ভোলার চরফ্যাশনে শিশু বিয়ের কারন,প্রভাব ও প্রতিকারের উপায় বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » ভোলার চরফ্যাশনে শিশু বিয়ের কারন,প্রভাব ও প্রতিকারের উপায় বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১



স্ট্যাফ রির্পোটার।।ভোলাবাণীঃ
ভোলার চরফ্যাশনে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা তরান্বিতকরণ(এপিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু বিষয়ের কারন,প্রভাব ও প্রতিকারের উপায় বিষয়ক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চরফ্যাশন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদিন আখন।

ভোলার চরফ্যাশনে শিশু বিয়ের কারন,প্রভাব ও প্রতিকারের উপায় বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সভায় বাল্য বিয়ে নিয়ে কোস্ট ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত গবেষণার তথ্য সমূহ উপস্থাপন করেন গবেষক ইকবাল উদ্দিন। চরফ্যাশন উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এর সভাপত্বিতে কোস্ট ট্রাস্টের সহকারি পরিচালক রাশিদা বেগমের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আকলিমা বেগম লিলি, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মামুন হোসেন ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ্বাস। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কোস্ট ট্রাস্ট এপিসি প্রকল্পের প্রকল্প সম্মনয়কারী মো: মিজানুর রহমান। ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় এর সহযোগিতায় বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এর কিশোর-কিশোরীদের দক্ষতা,শিশু বিবাহ রোধে,জীবন দক্ষতা রোধে কাজ করে আসছে এই এপিসি প্রকল্পটি। এসময় কোস্ট ট্রাস্ট্রের বাল্য বিয়ে নিয়ে গবেষণায় মেয়েদের নিরাপত্তা হীনতা কেবল বাল্য বিয়ের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করাহয়।গবেষণায় জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে নারী ছিলেন ৫৭.১% এবং পুরুষ ৪২.৯%। কেন ভোলায় বাল্য বিয়ের হার বেশি এবং জীবনে এর প্রভাব জানতে কোস্ট ট্রাস্ট (২৫ অক্টোবর-৩১ ডিসেম্বর ২০২০) এই গবেষণা করে। গবেষণায় দেখা যায়,বাল্য বিয়ের প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা কে দায়ী বলে মনে করেন ৬৩.৬% উত্তরদাতা। এর সাথে নিরাপত্তা জনিত কারণও জড়িত বলে জানান ৪১.৬%। এছাড়া ছেলে-মেয়েরা যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে তাই পারিবারিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া হয় বলে মত দেন৪১%। ভালো পাত্র পেলেবিয়ে দেয়া হয় বলে মনে করেন ৪৭.৮%। অসচেতনতার কথা বলেছেন ৪৪.৯% এবং দারিদ্রতা এর কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ৫০.৯% উত্তরদাতা। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩৭.৮% উত্তরদাতরই ধারণা নেই ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু আর ১৫-১৭ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হওয়াকে অনেকই শিশু বিয়ে বলে মানতে নারাজ। তাছাড়া শিশু বিয়ে দিলেও পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন প্রকাশ্যে সেটি স্বীকার করতে চান না। বাল্য বিয়ে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব আছে বলেছেন ২১.৭%, নাই বলেছেন ৩৯.৫% এবং জানি না বলেছেন ৩৮.৭% উত্তরদাতা।দরিদ্র পরিবারগুলোতে বাল্য বিয়ের হার বেশি বলে মত দিয়েছেন ৭৬.৪% উত্তরদাতা। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেশি বলেছেন ২৯.১% এবং ধনী পরিবারে বেশি বলেছেন২.৩% উত্তরদাতা। আর শিক্ষার ধাপ বিবেচনায় দেখা গেছে ৫ম শ্রেণি শেষ করার পর মেয়ে শিশুদের বিয়ে হয়ে যায় বলেছেন ১৯.১% উত্তরদাতা। ৮ম শ্রেণি শেষ করার পর হয় বলেছেন ৬৭.৩%।মাধ্যমিক শেষ করার পর হয় বলেছেন ১০% এবং উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর হয় বলেছেন ১.৩%। বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই যৌতুক দেয়/নেয় বলে মত দিয়েছেন ৬০% উত্তরদাতা। এলাকায় বাল্য বিয়ে হলে তা প্রতিরোধ করেন বলে জানিয়েছেন ২৭.৯% উত্তরদাতা, করেন না বলেছেন ৪১%,কখনও কখনও করেন বলেছেন ২৪.৩% এবং অন্য করেন যেমন পুলিশ, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটির লোকজন ইত্যাদি বলেছেন ৬.৮%। এছাড়া স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানরা শিশুবিয়ে প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখেন বলেছেন ২৫.৯%, মাঝে মাঝে ভূমিকা রাখেন বলেছেন ৪০.৮%,কোন ভূমিকা রাখেন না বলেছেন ১৩.৪% এবং তারা ভোটের হিসেব করেন বলেছেন ৮.৯% উত্তরদাতা। এছাড়া শিশুবিয়ে বন্ধে সরকারি হট লাইন নাম্বারের কথাও জানেন না বলেছেন ৫৪.৫% উত্তরদাতা। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আরো কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সেগুলো হলো : ইউনিয়ন পরিষদকে বাল্য বিয়ে বন্ধে আরো সμিয় করা, গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন করা । মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। করোনাকালীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যালয় গুলো সীমিত আকারে খুলে দেয়া। মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে মাধ্যমিক স্থরে ৮০% মেয়েকে উপবৃত্তির আওতায় আনা। উপবৃত্তির অর্থ খুব সামান্য, এটি বৃদ্ধি করা। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ সৃষ্টি করা। ভূয়া জন্ম নিবন্ধন রোধ করা। এলাকায় বাল্য বিয়ে বন্ধে কাজী, ইমাম, পুরোহিতদের সাথে প্রশাসনের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলারা কথা জানান হয়। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া, মোঃ সিরাজ উদ্দীন, মোঃ জামাল উদ্দীন, আশরাফুল আলম, আব্দুস সালাম হাওলাদার, মোঃ হোসেন মিয়া। আরো ছিলেন খালেদা বেগম, মোঃ মনির হোসেন, জামাল উদ্দীন, মিনহাজুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, সিপু ফরাজি, সামছুন্নাহার সিগ্ধা প্রমুখ। এসময় বক্তরা বলেন, কাজী-ইমামদের সচেতনতাই বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে পারে। কাজীর নমিনিদের মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা বন্ধ করতে আহবান জানান।

