রামীন জনপদের এমন কোন পরিবার নেই যে তাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায় না। সমাজের সকল স্তরেই এখন পুরুষের পাশাপাশি নারী প্রতিনিধিত্ব লক্ষ্যনীয়। আশার কথা এখন এসব এলাকায় ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ের প্রবনতা অনেক কমে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪২:০৮   ৬৩ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


ভোলায় মহানবী (সা.) কে কটুক্তিকারীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান
শশীভূষণ বাজারে অগ্নিকান্ডে তিন দোকান পুড়ে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
ভোলায় তিনদিন ব্যাপী সাংবাদিকদের বেসিক জার্নালিজম ট্রেনিং এর উদ্বোধন
ভোলার কৃষকরা ঝুঁকছেন ক্যাপসিকাম চাষে
স্মার্টফোনে ই-লাইসেন্স দেখিয়েও গাড়ি চালানো যাবে
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় সৌদি সুন্দরী
মনপুরায় রোগীদের সহায়তার ৩ লক্ষ টাকার চেক বিতরন ॥
ভোলা ইসলামী আন্দোলনের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল।
মনপুরায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
ভোলায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন

আর্কাইভ