স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেব-প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » জাতীয় » স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেব-প্রধানমন্ত্রী
সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১



ভোলাবাণী ডেক্সঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনকে উন্নত ও অর্থবহ করব। একটি মানুষও ঠিকানাহীন থাকবে না, প্রত্যেকের ঘরে আলো জ্বালব- এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে করোনার টিকা নিতে হবে। তবে দেশে করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা এখনও গবেষণা পর্যায়ে আছে। তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এই মহামারি থেকেও আমরা মুক্তি পাব। বাংলাদেশে টিকা সংগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকা আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। অনেক দেশ এটা করতে পারেনি। আমি আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিলাম বলে এটা সম্ভব হয়েছে।

বক্তব্যের শুরুতে মাতৃভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা অর্জন করেছি। একটি জাতির অস্তিত্বই হচ্ছে তাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। পাকিস্তানি হানাদাররা সেটির ওপরই প্রথম আঘাত হেনেছিল। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ছিলেন তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিব। তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনসহ ধারাবাহিক সংগ্রাম শুরু করেন। এজন্য তাকে বারবার জেলে যেতে হয়।

এ প্রসঙ্গে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের লেখা রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে নয়, তার বিরুদ্ধে লেখা সব রিপোর্ট। পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো নেতার বিরুদ্ধে ৪৬টি ফাইলে প্রায় ৪৬ হাজার পৃষ্ঠাব্যাপী কোনো রিপোর্ট লেখার ইতিহাস নেই। এই রিপোর্টেই মাতৃভাষার জন্য বঙ্গবন্ধু কী করেছিলেন, কীভাবে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলেছিলেন এবং এই সংগ্রাম করতে গিয়ে বারবার গ্রেপ্তার হন- ইতিহাসের এসব মহামূল্যবান তথ্য জানা যাবে। এসব রিপোর্ট পড়লেই ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস পরিষ্কার হয়ে যাবে। যারা ভাষা নিয়ে গবেষণা করছেন তাদেরও এই রিপোর্টগুলো অনেক সহায়ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের মানুষই পালন করছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা না পেলে এই মর্যাদা ও সম্মান আমরা পেতাম না। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য দেশবাসীকে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি। কিন্তু ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলন নয়। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের সার্বিক আন্দোলন। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আছে। সেই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাই প্রথমে গুচ্ছগ্রামসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের মাঝে খাসজমি বিতরণসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সেই কাজগুলোই করে যাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত তার নেতৃত্বাধীন চার মেয়াদের তার সরকারের সময়ে দেশের ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৩ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে নিজস্ব ঠিকানা দেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি বলেই এত বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। দেশের সবচেয়ে অবহেলিত কামার-কুমার-জেলে, বেদে-হিজড়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, কুষ্ঠরোগীসহ সর্বস্তরের অসহায় মানুষকে পুনর্বাসন করে যাচ্ছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা-পরবর্তী দেশে অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাঙালির জীবনে ১৫ আগস্ট না এলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হিসেবে গড়ে উঠত। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে- বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ সময় তারাই মূলত ক্ষমতায় ছিল। তারা দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন নয়, বরং নিজেদের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল। তারা দেশকে সামনে নয়, অনেক পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে মুক্ত করতেই জাতির পিতা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। নিজের জীবনের দিকে কোনোদিন তাকাননি তিনি। দেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হবে, মানুষ উন্নত জীবন পাবে- এটাই ছিল তার আজীবনের স্বপ্ন। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করাই সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ অনুসরণ করেই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

খুব শিগগিরই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাতৃভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশের প্রতিটি অর্জনেই বাঙালি জাতিকে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যায় না, যেতে পারে না। আমরা তা হতে দেব না।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। গণভবন প্রান্ত থেকে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:১৩   ৪৬ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে : প্রধানমন্ত্রী
১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ
জেলায় মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
১০৪তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
ভোলায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা
বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি পেলেন ১২০ র‌্যাব সদস্য
প্রধানমন্ত্রীর বাণী ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু
দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীনিত্যপণ্যের দাম নিয়ে গুজবে কান দেবেন না

আর্কাইভ