বাল্য বিয়ের শিকার নারীরা ঠিক মতো সংসার সামলাতে পারে না। তাই অনেক সময় তাদের প্রতি নির্যাতন হয়। বাল্য বিয়ে বন্ধ হলে নারীর প্রতি নির্যাতনের হার অনেক কমে যাবে। বাল্য বিয়ে বন্ধে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করতে হবে এবং স্কুল গুলোতে মেয়েদের নিয়ে সচেতনতা সভা করতে হবে। রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন বাল ̈বিয়ের শিকার নারীদের উপর নির্যাতনের কারণে অধিকাংশ মামলা হয়। বাল্য বিয়ে বন্ধ হলে এ মামলার হার কমে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৮:৫৮   ৬৫ বার পঠিত  |




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চরফ্যাশন’র আরও খবর


চরফ্যাশনে স্বামীর প্রহার থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত-৩
চরফ্যাশনে ঈদের আগে পাকা ঘর পেলেন ভূমিহীন ৩৭০ পরিবার
চরফ্যাশনে ২০ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
নানা বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে দুই খালাতো ভাইয়ের মৃত্যু
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চরফ্যাশনে যাকাত ফান্ডের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চরফ্যাশনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত
চরফ্যাশনে তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি
অভয়াশ্রমে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় দুর্দশায় জেলেরা
চরফ্যাশনে বাবার লাশ দাফনে সন্তানদের আপত্তি নির্ধারিত সময়ে জানাজা হয়নি, সমঝোতার চেষ্টা
চরফ্যাশনে হাঙ্গর মাছের শুটকিসহ গ্রেফতার-২

আর্কাইভ